পুজো-টেটের ঢলে হাঁসফাঁস শহর

শেষ রবিবাসরীয় পুজোর বাজার। তার সঙ্গে বাড়তি ‘অফার’ টেট পরীক্ষা। যার জেরে দুপুর থেকে শহরে উপচিয়ে পড়ল মানুষের ভিড়। হাতিবাগান, ধর্মতলা থেকে গড়িয়াহাট— সর্বত্র ছিল একই চিত্র।

Advertisement

অত্রি মিত্র

শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:২৫
Share:

গতি-রুদ্ধ ধর্মতলা। রবিবার ছবিটি তুলেছেন বিশ্বনাথ বণিক।

শেষ রবিবাসরীয় পুজোর বাজার। তার সঙ্গে বাড়তি ‘অফার’ টেট পরীক্ষা। যার জেরে দুপুর থেকে শহরে উপচিয়ে পড়ল মানুষের ভিড়। হাতিবাগান, ধর্মতলা থেকে গড়িয়াহাট— সর্বত্র ছিল একই চিত্র। রাস্তায় গাড়ির গাদাগাদিতে নাজেহাল হলেন পরীক্ষা আর বাজার ফেরত সাধারণ মানুষ। গাড়ি আর মানুষের ভিড় সামাল দিতে নাজেহাল হলেন ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে রাস্তায় নামা পুলিশকর্মীরাও।

Advertisement

খাতায়-কলমে পুজোর আগে আরও একটি রবিবার ক্যালেন্ডারে আছে। কিন্তু পাঁজির হিসেবে তা পঞ্চমী। আজ, সোমবার মহালয়া থেকেই যেখানে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুজোর উদ্বোধনে নেমে পড়ছেন, সেখানে আগামী রবিবার ভিড় আর দোকানে নয়, মণ্ডপেই উপচে পড়বে— এমনটাই মনে করছেন পুজোর কারবারিরা। তাই কেনাকাটার হিসেবে এটাই বলা চলে শেষ রবিবার। সকাল থেকে আকাশ পরিষ্কার, বৃষ্টির তেমন কোনও পূর্বাভাসও নেই— দুপুরে খাওয়া-দাওয়া সেরে তাই কলকাতার মানুষ ভাত-ঘুম শিকেয় তুলে নেমে পড়েছিলেন রাস্তায়। কেউ লিন্ডসে স্ট্রিট কিংবা নিউ মার্কেট। কেউ বা হাতিবাগান কিংবা গড়িয়াহাটে। অনেকে আবার ভিড় জমিয়েছেন হালফিলের শপিং কমপ্লেক্সে। কেউ কেউ আবার কেনাকাটা শেষ করে ফেলেছেন, তবু বিকেল হতেই বেড়িয়ে পড়েছেন স্রেফ পুজো-পুজো ভাবটা গায়ে মেখে নিতে। সঙ্গে নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা দিতে যাওয়া টেট পরীক্ষার্থীরা তো আছেনই।

সব মিলিয়ে দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মহানগরের রাস্তায় গাড়ি আর মানুষের ভিড় উপচে প়়ড়ল। তার মধ্যে দুপুর দু’টো নাগাদ বিজেপি-র কলেজ স্কোয়ার থেকে ওয়াই চ্যানেল পর্যন্ত মিছিল আরও বাড়িয়ে দিল যানজট। এমন একটা কিছু যে হতে চলেছে, তার আন্দাজ আগে থাকতেই ছিল। সে জন্য এ দিন রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন ছিল পর্যাপ্ত। বেসরকারি থেকে সরকারি বাস, মিনিবাস— সবই অফিস-দিনের মতো একেবারে না হলেও ছুটির দিনের চেয়ে ছিল অনেকটাই বেশি। অন্য দিকে, দিনভর মেট্রো চলেছে বাকি রবিবারের থেকে ঢের বেশি। তা সত্ত্বেও ভিড় সামাল দেওয়া গেল না। বিকেল চারটে নাগাদ মধ্য কলকাতার বেশির ভাগ বড় রাস্তা যানজটে আটকে পড়ল। চাঁদনি চক থেকে পার্ক স্ট্রিট যেতে সময় লাগল আধঘণ্টার বেশি। পরমা উড়ালপুলে এ দিন যানজট অপেক্ষকৃত কম হবে বলেই ভেবেছিল পুলিশ। কিন্তু বিকেলেই পার্ক সার্কাসে নামার মুখ যানজটে আটকে পড়ল।

Advertisement

মেট্রো রেল সূত্রের খবর, সাধারণত রবিবার বা ছুটির দিনে মেট্রো চলে ১১০টা। আর কাজের দিনে তা বেড়ে হয় ২৭৪টি। এ দিন চলেছে ১৭৮টি ট্রেন। তা সত্ত্বেও বিকেলের পর থেকে ভিড় সামাল দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। রাত সাড়ে ন’টা পর্যন্ত ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খেয়েছেন মেট্রোর নিরাপত্তাকর্মীরা। মেট্রো রেলের জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, অন্য দিন গড়ে মেট্রোয় যাত্রী সংখ্যা সাত লক্ষ পেরিয়ে যায়। রবিবার তার চেয়ে ভিড় থাকে অনেকটাই কম। কিন্তু পুজোর কেনাকাটার জন্য গত কয়েকটি রবিবারে ভিড় হচ্ছিল সাড়ে তিন লক্ষের একটু কম। এ দিন তো সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত ভিড় পৌনে তিন লক্ষ পেরিয়ে গিয়েছে। বাসমালিক সংগঠনের নেতা তপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আর পাঁচটা দিনের মতো বাস না নামলেও এ দিন অন্য রবিবারের চেয়ে বাস অনেকটাই বেশি ছিল। তাঁর কথায়, ‘‘ভাল রোজগারের আশায় অনেক মালিকই এ দিন বাস রাস্তায় নামিয়েছেন।’’ পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, অন্য রবিবারের চেয়ে এ দিন সরকারি বাস নেমেছে প্রায় দেড়গুণ বেশি।

এই ভিড়ে সাধারণ মানুষ যতই নাকাল হোন, দোকানদারেরা বেশ খুশি। গোলপার্কের মোড়েই চায়ের দোকানের এক মালিকের কথায়, ‘‘এ দিন যে ভিড় হবে, তার আন্দাজ ছিলই। তবে পরীক্ষাটা যে দুপুরে, সেটা খেয়াল ছিল না। আমি তো ভোর ছ’টাতেই দোকান খুলে বসে আছি। পরে দুপুরে পরীক্ষা শুনে একটু দমে গিয়েছিলাম। কিন্তু দুপুরের পর থেকে যে ভাবে বিক্রিবাটা হয়েছে, তাতে সকালের ওই পরিশ্রম পুষিয়ে গিয়ে উপরি আয় হয়েছে।’’ সারাদিন পর্যাপ্ত বিক্রিবাটা করে একই রকম চনমনে মেজাজে গড়িয়াহাট, শ্যামবাজার, হাতিবাগান, ধর্মতলা, নিউ মার্কেটের দোকানদারেরা।

সবমিলিয়ে পুজোর বিকিকিনির ফাইনাল ম্যাচটা জমেই গেল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement