অভিরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
ছেলের মৃত্যু-রহস্যের সমাধান চেয়ে বৃহস্পতিবার ইকো পার্ক থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করল বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্মী অভিরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবার। তাদের দাবি, অভিরূপকে খুন করে ফেলে দেওয়া হয়েছে। মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগেও তাঁর কথাবার্তায় কোনও অস্বাভাবিকতা লক্ষ করেননি তাঁরা, এমনটাই দাবি অভিরূপের বাবা অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
বুধবার সকালে নিউ টাউনের ইকো পার্ক থানার যাত্রাগাছি অঞ্চলে জৈব হাটের কাছে একটি নির্মীয়মাণ বহুতলের নীচ থেকে উদ্ধার হয় ওই ব্যাঙ্ককর্মীর দেহ। ওই নির্মীয়মাণ বহুতলটিতে কাজ বন্ধ রয়েছে বহু দিন। বছর ত্রিশের অভিরূপ সল্টলেকের করুণাময়ীতে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে কর্মরত ছিলেন। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, তাঁর মাথার পিছনে আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। যেটি উপর থেকে পড়ে যাওয়ার কারণে হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ। তবে ঘটনাটি আত্মহত্যা, না কি খুন হয়েছেন ওই ব্যাঙ্ককর্মী, তা জানতে ময়না তদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। বৃহস্পতিবারই অভিরূপের দেহের ময়না তদন্ত হয়েছে।
বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমরা ময়না তদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষা করছি। ওই ব্যাঙ্ককর্মীর পরিবারের তরফে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ খুনের মামলা রুজু করেছে। তদন্ত হবে। ব্যাঙ্ককর্মীর অফিসে গিয়েও কথা বলা হয়েছে। তাঁরা পুলিশকে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার পর্যন্ত ছেলেটির মধ্যে কোনও অস্বাভাবিকতা দেখা যায়নি।’’
অভিরূপের বাবা অরূপ জানান, গত শুক্রবার তাঁর ছেলে বর্ধমানে গিয়েছিলেন। শনি ও রবি ছুটি কাটিয়ে সোমবার সল্টলেকে অফিসে কাজে যোগ দেন। তিনি বলেন, ‘‘মঙ্গলবার রাতেও ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছে। কোনও অস্বাভাবিকতা ছিল না। কোনও না কোনও রহস্য নিশ্চয়ই রয়েছে। আমার ছেলেকে খুন করে দেহ পাচারের চক্রান্ত করা হয়েছিল। তা না হলে ছেলে যেখানে ভাড়া থাকত, সেখান থেকে অত দূরে কী করে পৌঁছল? আমাদের একমাত্র সন্তান ছিল অভিরূপ। সব শেষ হয়ে গেল।’’
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, নয়াপট্টিতে একটি ফ্ল্যাটবাড়ির ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতেন অভিরূপ। মঙ্গলবার গভীর রাতে একটি খাবার সরবরাহকারী সংস্থার থেকে খাবার আনতে যাওয়ার নাম করে তিনি বেরোন। এর পরে আর ফেরেননি। তাঁর ফোনও বন্ধ ছিল। যে কারণে ছেলের খোঁজ না পেয়ে বুধবার দুপুরে বর্ধমান থেকে সল্টলেকের পাঁচ নম্বর সেক্টরে ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানায় ছুটে আসেন তাঁর বাবা-মা। অভিরূপের পরিবার জেনেছে, ভাড়ার ফ্ল্যাটটি থেকে অর্ধেক ভরা একটি নরম পানীয়ের গ্লাস উদ্ধার হয়েছে। তবে সেটিতে মদ মেশানো ছিল না বলেই দাবি পরিবারের। যদিও এ দিন পর্যন্ত পুলিশের ধারণা, অভিরূপ আত্মঘাতী হয়েছেন।
তদন্তকারীরা জানান, সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গিয়েছে, অভিরূপ একাই রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলেন। রাত তিনটের কাছাকাছি সময়ে ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গিয়েছে, তিনি একাই হাঁটছেন রাস্তা দিয়ে। অত রাতে তিনি কী কারণে সেখানে গিয়েছিলেন, সেটাই এখন ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের।