পুরসভা পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে এ রকমই অবস্থা শৌচালয়গুলির। —ফাইল চিত্র।
শিক্ষা বিভাগের শৌচালয়-দুর্নীতি কাণ্ডে প্রায় দেড় মাস আগে তিন জন আধিকারিককে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছিলেন কলকাতা পুরসভা কর্তৃপক্ষ। তাঁদের শোকজ় করা হলেও কারও বিরুদ্ধে এখনও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আর তাতেই তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। জানা গিয়েছে, শিক্ষকদের একাংশও বিষয়টি নিয়ে সরব। শৌচাগার নির্মাণের ক্ষেত্রে অনিয়মের বিরুদ্ধে সেই সময়ে রুখে দাঁড়িয়েছিল বাম প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠন ‘কলিকাতা পৌর শিক্ষক ও কর্মী সঙ্ঘ’। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অশোককুমার চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘তিন জনকে শোকজ় করা হলেও এখনও কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হল না। শিক্ষা বিভাগে রীতিমতো পুকুর চুরি হয়েছে। দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবিতে শীঘ্রই আমরা ফের মেয়রকে স্মারকলিপি দেব।’’
পুরসভার শিক্ষা বিভাগ সূত্রের খবর, ২০১৭ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে পুরসভা পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির ৬৩টি শৌচাগারের প্রতিটির জন্য ৬০ হাজার টাকা করে খরচ দেখানো হয়েছে। অভিযোগ, অধিকাংশ বিদ্যালয়ের শৌচাগার সংস্কার করা না হলেও সেই বাবদ খরচ দেখানো হয়েছিল। যে সমস্ত বিদ্যালয়ে কাজ হয়েছে, নিয়ম মতো সেখানে নোটিস টাঙানোর কথা। কিন্তু ২০১৭-’২০ সালের মধ্যে শৌচালয়ের সংস্কার চলাকালীন কোনও নোটিসই কোনও বিদ্যালয়ে দেওয়া হয়নি। শুধু তা-ই নয়, শৌচালয়ের সংস্কার শুরুর আগে স্কুল উন্নয়ন কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ার কথা। কিন্তু কমিটিকে অন্ধকারে রেখেই কাজ করা হয়েছিল। কাজ চলাকালীন বা কাজের শেষে কোনও ইঞ্জিনিয়ার বিদ্যালয়ে পরিদর্শনেও আসেননি।
পুরসভার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে শৌচাগার সংস্কারে অনিয়মের পাশাপাশি দরপত্র ছাড়া পড়ুয়াদের বর্ষাতি ও স্কুলপোশাক কেনার বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে আগেই। শিক্ষা বিভাগের দুর্নীতির বিষয়টি গত মাসে পুরসভার মাসিক অধিবেশনেও উত্থাপিত হয়েছিল। বিজেপির পুরপ্রতিনিধি সজল ঘোষের অভিযোগ, ‘‘পুরসভার শিক্ষা বিভাগে এত বড় দুর্নীতি হলেও কারও বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শুধু শোকজ় করে দায়সারা মনোভাব দেখাচ্ছেন পুর কর্তৃপক্ষ। আসলে পুরসভা জানে, এত বড় দুর্নীতিতে একাধিক ব্যক্তি জড়িত। তাই কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে আরও অনেক নাম উঠে আসবে। তাই স্রেফ শোকজ় করেই তদন্ত গুটিয়ে ফেলতে চাইছে পুর কর্তৃপক্ষ।’’ বাম পুরপ্রতিনিধি মধুছন্দা দেবের অভিযোগ, ‘‘শিক্ষা বিভাগে শৌচালয় সংস্কার থেকে শুরু করে পড়ুয়াদের বর্ষাতি ও স্কুলপোশাক কেনার ক্ষেত্রে যে সমস্ত অনিয়ম হয়েছে, তাতে কেবল শোকজ় করলেই হবে না। দোষীদের কঠোর শাস্তিও দিতে হবে।’’
পুর শিক্ষা বিভাগের তদানীন্তন তিন আধিকারিককে শোকজ় করা হলেও এখনও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন? এ বিষয়ে জানতে চেয়ে কলকাতা পুরসভার কমিশনার বিনোদ কুমারকে ফোন ও মেসেজ করা হলেও উত্তর মেলেনি।