ফাঁকা: দাম আকাশছোঁয়া, তাই রমজান মাসেও ফলের দোকানে নেই ক্রেতা। রবিবার, মেছুয়া ফলপট্টিতে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
রমজান শুরু হতেই চড়চড়িয়ে বাড়ছে ফলের দাম। গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বার ফলের দাম অনেকটাই বেশি। ফলে আতান্তরে সাধারণ মানুষ।
গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে রমজান মাস। সারা দিন ধরে উপবাস সেরে সন্ধ্যায় ফল খেয়েই উপবাস ভঙ্গ করেন মুসলিমরা। অথচ ফলের দাম যে ভাবে ঊর্ধ্বমুখী, তাতে মধ্যবিত্তের পক্ষে ফলের দিকে হাত বাড়ানোটাই মুশকিলের হয়ে উঠেছে। বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী, এক ডজন কলার দাম দাঁড়িয়েছে ৭০ টাকা। দিন সাতেক আগে কেজি প্রতি আপেলের দাম ছিল ১০০-১৫০ টাকা, যা এখন বেড়ে হয়েছে ২০০-২৫০ টাকা। কেজি প্রতি ৪০-৫০ টাকা দরের শসা এখন বিকোচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়। মুসাম্বি লেবুর এক একটির দাম পৌঁছেছে ১৫-২০ টাকায়, একটি পাতিলেবুর দাম ৫-৬ টাকা। অন্যান্য ফলের দামের অবস্থাও তথৈবচ। হাওড়ার বাসিন্দা, পেশায় শিক্ষক এস এম শামসুদ্দিনের অভিযোগ, ‘‘রমজান শুরু হতেই প্রতি বছর ফল, আনাজের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। মুখ্যমন্ত্রী আনাজের দাম বাড়লে প্রায়ই বাজার পরিদর্শন করেন। রমজান মাসে ফলের দাম নিয়ন্ত্রণে মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’’
অভিযোগ, গত বছর রমজান শুরু হতেই সমস্ত ফলের দাম আচমকা বেড়ে গিয়েছিল। সে সময়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে টাস্ক ফোর্সের সদস্যদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছিলেন। কিন্তু এ বার মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে সরকার তথা টাস্ক ফোর্সের ভূমিকা নিষ্ক্রিয় বলে অভিযোগ। যদিও টাস্ক ফোর্সের সদস্য তথা রাজ্যের ‘ফোরাম অব ট্রেডার্স অর্গানাইজেশন’-এর সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ কোলের দাবি, ‘‘চলতি বছরে রমজান মাস ও নবরাত্রি একসঙ্গে পড়ায় ফলের দাম তুলনায় বেশি বেড়েছে। দিন দশেক পরে ফলের দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে।’’ টাস্ক ফোর্সের আর এক সদস্য কমল দে বলেন, ‘‘টাস্ক ফোর্স চুপচাপ বসে নেই। এ বার দেশে বৃষ্টি কম। তাই ফলের উৎপাদনও কম। রমজান মাসে ফলের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম বেড়েছে।’’
মেছুয়ার ফল ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তেলের দাম। তাই ফলভর্তি গাড়ি ভিন্ন রাজ্য থেকে আনতেও খরচ বাড়ছে। তাঁরা জানাচ্ছেন, আগে নাসিক থেকে এক লরি আঙুরআনতে যেখানে খরচ হত প্রায় ৮০ হাজার টাকা, সেটাই এখন তেলের দামবৃদ্ধির কারণে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা! তাই জ্বালানির দাম অত্যধিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণেও ভিন্ রাজ্য থেকে ফল আনার সাহস পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীদের অনেকেই। তবে রমজানের সময়ে চাহিদার তুলনায় উৎপাদনকম থাকায় লাফিয়ে লাফিয়ে ফলের দাম বাড়তে থাকে বলেও জানাচ্ছেন ফল ব্যবসায়ীরা।