—ফাইল চিত্র।
হাওড়া সেতুর রাস্তা ও সংলগ্ন ফুটপাত দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাস্তার খানাখন্দ এবং ফাটল দিয়ে জল চুঁইয়ে ভিতরে ঢুকে সেতুর ডেক কাঠামোর (যার উপরে পিচের আস্তরণ রয়েছে) ক্ষতি করেছে, মরচে ফেলেছে ভিতরের লোহার কাঠামোতেও। তাই হটমিক্স প্লান্টের মাধ্যমে বিটুমিন-মিশ্রণ ব্যবহার করে সেতু মেরামতির অনুমতি দেওয়া হোক। জাতীয় পরিবেশ আদালতে এমনই আবেদন জানিয়েছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি বন্দর কর্তৃপক্ষ (কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ)। তারই পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশ-বিধি মেনে ম্যাস্টিক অ্যাসফল্ট ব্যবহার করা যাবে কি না, তা সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি গঠনের কথা সোমবার লিখিত নির্দেশে জানিয়েছে আদালত।
আদালত গঠিত ওই কমিটিতে রাখা হয়েছে আইআইটি খড়্গপুর, আইআইটি গুয়াহাটি, সেন্ট্রাল রোড রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিআরআরআই) এবং রাজ্য ও কেন্দ্রীয় দূষণ পর্ষদের প্রতিনিধিদের। পরিকাঠামোগত সব রকম সাহায্য করার জন্য নোডাল এজেন্সি করা হয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষকে। সেতুর রাস্তা ও সংলগ্ন ফুটপাত মেরামতির জন্য বিকল্প পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি এবং প্রযুক্তি কী রয়েছে, আগামী দু’মাসের মধ্যে সে সম্পর্কে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিতেও কমিটিকে বলেছে আদালত।
বন্দর সূত্রের খবর, হাওড়া সেতু দিয়ে দৈনিক প্রায় এক লক্ষ যানবাহন এবং প্রায় দেড় লক্ষ পথচারী যাতায়াত করেন। নিত্যদিনের সেই চাপে সেতুর রাস্তা এবং সংলগ্ন ফুটপাতে খানাখন্দ হয়ে স্বাভাবিক ভাবেই পরবর্তী কালে তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কী ভাবে এর মেরামতি করা যায়, তা নিয়ে ১৯৮৮ সালে সুপারিশ করেছিল রাইটস। যেখানে মূল ডেক স্ল্যাব অক্ষত রাখার জন্য তার উপরে ১৫ মিলিমিটারের ম্যাস্টিক অ্যাসফল্টের আস্তরণ দিয়ে সারাই করার কথা জানিয়েছিল তারা। সেই মতো ২০১৮ সাল পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময় অন্তর ওই পদ্ধতিতেই সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ করে এসেছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু সেই বছরেই বায়ুদূষণের পরিপ্রেক্ষিতে হটমিক্স প্লান্টের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে জাতীয় পরিবেশ আদালত। বন্দরের কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, যার ফলে তার পর থেকে শুধুমাত্র তাপ্পি মেরেই চলেছে সেতু রক্ষণাবেক্ষণের কাজ। যা খরচসাপেক্ষ তো বটেই, পাশাপাশি টেকসইও নয়। এক কর্তার কথায়, ‘‘বিকল্প পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে কী ভাবে সেতু সারাই করা যায়, তা নিয়ে একাধিক প্রতিষ্ঠান-সংস্থার পরামর্শ চাওয়া হয়েছে। আইআইটি মাদ্রাজের পরামর্শও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোনও পদ্ধতির খোঁজ মেলেনি।’’ তাই পরিবেশ আদালতের কাছে বন্দর কর্তৃপক্ষের আবেদন, নিয়ন্ত্রিত এবং নির্দিষ্ট সময়ের ভিত্তিতে হটমিক্স প্লান্টের ব্যবহার অনুমোদন করুক তারা। যার পরিপ্রেক্ষিতে হটমিক্স প্লান্ট নিয়ে মামলাকারী, পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলছেন, ‘‘ঘুরেফিরে হটমিক্স প্লান্টের ব্যবহার মানে তো সেই পিছনের দিকেই হাঁটা। তা হলে এখন অন্য সংস্থাও অন্য কোনও যুক্তি দেখিয়ে হটমিক্স প্লান্ট ব্যবহারের আবেদন করতে পারে! তখন কী হবে?’’