লোকারণ্য: বইমেলার জন্য রবিবারেও পরিষেবা দিচ্ছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো। ভিড় উপচে পড়েছে করুণাময়ী স্টেশনে। নিজস্ব চিত্র।
সন্ধ্যা প্রায় সাড়ে ছ’টা। শিয়ালদহ স্টেশন ছেড়ে যাওয়া ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো উপচে পড়ছে বইমেলাগামী যাত্রীর ভিড়ে। করুণাময়ী স্টেশন তো লোকে লোকারণ্য। এক দিকে যাত্রীরা নামছেন, অন্য দিকে, বইমেলা ফেরত ভিড় শিয়ালদহমুখী। মেট্রো স্টেশনে প্রবেশের পথে ভিড় সামাল দিতে গিয়ে নাকানি-চোবানি খেতে দেখা গেল পুলিশকেও।
উত্তর শহরতলির বারাসত, ব্যারাকপুর, হাবড়া কিংবা দক্ষিণ শহরতলির সোনারপুর, বারুইপুর, বজবজকে বইমেলার খুব কাছাকাছি এনে দিয়েছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো। সেই স্রোতে ভেসে শনিবারের ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো পঞ্চাশ হাজার যাত্রীর গণ্ডি অতিক্রম করেছে। শহরতলির লোকাল ট্রেন থেকে নেমেই ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো ধরে মাত্র মিনিট পনেরোয় সল্টলেকের বইমেলা প্রাঙ্গণে পৌঁছে যাওয়া যাচ্ছে। বাইরে জ্যামে হাঁসফাঁস রাস্তা ছেড়ে মেট্রোর এই সফর এতই অনায়াস যে বইমেলায় আসার খুশি গোপন করতে পারছিলেন না সোনারপুরের কলেজ পড়ুয়া অভিজ্ঞান বসাক। বইমেলায় পৌঁছনোর এই স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে একই ভাবে উৎফুল্ল গড়িয়া পঞ্চসায়রের বাসিন্দা সূর্যেন্দু রায় কিংবা বারাসতের তিথি হালদার।
অতিমারি আবহে গত বছরও একই মাঠে বইমেলা হয়েছিল। সংক্রমণের আশঙ্কায় অনেকেই সেই মেলা এড়িয়ে গিয়েছিলেন। ওই সময়ে ইস্ট-ওয়েস্টের দৌড় সীমাবদ্ধ ছিল ফুলবাগান পর্যন্ত। ওই মেট্রোর দৈনিক যাত্রী সংখ্যা তখন মেরেকেটে দেড় হাজারও ছিল না। বইমেলায় পৌঁছনোর জন্য সরকারি পরিবহণ নিগম পর্যাপ্ত বাস চালালেও রাস্তায় যানজটে নাকাল হতে হত বইপ্রেমীদের। বইমেলায় আসা-যাওয়ার পথেই দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা লেগে যেত, জানাচ্ছেন উত্তর এবং দক্ষিণ শহরতলির বাসিন্দারা। এ বার ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো করুণাময়ী পৌঁছে যাওয়ায় সেই সমস্যা অনেকটাই মিটেছে। পঞ্চসায়রের অভিজ্ঞানের কথায়, ‘‘আগে যেখানে বাড়ি ফিরতে কম করে আড়াই ঘণ্টা লাগত, এখন সেখানে অর্ধেক সময় লাগছে। মেলায় অনেকটা সময় থাকতে পারছি। বেশ কয়েক দিন মেলায় যাওয়ার ইচ্ছে রয়েছে।’’ একই মত অন্যদেরও।
যদিও বেহালা, টালিগঞ্জ এবং কসবার মানুষকে এখনও বাসের উপরেই নির্ভর করতে হচ্ছে। তাতেই শহরতলির যাত্রীদের উপরে ভরসা করে শনিবারের ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোয় যাত্রী সংখ্যা ৫১ হাজার ২৬৩-তে গিয়ে ঠেকেছিল। শুধু শিয়ালদহ স্টেশন থেকেই ইস্ট-ওয়েস্টে যাত্রী উঠেছিলেন ২০ হাজার ৪৭ জন এবং কেবল করুণাময়ী থেকে ওই দিন দ্বিমুখী যাত্রী ছিল ১২ হাজার ৮৪৩ জন। আগামী কয়েক দিনে আরও বেশি ভিড় আশা করছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ।
মেট্রো রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র বলেন, ‘‘যাত্রীদের কথা ভেবেই রবিবার মেট্রো চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। অন্যান্য দিনও মেট্রোর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।’’ আগামী বছর নিউ গড়িয়া-বিমানবন্দর মেট্রো সেক্টর-৫ পর্যন্ত ও জোকা মেট্রো মাঝেরহাট পর্যন্ত সম্প্রসারিত হলে বিপুল মানুষের কাছে বইমেলায় যাতায়াত মসৃণ হবে বলে মত ওই আধিকারিকের।