প্রস্তুতি: অ্যাডিনোভাইরাস আতঙ্কের মধ্যে মজুত করা হচ্ছে অক্সিজেন সিলিন্ডার। বুধবার, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।
গত ১ জানুয়ারি থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত রাজ্যে জ্বর ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৪৭ জন শিশুর। তাদের বেশিরভাগেরই জন্মগত কোমর্বিডিটি ছিল বলে দাবি স্বাস্থ্য দফতরের। চিকিৎসকেরাও জানাচ্ছেন, কোনও বাচ্চার হৃৎপিণ্ডে বা ফুসফুসে জন্মগত ত্রুটি থাকলে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, অ্যাডিনো বা অন্য যে কোনও ভাইরাসের আক্রমণেই ওই শিশুদের অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন বা শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ বেশি হয়। খুব তাড়াতাড়ি সেটি বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।
সূত্রের খবর, মঙ্গলবার সমস্ত মেডিক্যাল কলেজের শিশুরোগ বিভাগের প্রধান চিকিৎসক-সহ অন্যান্যদের সঙ্গে বৈঠকে এই বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখার কথা বলেছেন স্বাস্থ্যকর্তারাও। এ দিন স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমও বলেন, “কোমর্বিডিটিতে আক্রান্ত শিশুদের শ্বাসকষ্ট সব সময়েই অন্যদের থেকে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।’’ স্বাস্থ্য দফতরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পরিজনদের পাশাপাশি সতর্ক হতে হবে চিকিৎসকদেরও। জ্বর-সর্দি নিয়ে আসা শিশুদের এমন কোনও সমস্যা থাকলে তাদের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে চিকিৎসকদের।”
এ দিন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে যে দুই শিশুর মত্যু হয়েছে, তাদের হৃৎপিণ্ডে জন্মগত সমস্যা ছিল বলে জানা যাচ্ছে। সেখানকার পেডিয়াট্রিক ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটের প্রধান চিকিৎসক মিহির সরকার জানান, হৃৎপিণ্ডে জন্মগত সমস্যার পাশাপাশি যারা অপুষ্টিতে ভুগছে, সময়ের আগে জন্মেছে বা জন্মের সময়ে ওজন কম ছিল, তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হওয়ায় সহজেই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। তা দ্রুত ছড়িয়ে সঙ্কটজনক করে শিশুকে।
মিহিরের কথায়, “এমন সমস্যায় জর্জরিত শিশুদের শ্বাসযন্ত্রের যে কোনও সংক্রমণই ভয়াবহ হতে পারে। যেমন, হৃৎপিণ্ডের জন্মগত সমস্যা থাকা শিশুদের ফুসফুসে রক্ত সঞ্চালন বেশি হয়। তাতে প্রদাহ বেশি হওয়ায় সংক্রমিত হলে সারতে অনেকটা সময় লাগে। কিংবা শিশু দ্রুত সঙ্কটজনক হয়।” চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এমন শিশুদের সাধারণ সর্দি-কাশি দু’দিনের মধ্যেই শ্বাসকষ্টে পরিণত হচ্ছে। আর এক শিশুরোগ চিকিৎসক দিব্যেন্দু রায়চৌধুরীর কথায়, “লিউকেমিয়া বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে দীর্ঘ দিন ধরে ওষুধ খাচ্ছে এবং ক্রনিক অসুখে আক্রান্ত বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও ভাইরাসের আক্রমণ ঝুঁকির। বয়স দু’বছরের কম হলে খুবই সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, সদ্যোজাত থেকে ওই বয়স পর্যন্ত সংক্রমিতের হার সব থেকে বেশি।”
যে সব বাচ্চাকে জন্মের পরেই শ্বাসযন্ত্রের সমস্যার জন্য ভেন্টিলেশনে রাখতে হয়েছিল, এমন শিশুদের ক্ষেত্রে বিষয়টি যথেষ্ট চিন্তার, জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। কারণ, তখন যদি ফুসফুসে ক্ষতি হয়ে থাকে, সেই শারীরিক অবস্থায় ভাইরাসের হানায় সংক্রমণ বড় ধাক্কা দিতে পারে। স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, যে সব শিশুর এমন সমস্যা রয়েছে, তাদের পরিজনদের অত্যন্ত সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। করোনার মতো বিধি যেমন মানতে হবে, তেমনই শিশুর জ্বর-সর্দি-কাশি বা গলা ব্যথা হলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। তাঁরা এটাও জানাচ্ছেন, অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত হলে এমনিতেই ফুসফুসে দীর্ঘস্থায়ী কুপ্রভাব পড়ছে। সেখানে আগে থেকেই হৃৎপিণ্ড বা ফুসফুসের সমস্যা থাকলে তার শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক হতে বেশি সময় নেয় না।