—ফাইল চিত্র।
ব্লু লাইনে শেষ মেট্রোর সময় বদলাচ্ছে কলকাতা মেট্রো রেল। মে মাস থেকে মেট্রোযাত্রীদের জন্য কবি সুভাষ থেকে দমদম মেট্রো স্টেশন পর্যন্ত বিশেষ রাত্রিকালীন পরিষেবা চালু করেছিল কলকাতা মেট্রো। পরীক্ষামূলক ভাবে চালানো ওই পরিষেবায় সোম থেকে শুক্র রাত ১১টার সময় শেষ মেট্রো রওনা হত কবি সুভাষ এবং দমদম স্টেশন থেকে। বুধবার একটি বিবৃতি দিয়ে কলকাতা মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ১১টার বদলে শেষ মেট্রো রেল ছাড়বে রাত ১০টা ৪০ মিনিটে। কেন এই বদল? তার কারণও সবিস্তার ব্যাখ্যা করেছেন কলকাতা মেট্রো কর্তৃপক্ষ।
আগামী সোমবার অর্থাৎ ২৪ জুন থেকে চালু হবে এই নতুন নিয়ম। ২০ মিনিট এগিয়ে আসবে ব্লু লাইনের রাত্রিকালীন বিশেষ মেট্রোর সময়। কারণ হিসাবে মেট্রো জানিয়েছে, ‘মাত্রাতিরিক্ত খরচ’ এবং তুলনায় ‘খুবই কম আয়’-এর কথা।
মেট্রোযাত্রীরা যদিও রাতের এই বিশেষ মেট্রো পরিষেবা নিয়ে খুব একটা খুশি নন। তাঁদের মতে, রাতের শেষ মেট্রো দুই প্রান্তিক স্টেশন থেকে এত দিন ৯টা ৪৫ মিনিটে ছাড়ত। পরে মেট্রো কর্তৃপক্ষ বিশেষ মেট্রো চালানো শুরু করে রাত ১১টায়। ফলে ৯টা ৪৫ মিনিটের মেট্রো না পেলে তাঁকে ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট বসে থাকতে হত। মধ্যবর্তী স্টেশনের ক্ষেত্রে অপেক্ষা গড়াত আরও রাত পর্যন্ত।
যাত্রীদের একাংশের মতে, শেষ মেট্রো এবং রাতের বিশেষ মেট্রোর মধ্যে সময়ের এতটা ফারাক থাকলে আদতে যাত্রীদের কোনও লাভ হয় না। দমদমের বাসিন্দা বরুণ দাস বলেন, ‘‘মেট্রো কর্তৃপক্ষ যদি সত্যিই যাত্রীদের সুবিধার কথা ভাবেন, তা হলে তাঁদের ৯টা ৪৫-এর পরে অত দেরিতে বিশেষ মেট্রো না চালিয়ে আরও আগে এগিয়ে আনা উচিত। সেটা ১০টা, বড়জোর সওয়া ১০টা হতে পারে। তার বেশি হলে যাত্রীদের উপকার তো হবেই না, বরং বিরক্তি তৈরি হবে।’’
একই কথা বলছেন চেতলার জয়দীপ সেন। ধর্মতলা চত্বরে তাঁর অফিস। কাজ শেষ হতে হতে বেশ রাত হয়ে যায়। তিনি বলছিলেন, ‘‘রাতে বাড়ি ফেরার সময় সওয়া ১ ঘণ্টা ধরে চাঁদনি চকে বসে থাকার চেয়ে অন্য কিছু ধরে বাড়িতে তাড়াতাড়ি আসা যায়। মেট্রোর উচিত রাতের এই বিশেষ ট্রেন চলাচল আরও গায়ে গায়ে করা। দু’টি মেট্রোর মধ্যে ১৫-২০ মিনিটের ব্যবধান থাকলে তা যাত্রীদের কাজে লাগবে। মানুষের হাতে অত সময় নেই প্ল্যাটফর্মে বসে অত রাতে বসে বিশেষ মেট্রোর অপেক্ষা করা।’’
যদিও মেট্রো কর্তৃপক্ষ প্রেস বিবৃতিতে লিখেছেন, ‘‘রাতে প্রচুর সংখ্যক মানুষের চাহিদা পূরণ করা যাবে, এই আশা নিয়ে চালু করা হয়েছিল এই পরিষেবা। তবে দেখা যাচ্ছে যে রাতের এই পরীক্ষামূলক পরিষেবাগুলি মেট্রোযাত্রীদের মধ্যে তেমন জনপ্রিয় হচ্ছে না। তাই এই সিদ্ধান্ত।’’
এই বক্তব্যের সমর্থনে আয়-ব্যায়ের বিস্তারিত হিসাবও দিয়েছে মেট্রো। তারা বলছে, ‘‘আপ এবং ডাউনে যে দু’টি রাত্রিকালীন ট্রেন চালাতে খরচ হচ্ছে প্রায় ৩ লক্ষ ২০ হাজার টাকা (চালানোর খরচ প্রায় ২.৭ লক্ষ টাকা এবং অন্যান্য খরচ ৫০ হাজার টাকা )। অথচ দু’টি ট্রেন থেকে আয় হচ্ছে অনেক কম। রাত ১১ টার প্রতিটি ট্রেনে গড়ে মাত্র ৩০০ জন যাত্রী হচ্ছে । তা থেকে দু’টি ট্রেন থেকে আয় হচ্ছে গড়ে কেবল ৬ হাজার টাকা।’’
মেট্রো কর্তৃপক্ষ প্রেস বিবৃতিতে জানিয়েছেন, এই ট্রেন চালানোর জন্য প্রতি স্টেশনে কাউন্টার খোলা রাখতে হচ্ছিল রাত পর্যন্ত। অথচ দেখা যাচ্ছে, ‘‘অধিকাংশ স্টেশনে গড়ে মাত্র ১ বা ২ টি টোকেন বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ এই সময়ে টোকেন বিক্রির হারও খুবই কম।’’
এই সমস্ত বিষয় মাথায় রেখেই মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, আগামী ২৪ জুন থেকে কবি সুভাষ এবং দমদম থেকে শেষ মেট্রো রওনা হবে রাত ১০টা ৪০ মিনিটে। মেট্রো আরও জানিয়েছে, ‘‘সোমবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত এই পরিষেবা চলাকালীন স্টেশনে কোনও টিকিট কাউন্টার খোলা থাকবে না। যাত্রীদের ইউপিআই পেমেন্ট মোডের মাধ্যমে স্টেশনে বসানো এএসসিআরএম মেশিন থেকে টোকেন সংগ্রহ করতে হবে। এছাড়া স্মার্ট কার্ডের সুবিধা তো থাকবেই।’’
কিন্তু তাতে কোনও লাভ হবে কি? যাত্রীদের বক্তব্য খতিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে নিজেদের লাভ-ক্ষতির হিসাব মাথায় রেখে যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্য দেওয়ার যে পন্থা তারা গ্রহণ করতে চলেছে আগামী সোমবার থেকে, তাতেও শেষ পর্যন্ত যাত্রীদের আশা পূরণ হচ্ছে না।