২০২১ সালের আগে যে সব গাড়ি তৈরি হয়েছে, আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে তাতে ভেহিক্ল লোকেশন ট্র্যাকিং ডিভাইস বসানো বাধ্যতামূলক। প্রতীকী ছবি।
রাজ্যে বাণিজ্যিক গাড়িতে নজরদারি চালানোর জন্য ভেহিক্ল লোকেশন ট্র্যাকিং ডিভাইস বাধ্যতামূলক করার কথা আগেই জানিয়েছিল পরিবহণ দফতর। আজ, সোমবার আনুষ্ঠানিক ভাবে ওই ব্যবস্থার উদ্বোধন করার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কিন্তু, ওই ব্যবস্থা চালু হয়ে গেলেও বিপুল খরচ করে জি পি এস নির্ভর ওই যন্ত্র কেনা এবং অল্প সময়ের মধ্যে তা বসিয়ে চালু করা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বেসরকারি বাস, মিনিবাস, অ্যাপ-ক্যাব এবং ট্যাক্সি সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের নির্দেশে যাত্রী নিরাপত্তার স্বার্থে ওই যন্ত্র বসানো নিয়ে আপত্তি না থাকলেও বেশির ভাগ পরিবহণ সংগঠনই আপত্তি তুলেছে যন্ত্রের বিপুল দাম নিয়ে এবং সরকার অনুমোদিত নির্দিষ্ট সংখ্যক সংস্থার থেকেই তা কেনার বাধ্যবাধকতা নিয়ে। সিটি সাবার্বান বাস সার্ভিসের সাধারণ সম্পাদক টিটু সাহা বলেন, ‘‘আর্থিক সঙ্কটে ধুঁকছে বাসের মতো গণপরিবহণ। সেখানে দশ হাজার টাকা খরচ করে রাতারাতি ওই যন্ত্র বসানোর চাপ বাড়াবাড়ি মনে হচ্ছে আমাদের। যন্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণেরও খরচ রয়েছে। উৎপাদনের ক্ষেত্রে আরও সংস্থা এগিয়ে এলে ওই যন্ত্রের দাম কমতে পারে। পুরনো যে সব গাড়িতে ওই ব্যবস্থা নেই, তাদের জন্য ভর্তুকি অথবা বাড়তি সময় দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।’’ অল বেঙ্গল বাস মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নির্মাণ সংস্থাগুলি আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করছে না। যন্ত্র পাওয়ার জন্য তাদের পিছনে দৌড়তে হচ্ছে। সংস্থাগুলির এমন আধিপত্য দৃষ্টিকটু।’’
‘ওয়েস্ট বেঙ্গল অনলাইন ক্যাব অপারেটর্স গিল্ড’-এর সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই যন্ত্রের দাম তিন-চার হাজার টাকার মধ্যে হলে খুব সুবিধা হত। সাধারণ অ্যাপ-ক্যাব চালকদের গাড়ির স্বাস্থ্য সংক্রান্ত শংসাপত্র নিতে গিয়ে অনেক টাকা খরচ হয়। তার মধ্যে ওই যন্ত্রের খরচ আর্থিক চাপ অনেকটা বাড়িয়ে দেবে।’’ এ আই টি ইউ সি-র অ্যাপ-ক্যাব এবং ট্যাক্সি সংগঠনের নেতা নওলকিশোর শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘যাত্রী নিরাপত্তার দিকটি দেখার পাশাপাশি সাধারণ চালকদের আর্থিক দুর্দশার দিক দেখে সরকারের পদক্ষেপ করা উচিত।’’
পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, ২০২১ সালের আগে যে সব গাড়ি তৈরি হয়েছে, আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে তাতে ওই যন্ত্র বসানো বাধ্যতামূলক। বেসরকারি বাস, মিনিবাস, ট্যাক্সি, অ্যাপ-ক্যাব ছাড়াও ভারী ট্রাকে ওই যন্ত্র বসানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ২০২১-এর পরে তৈরি গাড়িতে ওই যন্ত্র ইতিমধ্যেই রয়েছে। সেগুলি কার্যকর করতে হবে। যে সব গাড়ির স্বাস্থ্য সংক্রান্ত শংসাপত্র আগেই নেওয়া হয়ে গিয়েছে, তাদেরও ওই যন্ত্র বসাতে হবে।
যন্ত্রটি না থাকলে শংসাপত্র না মেলা ছাড়াও প্রতিদিন বিলম্বের জন্য ৫০ টাকা করে জরিমানা গুনতে হবে। ফলে, ওই নির্দেশ নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে পরিবহণ সংগঠনগুলির মধ্যে। সাধারণ ভাবে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত শংসাপত্র পাওয়ার পরীক্ষা-নিরীক্ষা মিটতেই এক-একটি গাড়ির ক্ষেত্রে কয়েক ঘণ্টা লেগে যায়। সেখানে সারা রাজ্যের কয়েক লক্ষ গাড়িতে ওই যন্ত্র বসানো, তার কার্যকারিতা পরীক্ষা এবং সব শেষে শংসাপত্র নেওয়ার কাজ আগামী মার্চের মধ্যে কী ভাবে সম্পূর্ণ হবে, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।
নির্দিষ্ট ১০টি সংস্থার কাছ থেকে ওই যন্ত্র কেনার নির্দেশ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সম্প্রতি টুইট করেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। পরিবহণ দফতর অবশ্য ওই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। প্রাথমিক ভাবে যে ১০টি সংস্থাকে ভেহিক্ল লোকেশন ট্র্যাকিং ডিভাইস বসানোর জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে, তার বাইরে আরও অনেক সংস্থা দ্রুত সুযোগ পাবে বলে জানাচ্ছেন দফতরের কর্তারা। সংস্থা নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে চলমান বলছেন তাঁরা। গুণমানের নির্দিষ্ট মাপকাঠি পেরিয়েই সংস্থাগুলি সুযোগ পাচ্ছে বলে দাবি কর্তাদের।