ভেঙে ফেলা হচ্ছে বাড়িটির বিপজ্জনক অংশ। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
শহরে ভেঙে পড়ছে একের পর এক বিপজ্জনক বাড়ি। তাতে মারাও যাচ্ছেন মানুষ। তা সত্ত্বেও বিপজ্জনক তল্লাট থেকে সরতে চান না ভাড়াটেরা। এটাই এখন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেমন দেখা গেল উত্তর কলকাতার জোড়াবাগানের বৈষ্ণব শেঠ স্ট্রিটে।
সপ্তাহ দুয়েক আগে ইন্ডিয়ান মিরর স্ট্রিটেও একটি বিপজ্জনক বাড়ির একাংশ ভেঙে পড়ে মৃত্যু হয়েছিল দু’জনের। তবু সেই তল্লাটে প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই দিনের পর দিন রয়েছেন ভাড়াটেরা। বাড়ি থেকে সরে যাওয়ার কথা বললেই তাঁরা বলছেন, ‘‘বিকল্প জায়গা নেই। মরতে হলে এ ভাবেই মরব।’’
রবিবার রাতে জোড়াবাগান থানা এলাকার বৈষ্ণব শেঠ স্ট্রিটের একটি পুরনো বাড়ির তিনতলার একাংশ ভেঙে পড়ে। শুধু তা-ই নয়, বাড়িটি বিপজ্জনক ভাবে হেলেও যায়। সোমবার সকালে কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের তরফে বাড়িটির বিপজ্জনক অংশ ভেঙে দেওয়া হয়। বিকেলে সেই চারতলা বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, বাড়ির নীচে পুলিশ মোতায়েন করা রয়েছে। তিনতলায় ভেঙে পড়া অংশ থেকে ভাড়াটেরা নীচের তলায় আশ্রয় নিয়েছেন। পুরসভার তরফে ওই বাড়িতে আগেই ‘বিপজ্জনক’ নোটিস ঝোলানো হয়েছে। তা সত্ত্বেও দিনের পর দিন ভাড়াটেরা কেন প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে সেখানেই থাকছেন?
ওই বাড়িতে প্রায় ১৫টি পরিবারের বাস। দীপ্তি রাউত নামে এক ভাড়াটে বলেন, ‘‘বাড়িটি পুরনো হলেও ভাড়াটেরা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে মাঝেমধ্যে মেরামতি করান। বাড়ির আপাদমস্তক সংস্কারের জন্য মালিককে বলা হলেও তিনি কর্ণপাত করেননি।’’ ভাড়াটেদের দাবি, তাঁরা নিয়মিত মালিককে ভাড়া দেন। কিন্তু বাড়িটির সংস্কারের বিষয়ে মালিককে বলা হলে তিনি উচ্চবাচ্য করেন না। যদিও বাড়ির মালিককে এ দিন যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
পুরসভার বিল্ডিং দফতর সূত্রের খবর, শহরের অধিকাংশ জীর্ণ বাড়িতে পুরসভার তরফে বিপজ্জনক নোটিস দেওয়া হলেও ভাড়াটেরা তা ছিঁড়ে ফেলেন। আট নম্বর বৈষ্ণব শেঠ স্ট্রিটের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে বলে জানান পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের আধিকারিকেরা। এ দিন ঘটনাস্থলে পুরসভার বিপজ্জনক বাড়ি সংক্রান্ত কোনও নোটিস চোখে না প়ড়লেও ডিজি (বিল্ডিং-২) দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ওই বাড়িটিকে আগেই বিপজ্জনক বলে ঘোষণা
করা হয়েছে।’’
বাড়ির ভাড়াটেদের কথায়, ‘‘আমাদের বিকল্প বাসস্থান নেই। বাড়ির মালিক সংস্কার করতে নারাজ। পুরোপুরি বাড়ি সংস্কারের কথা বললে প্রোমোটিংয়ের কথা বলেন। কিন্তু এক বার বাড়িতে প্রোমোটার ঢুকে গেলে আমরা আর বিকল্প বাসস্থান পাব না। তাই এ ভাবেই বিপজ্জনক তল্লাটে থাকতে চাই। তাতে প্রাণের ঝুঁকি থাকলেও কোনও উপায় নেই।’’