৬-১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বেআইনিপার্কিংয়ের জন্য শহরে মোট ১৯৭৩টি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। ফাইল ছবি।
শহরের পথে বেআইনি পার্কিংরুখতে চালু হয়েছে নগদহীন লেনদেন ব্যবস্থা। তবু এর পরেও বেআইনি পার্কিংয়ের জেরে কখনও পড়ুয়া-ভর্তি গাড়ি আটকে যাচ্ছে স্কুলের অদূরে, কোথাও দিনের ব্যস্ত সময়ে থমকে যাচ্ছে গাড়ি। শহরবাসীর একাংশ তাই প্রশ্ন তুলছেন, বেআইনি পার্কিংয়ের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মিলবে কবে?
শহরের রাস্তায় বেআইনি পার্কিংয়ের রমরমা বন্ধ করতে পরীক্ষামূলক ভাবে নগদহীন লেনদেন ব্যবস্থা চালু করার পরে কেটে গিয়েছে বেশ কয়েকটি সপ্তাহ। নয়াউদ্যোগে বেআইনি পার্কিংয়ের সঙ্গে পার্কিং-ফি বাবদ বেশি টাকাআদায়ের আশঙ্কাও কমবে বলে জানিয়েছিলেন কলকাতার পুরকর্তারা। এমনকি, নয়া ব্যবস্থায় শহরে পার্কিং জট কাটবে বলেও দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু তার পরেও যে শহরের পথে বেআইনি পার্কিংয়ের প্রবণতা রোখা যায়নি, তার প্রমাণ মিলছে গত এক সপ্তাহের লালবাজারের কেস সংখ্যার হিসাবেই।
লালবাজারের দেওয়া পরিসংখ্যান বলছে, গত এক সপ্তাহে, অর্থাৎ ৬-১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বেআইনিপার্কিংয়ের জন্য শহরে মোট ১৯৭৩টি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে বিপজ্জনক ভাবে গাড়ি পার্কিং করার জন্য ৪৭৩ জনের বিরুদ্ধে মামলারুজু করেছে কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ। সব মিলিয়ে বেআইনি পার্কিংয়ের মামলা রুজুর সংখ্যা টপকে গিয়েছে শহর জুড়ে গোটা সপ্তাহ ধরে ট্র্যাফিক সিগন্যাল না মানার মামলার সংখ্যাকেও!
লালবাজারের দেওয়া তথ্যে আরও দেখা যাচ্ছে, বেআইনি পার্কিংয়ের জন্য সব থেকে বেশি মামলা রুজু হয়েছে হাওড়া সেতু এবং উল্টোডাঙা ট্র্যাফিক গার্ডে। গত এক সপ্তাহে হাওড়া সেতু ট্র্যাফিক গার্ডে ১২২ নম্বর (বেআইনি পার্কিং) ধারায় মামলা রুজুর সংখ্যা ২৩৮, উল্টোডাঙা ট্র্যাফিক গার্ডে ১৯৮। পিছিয়ে নেই শিয়ালদহ, ঠাকুরপুকুর ট্র্যাফিক গার্ডও। এমনকি, বহু স্কুল সংলগ্ন রাস্তা তো বটেই, শহরের ব্যস্ত রাস্তা জুড়ে এখনও বেআইনি পার্কিংয়ের রমরমা চলছে বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, শহরের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের একাংশের মদতেই চলে বেআইনি পার্কিং। মানিকতলা থানা এলাকার বাসিন্দা ব্রততী সাহা বললেন, ‘‘দিনে তা-ও পুলিশের নজরদারি থাকে। কিন্তু রাত হলে কোনও নিয়মই থাকে না। যেমন খুশি গাড়ি দাঁড় করিয়ে মালপত্র ওঠানো-নামানো চলে। পুলিশকে বলেও কোনও কাজ হয় না।’’
যদিও পুরসভার পার্কিং বিভাগের এক কর্তা বলেন, ‘‘পুলিশকেই তো বেআইনি পার্কিং বন্ধ করতে হবে। পুরসভার পক্ষে তো বেআইনি পার্কিংয়ে গিয়ে গাড়ি ধরে ধরে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়।’’ লালবাজারের এক পুলিশ কর্তার আবার বক্তব্য, ‘‘কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেই তো এত মামলার সংখ্যা।’’কিন্তু কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার পরেও বেআইনি পার্কিং বন্ধ হচ্ছে না কেন? সেই জবাব অবশ্য এড়িয়ে গিয়েছেন ওই পুলিশকর্তা।