বড়বাজার-সহ শহরের একাধিক জায়গায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা উদ্ধার করেছিল লালবাজার। প্রতীকী ছবি।
কলকাতা শহরে কি ক্রমেই ছড়াচ্ছে হাওয়ালার জাল? ফের কি সক্রিয় হচ্ছে অবৈধ লেনদেন-চক্র? গত কয়েক দিনে শহরের একাধিক জায়গা থেকে পর পর নগদ উদ্ধারের ঘটনায় এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে পুলিশের অন্দরে। পুলিশকর্তারা নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে না চাইলেও, এই সমস্ত ঘটনায় তাঁদের চিন্তা যে বেড়েছে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি বুধবার বালিগঞ্জে হানা দিয়ে প্রচুর পরিমাণ নগদ টাকা উদ্ধারের পরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গড়িয়াহাট থানা এলাকায় অভিযান চালায় কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। সেখান থেকে নগদ এক কোটি টাকা উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় দু’জনকে। কোথা থেকে এত টাকা পেলেন, এই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি ধৃতেরা। গড়িয়াহাটের ঘটনার পরে ২৪ ঘণ্টা না কাটতেই শুক্রবার ফের বড়বাজার এলাকা থেকে উদ্ধার হয় নগদ টাকা। বড়বাজারের বাবুলাল লেনে অভিযান চালায় কলকাতা পুলিশের এসটিএফ এবং গুন্ডা দমন শাখা। উদ্ধার হয় নগদ ৩৫ লক্ষ টাকা। মাসখানেক আগে এই বড়বাজার এলাকার স্ট্র্যান্ড রোড থেকেই ৪৪ লক্ষ টাকা নগদে উদ্ধার করেছিল লালবাজার। দু’টি ব্যাগে ভরে সেই টাকা নিয়ে যাওয়ার সময়ে পুলিশের নজরে পড়ে। গ্রেফতার করা হয় তিন জনকে। ওই ঘটনার সপ্তাহখানেক আগে বড়বাজার-সহ শহরের একাধিক জায়গায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা উদ্ধার করেছিল লালবাজার। প্রতিটি ঘটনাতেই টাকার উৎস এবং গন্তব্য সম্পর্কে একাধিক প্রশ্ন উঠেছিল। যার উত্তর দিতে পারেননি ধৃতেরা।
সম্প্রতি ইডি-র পাশাপাশি কলকাতা পুলিশও বিপুল পরিমাণ নগদ উদ্ধার করায় গোটা বিষয়টি শহরের সঙ্গে হাওয়ালা কারবারিদের যোগাযোগের দিকেই ইঙ্গিত করছে বলে মনে করছে বিভিন্ন মহল। প্রাক্তন পুলিশকর্তা পঙ্কজ দত্ত বলেন, ‘‘গত এক-দেড় বছরে বাংলায় এই প্রবণতা বেড়েছে। এটা ভাল নয়। এর সঙ্গে দুর্নীতির যোগ থাকতে পারে। তবে, এর পিছনে হাওয়ালা বা অন্য কোনও অবৈধ চক্র আছে কি না, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তা বলা যাবে না।’’
বেআইনি কালো টাকা ভিন্ রাজ্যের পাশাপাশি ভিন্ দেশে পাঠাতে অপরাধীরা তাদের ‘বিশ্বস্ত’ হাওয়ালা ব্যবস্থাকেই ব্যবহার করে। এমনকি, বিভিন্ন সময়ে নির্বাচনের আগে হাওয়ালার মাধ্যমে নগদ লেনদেনের একাধিক অভিযোগও উঠেছে। হাওয়ালার মাধ্যমে হাত ঘুরিয়ে টাকা পাঠালে পর্দার আড়ালেই থেকে যায় মূল অপরাধীর নাম। ব্যাঙ্কের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে গেলে নজরে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেই কারণেই হাওয়ালার রাস্তা বেছে নেয় অপরাধীরা। লালবাজারের এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘কেউ সৎ উদ্দেশ্যে টাকা পাঠাতে হাওয়ালা ব্যবহার করেন না। সেই লেনদেন সাধারণত ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার মাধ্যমেই ঘটে। অসৎ উদ্দেশ্য আছে বলেই এ ভাবে অবৈধ লেনদেন চালানো হচ্ছে। গোটাটাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পিছনে কোনও চক্র সক্রিয় আছে কি না, তা দেখা হচ্ছে।’’