21 February

বাংলা ভাষাকে স্মরণ করে ‘দ্য বেঙ্গলের’ নিবেদন বর্ণমালা আমার

বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের সাফল্যের নিরিখে সমস্ত জাতির মাতৃভাষাকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। আসলে ২১শে ফেব্রুয়ারি শুধুমাত্র ক্যালেন্ডারে পাতায় উজ্বল হয়ে থাকে একটি তারিখ নয়, বাঙালির সংবিধানে এটি একটি শব্দ হয়ে উঠেছে।

শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১১:২৮
Share:

আলোচনায় শিল্পীরা

এ যেন এক কালের ত্রিবেণী সঙ্গম। বাংলা ভাষার সংগ্রামী ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ তথা স্বদেশের স্বাধীনতা লাভের অর্ধশতবার্ষিকী ও চিরঅবিস্মরণীয় রক্তক্ষয়ী ভাষা আন্দোলনের ৭০ তম বার্ষিকী ছিল এই বছরের ২১শে ফেব্রুয়ারি। সেই ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারিকে স্মরণ করে ‘দ্য বেঙ্গলের’ নিবেদন ছিল ‘বর্ণমালা আমার’। শ্রী সিমেন্ট ও আনন্দবাজার ডিজিটালের যৌথ উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ‘দ্য বেঙ্গলের’ ফেসবুক পেজে ভার্চুয়ালি আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট কবি তথা ঢাকা বাংলা আকাদেমীর মহাপরিচালক মহম্মদ নুরুল হুদা, বরেণ্য বাচিক শিল্পী ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিশিষ্ট আধুনিক কবি ও পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমীর সভাপতি সুবোধ সরকার।

শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, অনুষ্ঠানটি সুচারুভাবে পরিচালনা করেন সৌমিত্র মিত্র। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের সাফল্যের নিরিখে সমস্ত জাতির মাতৃভাষাকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। আসলে ২১শে ফেব্রুয়ারি শুধুমাত্র ক্যালেন্ডারে পাতায় উজ্বল হয়ে থাকে একটি তারিখ নয়, বাঙালির সংবিধানে এটি একটি শব্দ হয়ে উঠেছে। বাংলায় একুশ ও ইংরেজি মাস ফেব্রুয়ারির এই মেলবন্ধনে ‘ভাষা-মৈত্রীর’ সুবাস পান মহম্মদ নুরুল হুদা। তাঁর মতে, “পৃথিবীর সমস্ত ভাষাভাষীর মানুষের একটি ভাষা হল এক। এবং তা হল অনুভূতির ভাষা। তিনি আবৃত্তি করেন স্বরচিত কবিতা ‘প্রাণ মা’। রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি লাভের পরে বাংলা ভাষার সামগ্রিকভাবে প্রচলনের উদ্দেশ্যে পরিভাষা সৃষ্টির বিপুল কর্মকান্ডের অন্যতম কান্ডারি ছিলেন নুরুল হুদা।

পাশাপাশসি কবি সুবোধ সরকারের বক্তব্য থেকে উঠে আসে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। ২০২২ থেকে ২০৩২ এই দশককে ‘ভাষা দশক’ হিসেবে ঘোষণা করেছে জাতিসংঘ। তিনি জানান, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে লিপিবদ্ধ করা হবে বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন দেশের ৬০০টিরও অধিক ভাষা। যেগুলি শুধুমাত্র মৌখিকভাবে ব্যবহৃত হয়। এগুলির কোনও লিখিত রূপ নেই। ইতিহাস বলছে এই রকমই প্রায় ৪০০০ কথ্যভাষা ইতিমধ্যেই অবলুপ্ত হয়েছে। আসলে কোনও নির্দিষ্ট একটি ভাষা প্রতিটি জাতির সম্পদ। তাকে রক্ষা করার দায়িত্ব যেমন ভাষা-গবেষক, ভাষা বিজ্ঞানীর, তেমনি আমাদের প্রত্যেকেরও। কবি সুবোধ সরকার তাঁর ‘বাংলা’ শীর্ষক কবিতায় লিখেছেন, “গর্ব করার মতন রয়েছে একটি মাতৃভাষা”। বাঙালিদের আন্দোলন ও আত্মত্যাগে বাংলা আজ উপমহাদেশের সীমানা পেরিয়ে প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্যে পৌঁছেছে। কবির উপলব্ধি বাংলা ভাষার বহমানতা বজায় রাখতে শুদ্ধ ও সহজ বানান ব্যাবহার এবং প্রযুক্তিগত ত্রুটি বর্জন করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি সম্প্রতি বর্তমান যুগপোযোগী বাংলা অভিধান রচনার কাজও শুরু করেছে।

সৌমিত্র মিত্রের কন্ঠে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা পাঠ ও আলাপচারিতার মাঝে ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবৃত্তি, অনুষ্ঠানে এক অনন্য কাব্যিক মাত্রা যোগ করে। সমাপ্তিলগ্নে ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্ঠে জীবনানন্দ দাশের ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি’, শামসুর রহমানের ‘বর্ণমালা আমার দুঃখিনী বর্ণমালা’ ও প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের অবিস্মরণীয় সৃষ্টি ‘আমি বাংলায় গান গাই’ এই ত্রয়ী বিমূর্ত করে তোলে ২১শে ফেব্রুয়ারির রক্তিম ইতিহাস। ভাষা আন্দোলনের প্রসার ও ব্যাপ্তির ফলে এই আন্দোলন এক জাতীয়তাবাদী তথা সাংস্কৃতিক আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়েছে। সেই আন্দোলনের প্রতিফলনই উঠে এসেছে দ্য বেঙ্গল আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন