প্রতীকী ছবি।
রাত সাড়ে দশটা। শহরের ব্যস্ত রাস্তা দিয়ে বেপরোয়া গতিতে ছুটছে একের পর এক গাড়ি। কলকাতা পুলিশের তরফে লাগানো স্পিড ডিসপ্লে বোর্ডে ভেসে উঠছে পাশ দিয়ে যাওয়া প্রতিটি গাড়ির গতি। কোনওটির গতি ঘণ্টায় ৭৫ কিলোমিটার, কোনওটির ৯০, কোনওটির হয়তো ১০০ বা তারও বেশি। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় এই দৃশ্য নতুন নয়। এমনই চলছে প্রতিদিন।
গাড়ির বেপরোয়া গতি নিয়ন্ত্রণে আনতে স্পিড ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কয়েক বছর আগে। সেই সঙ্গে শহরের বেশ কয়েকটি রাস্তা এবং উড়ালপুলে গাড়ির সর্বোচ্চ গতিবেগও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। সেই নিয়ম ভাঙলে আছে জরিমানার ব্যবস্থাও। কিন্তু কলকাতা পুলিশের তরফে দেওয়া সেই ‘গতি-বিধি’র তোয়াক্কা না করেই দেদার গাড়ি ছোটাচ্ছেন অধিকাংশ চালক।
মঙ্গলবার ভোরে চিংড়িঘাটা সংলগ্ন ক্যাপ্টেন ভেড়ির কাছে বেপরোয়া গতির জেরেই একটি গাড়ি উল্টে গিয়েছিল। সেই দুর্ঘটনার খবর সামনে আসার পরেই নতুন করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে।
কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ই এম বাইপাসে মোটরবাইকের ক্ষেত্রে গতির ঊর্ধ্বসীমা ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার। গাড়ির ক্ষেত্রে তা ৬০ এবং মালবাহী গাড়ির ক্ষেত্রে ৪০।
আইন বলছে, শহরের রাস্তায় নির্দিষ্ট গতির চেয়ে বেশি জোরে গাড়ি ছোটালে তিন মাসের জন্য চালকের লাইসেন্স বাতিল করতে পারে পুলিশ। আছে নির্দিষ্ট অঙ্কের জরিমানার ব্যবস্থাও। পাশাপাশি, যাঁরা বার বার বিধি ভাঙবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু অভিযোগ, পুলিশের একাংশের গা-ছাড়া মনোভাবের কারণেই শহরে বেপরোয়া গাড়িচালকদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
শুধু তা-ই নয়, গতির বিধি ভাঙার অপরাধে নির্দিষ্ট জরিমানার অঙ্ক-সহ মেসেজ গাড়ির মালিকের মোবাইলে পাঠানোর স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা থাকলেও সেই জরিমানা আদায়ের ক্ষেত্রে বিশেষ কোনও উদ্যোগ চোখে পড়ে না বলে অভিযোগ। জরিমানা দেওয়ার বিষয়টি বরং অনেকাংশেই ছেড়ে দেওয়া হয় আইনভঙ্গকারীর ‘মর্জি’র উপরে।
স্পিড ক্যামেরার সাহায্যে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে নিয়মভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রযুক্তি থাকলেও মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন রাস্তায় তা অকেজো হয়ে পড়ে থাকে। কলকাতা পুলিশের তরফে কখনও সখনও বেপরোয়া গাড়ি আটকাতে ক্যামেরা বসিয়ে ‘ম্যানুয়াল’ পদ্ধতিতেও বিভিন্ন রাস্তায় নজরদারি চালানো হয় বটে, তবে তা সর্বত্র নয়।
শহরবাসীর অভিযোগ, দিনের বেলা বেপরোয়া গাড়ি রোধে তবুও কিছুটা পুলিশি নজরদারি চোখে পড়ে। তবে রাত বাড়লে সেটুকুও আর দেখা যায় না। তখন নজরদারির অভাবে বিভিন্ন রাস্তায় লাগামছাড়া গতিতে ছোটে বাইক ও গাড়ি। প্রতি রাতেই বাইপাস, রেড রোড, জওহরলাল নেহরু রোড-সহ শহরের বহু রাস্তায় বেপরোয়া গতিতে যান চলাচল করতে দেখা যায়। রাত যত গভীর হয়, গতির মাত্রাও ততই বাড়তে থাকে। ফলে দুর্ঘটনাও ঘটতে থাকে মাঝেমধ্যে। ঘটে প্রাণহানির ঘটনাও।
ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, শহরের কোনও রাস্তায় নির্ধারিত সর্বোচ্চ গতির চেয়ে জোরে গাড়ি চালালে প্রথমেই ৩০০ টাকা জরিমানা করতে পারে পুলিশ। কেউ যদি একাধিক বার এই গতির বিধি ভাঙেন, তা হলে জরিমানার অঙ্ক বাড়তে পারে। সেই সঙ্গে তিন মাসের জন্য বাতিল হতে পারে চালকের লাইসেন্স। কিন্তু অভিযোগ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুলিশি নজরদারির অভাবে বেপরোয়া চালক আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছেন।
বাইপাস সংলগ্ন মেট্রোপলিটনের বাসিন্দা অভিজিৎ নস্কর বললেন, ‘‘দিনের বেলা তবু কিছুটা পুলিশি নজরদারি চোখে পড়ে। কিন্তু রাত বাড়লেই তা কমে যায়। তখন অধিকাংশ গাড়িই বেপরোয়া ভাবে চলাচল করে। বাইপাস দিয়ে চালানোর সময়ে চালকদের অনেকেই ইচ্ছেমতো গতি বাড়িয়ে দেন। তাঁরা আইনের কোনও তোয়াক্কা করেন না।’’
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্র্যাফিক) সন্তোষ পাণ্ডে অবশ্য নজরদারিতে কোনও রকম গাফিলতির অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘রাতের দিকেও বেপরোয়া গাড়ি আটকাতে শহর জুড়ে পুলিশি নজরদারি চালানো হয় সমান ভাবেই।’’