এসএসকেএম হাসপাতাল। —ফাইল চিত্র।
ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় বাবার সঙ্গে অটোয় চেপে বেরিয়েছিল চার বছরের মেয়েটি। মোটর ভ্যানের সঙ্গে সংঘর্ষে গুরুতর জখম হয় দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসিন্দা হাসি মোল্লা। ডান পায়ের গোড়ালির সংযোগস্থল থেকে কেটে সরু চামড়া দিয়ে ঝুলতে থাকে পায়ের পাতা। পায়ের কেটে যাওয়া সেই পাতা জুড়ে ছোট্ট হাসিকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দিল এসএসকেএম হাসপাতাল।
অস্ত্রোপচারের ১১ দিন পরে চিকিৎসকেরা হাসিকে পরীক্ষা করে জানান, দ্রুত বাড়ি ফিরতে পারবে সে। পিজির প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের আইটিইউ-তে চিকিৎসাধীন রয়েছে শিশুটি। পরিজনেরা জানাচ্ছেন, ২০ অক্টোবর সন্ধ্যায় বাবার সঙ্গে সে ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছিল। জয়নগরের কাছে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। প্রথমে নিমপীঠ হাসপাতাল, পরে বারুইপুর হাসপাতালে পাঠানো হয় শিশুটিকে। সেখান থেকে তাকে স্থানান্তরিত করা হয় ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখান থেকেও রেফার হয়ে রাত ১১টা নাগাদ আসে এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ারে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, তখনও গোড়ালির সঙ্গে কোনও মতে ঝুলছিল পায়ের পাতা।
পিজির প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক অরিন্দম সরকার জানাচ্ছেন, পায়ের পাতা জোড়া লাগাতে দ্রুত শিশুটির অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত হয়। অস্থি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক মুকুল ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে দল গঠন হয়। এক্স-রে ও অন্যান্য পরীক্ষা করে চিকিৎসকেরা দেখেন, বালিকার ওই পায়ের হাড়, স্নায়ু, টেন্ডন (শক্ত ও মোটা তন্তু, যা দিয়ে মাংসপেশি হাড়ের সঙ্গে যুক্ত থাকে), ধমনী সবই কেটে গিয়েছে।
ষষ্ঠীর রাত দুটো থেকে শুরু হয় অস্ত্রোপচার। অস্থিরোগ চিকিৎসক অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়, কিরণ্ময় ঘোষ এবং শুভজিৎ মুখোপাধ্যায় হাড় জোড়েন। প্লাস্টিক সার্জন কল্যাণ দাস ও সন্দীপ বসুর তত্ত্বাবধানে সুশোভন সাহা, নেহা আগারওয়াল, দীপস্মিতা শর্মা ও শর্বরী কুণ্ডু স্নায়ু, টেন্ডন ও ধমনী জুড়ে, পায়ের কাটা পাতা জোড়া লাগান। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বাঁ পা থেকে চামড়া ও মাংস নিয়ে ‘ক্রস লেগ ফ্ল্যাপ’ (দু’টি পা একসঙ্গে জুড়ে রাখা) পদ্ধতিতে ডান পায়ের ক্ষত মেরামত হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, কয়েক দিনের মধ্যে হাসি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে।