যৎসামান্য: কুমোরটুলিতে শুরু হয়েছে কিছু কাজ। ছবি: সুমন বল্লভ
রাজ্যের কোনও কোনও এলাকায় গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে সরকার। সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙতে তাই চলতি সপ্তাহ থেকেই দু’দিন করে শুরু হচ্ছে পূর্ণ লকডাউন। আর এই সংক্রমণের আতঙ্কেই এ বার কুমোরটুলি ছেড়ে বাড়ি ফেরার পথ ধরছেন একের পর এক কারিগর। ফলে উদ্যোক্তাদের তরফে কিছু দুর্গাপ্রতিমার বায়না এলেও কী ভাবে কাজ হবে, সেটাই আপাতত বড় চিন্তা মৃৎশিল্পীদের।
সাধারণত পুজোর আগে কুমোরটুলিতে প্রতিমা তৈরির কাজ করতে ভিড় জমান প্রায় হাজারখানেক কারিগর। কুমোরপাড়ার ছোট্ট পরিসরেই কয়েক মাস থেকে-খেয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ উতরে দেন তাঁরা। কিন্তু এ বছর কুমোরটুলিতে আসার বিশেষ উৎসাহ নেই ওই সব কারিগরদের মধ্যে। করোনার আতঙ্কে রোজগার করতে বেরোনোর বদলে ঘরে থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করছেন নদিয়া-বর্ধমান-মেদিনীপুরের ওই কারিগরেরা। আর যাঁরা ইতিমধ্যেই কুমোরটুলি পৌঁছে গিয়েছেন, তাঁরাও ভয়ে বাড়ি ফিরতে চাইছেন।
মৃৎশিল্পী চায়না পালের কাছে এ বছর ১০-১২টি প্রতিমা তৈরির বায়না এলেও কারিগর এসেছিলেন মাত্র দু’জন। তাঁদের দিয়েই কালীপ্রতিমা তৈরির কাজে হাত দিয়েছিলেন চায়না। ভাবনা ছিল, এর পরেই শুরু করবেন দুর্গা মূর্তি গড়ার কাজ। কিন্তু নদিয়ার বাসিন্দা ওই দুই যুবক কলকাতা পৌঁছনো ইস্তকই শুরু হয় বাড়ি থেকে ঘনঘন ফোন আসা। কলকাতায় সংক্রমণ বেশি হওয়ায় এবং কুমোরটুলির আশপাশে একাধিক কন্টেনমেন্ট জ়োন থাকায় তাঁদের নিয়ে উদ্বেগে ছিলেন পরিজনেরা। ফলে গত সপ্তাহে বাবা-মায়ের অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে দুর্গা তৈরি শুরুর আগেই বাড়ির পথ ধরেছেন ওই দু’জন। চায়নার কথায়, ‘‘ওঁরা থাকতে চাইলেন না। অন্য কারিগরেরাও এই পরিস্থিতিতে আসতে চাইছেন না। বলছেন, করোনা একটু কমুক, তার পরে যাব। বায়না পেয়েও তো লাভ হল না, প্রতিমা তো শুরুই করতে পারছি না।’’ একই সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন কুমোরটুলির অনেকেই। মৃৎশিল্পী জয়ন্ত পাল বলছেন, ‘‘বাড়ির প্রতিমা তৈরির কয়েকটি বরাত পেয়েছি। কিন্তু কারিগরেরা কেউ আসতে চাইছেন না। কারিগরদের থাকা-খাওয়ার সমস্যা আছে। আবার কোনও ভাবে সংক্রমিত হয়ে গেলে যে বড় বিপদে পড়বেন, সেই আশঙ্কা থেকেই এ বছর কুমোরটুলিকে এড়াতে চাইছেন তাঁরা। ফলে কাজ এখনও শুরুই করতে পারিনি।’’
আরও পড়ুন: মামলায় হার প্রোমোটারের, ক্ষতিপূরণের নির্দেশ
করোনা পরিস্থিতির মধ্যে প্রতিমা তৈরির কাঁচামাল কী ভাবে মিলবে বা বায়না আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় থাকলেও কারিগরেরা যে আসবেনই, তা নিয়ে এক প্রকার নিশ্চিত ছিলেন মৃৎশিল্পীরা। অন্যান্য বছরে ওই কারিগরদের একটি বড় অংশ ভিন্ রাজ্যে পাড়ি দিলেও এ বার তাঁদের প্রায় কেউই যাননি। ফলে কারিগরের জোগান থাকবে অনেকটাই বেশি— এমনই মনে করেছিলেন শিল্পীরা। দূরপাল্লার বাসে চেপেই ভিন্ জেলা থেকে কুমোরটুলিতে ঠিক পৌঁছে যাবেন কারিগরেরা, এমন ভেবেছিলেন কুমোরটুলি মৃৎশিল্প সংস্কৃতি সমিতির সম্পাদক রণজিৎ সরকারও। কিন্তু সব হিসেব উল্টে দিয়েছে করোনার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি। রণজিৎ বলছেন, ‘‘কুমোরটুলির কারিগরদের দুই তৃতীয়াংশই আসেন নদিয়া থেকে। কিন্তু কলকাতায় সংক্রমণের ভয়ে অনেকেই আসছেন না। আর যাঁরা এসেছেন, তাঁদের অনেকেই ফেরার পথ ধরেছেন। ফলে কারিগরের সঙ্কটও এ বার বড় অন্তরায় হয়ে দেখা দিতে চলেছে। এমন হলে আদৌ প্রতিমা তৈরি করা যাবে কি না, তা বলা মুশকিল।’’
আরও পড়ুন: দুষ্কৃতীকে জেরা করে জালে ভুয়ো নথি তৈরির দুই পাণ্ডা