গার্ডেনরিচে বেআইনি বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল ১৩ জনের। —ফাইল চিত্র।
গার্ডেনরিচে বেআইনি বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল ১৩ জনের। মৃত ১২ জনের পরিবারকে আগেই ক্ষতিপূরণ বাবদ পাঁচ লক্ষ টাকা করে দিয়েছে কলকাতা পুরসভা। কিন্তু ওই দুর্ঘটনায় মৃত হুগলির খানাকুলের বাসিন্দা এক যুবকের পরিবার এখনও পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ বাবদ পাঁচ লক্ষ টাকা পাননি। তা পেতে কলকাতা পুরসভা থেকে গার্ডেনরিচ থানায় নিত্যদিন দরবার করছেন মৃতের পরিবারের সদস্যরা!
পুরসভা সূত্রের খবর, শেখ আবদুল্লাহ নামে ওই যুবক গত ডিসেম্বরে মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা এক মহিলাকে বিয়ে করলেও তাঁদের বিয়ের রেজিস্ট্রেশন হয়নি। ফলে স্ত্রীর কাছে বিয়ের কোনও প্রামাণ্য নথি না থাকায় ওই তরুণী প্রথমে গার্ডেনরিচ থানায় গেলেও তাঁকে পুলিশ জানিয়ে দেয়, তিনি ক্ষতিপূরণের টাকা পাবেন না। আবার আবদুল্লাহর শৈশবে তাঁর মাকে ছেড়ে চলে যান বাবা। তাঁর মা দ্বিতীয় বিয়ে করে বর্তমানে বিহারের বাসিন্দা। ছোট থেকেই দিদিমার কাছে বড় হয়েছেন আবদুল্লাহ। তাই দিদিমা মাসুদা বিবি ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে হুগলির খানাকুল থেকে গাড়ি ভাড়া করে নিয়মিত কলকাতা পুরসভা ও গার্ডেনরিচ থানায় আসা-যাওয়া করছেন।
সম্প্রতি কলকাতা পুরসভার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আবদুল্লাহর ক্ষতিপূরণ বাবদ টাকা শীঘ্রই পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে। কিছু আইনি জটিলতার জন্য আমরা নবান্নের পরামর্শ চেয়েছি।’’
খানাকুলের বাসিন্দা আবদুল্লাহ অতীতে মুম্বইয়ে গয়না তৈরির কাজ করতেন। এক সময়ে তিনি কলকাতায় চলে এসে রাজমিস্ত্রির কাজ শুরু করেন। মুর্শিদাবাদের এক তরুণীর সঙ্গে ফোনের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের পরিচয় ছিল তাঁর। গত ডিসেম্বরে তাঁদের বিয়ে হয়। আবদুল্লাহের মামা শেখ মাসুদের কথায়, ‘‘গার্ডেনরিচে রাজমিস্ত্রির কাজ করে ওই বহুতলের পাশের একটি বাড়িতে ঘুমোচ্ছিল আবদুল্লাহ। দুর্ঘটনায় চাপা পড়ে মারা যায়।’’
মৃত আবদুল্লাহের স্ত্রী তসলিমা খাতুন ফোনে বলেন, ‘‘বাড়ির অমত থাকায় পালিয়ে বিয়ে করেছিলাম। গত ডিসেম্বরে বিয়ে হলেও আইনি কাগজপত্র ছিল না। যার জন্য স্বামীর মৃত্যুর পরে সরকারি তরফে ক্ষতিপূরণের টাকা পাইনি।’’ গার্ডেনরিচ থানা সূত্রের খবর, দুর্ঘটনার পরে ক্ষতিপূরণের টাকার অঙ্ক মুখ্যমন্ত্রীর তরফে ঘোষণার পরেই আবদুল্লাহের স্ত্রী ও তাঁর দিদিমা থানায় এসে ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে দরবার করেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, নিয়ম মতো ক্ষতিপূরণের সর্বপ্রথম দাবিদার মৃতের স্ত্রী। কিন্তু এ ক্ষেত্রে স্ত্রীর কাছে বিয়ের প্রামাণ্য নথি ছিল না। তাই মৃতের স্ত্রী ও দিদিমা— দু’তরফে কথা বলে স্থির হয়েছিল, আবদুল্লাহের দিদিমা, তাঁর স্ত্রীর হাতে ৭০ হাজার টাকা দেবেন। সেই মতো দিদিমার তরফে মৃতের স্ত্রীকে ৭০ হাজার টাকা দেওয়াও হয়েছিল। পুলিশ সূত্রের খবর, দু’তরফের সম্মতি নিয়ে পুলিশ একটি ‘এনওসি’ (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট) করেছিল যে, ক্ষতিপূরণের টাকা মৃতের দিদিমা পাবেন।
আবদুল্লাহের দিদিমা মাসুদা বিবি সোমবার ফোনে বলেন, ‘‘নাতিকে ছোট থেকে কষ্ট করে মানুষ করেছিলাম। তাকে তো আর ফিরে পাব না। এ দিকে বাজারে অনেক ধারদেনা হয়ে রয়েছে। ক্ষতিপূরণের টাকাটা হাতে পেলে ধারগুলো মেটাতে পারব।’’