পল্লব হাজারি। —নিজস্ব চিত্র।
বর্ষবরণের রাতে ছেলে গিয়েছিল বন্ধুদের সঙ্গে পিকনিক করতে। চার দিন ধরে নিখোঁজ থাকার পর সেই তরুণের দেহ পাওয়া গেল ভ্যাটের পাশে সেপটিক ট্যাঙ্কে। ছেলের যে বন্ধু থানায় গিয়েছিল ‘নিখোঁজ’-এর অভিযোগ জানাতে, সেই বন্ধুকেই জেরা করে খুনের কথা জানতে পারল পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের ধারণা, টাকা-পয়সা নিয়ে বিবাদের জেরে ওই তরুণকে খুন করা হয়। তবে সঙ্গে উঠে আসছে ত্রিকোণ প্রেমের তত্ত্বও।
বর্ষবরণের রাতে দমদমের প্রমোদনগরে বাড়ির কাছেই পিকনিক করতে গিয়েছিল ১৯ বছরের পল্লব হাজারি। বাবা শ্যামল বলেন, বিশাল যাদব এবং জিতু নায়েক নামে পল্লবের দুই বন্ধু ওই রাতে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। রাত ১২টা পর্যন্ত ফোনে মায়ের সঙ্গে কথাও বলে পল্লব। তার পরই ফোন সুইচড অফ পাওয়া যায়। রাতভর ছেলে বাড়ি না ফেরায় আশেপাশে খোঁজ করতে শুরু করেন শ্যামল এবং পরিবারের বাকি সদস্যরা। ছেলের হদিশ জিজ্ঞাসা করেন বন্ধুদেরও। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সময় বিশাল যাদব পল্লবের বাবার সঙ্গে থানায় গিয়েছিল পল্লবের নিখোঁজ ডায়েরি করতে।
পল্লবের হদিশ না পাওয়া গেলেও দু’দিন আগে তাঁর পকেটে থাকা কিছু কাগজপত্র পাওয়া যায় স্থানীয় একটি পুকুরের পাড় থেকে। সেই কাগজপত্রেরও হদিশ পল্লবের পরিবার জানতে পারে বিশালের কাছ থেকে। সেখান থেকেই পুলিশের সন্দেহ হয়। বিশালকে আটক করে জেরা করা শুরু করে পুলিশ।
আরও পড়ুন: মধ্য কলকাতার পানশালায় মারধরের অভিযোগ অনুপম হাজরার বিরুদ্ধে
পুলিশ সূত্রে খবর, প্রথমে অস্বীকার করলেও জেরার মুখে বিশাল স্বীকার করে যে, পল্লবকে খুন করা হয়েছে। পিকনিকের পরে ওই রাতেই মত্ত অবস্থায় বিশাল এবং জিতু নায়ের ইট দিয়ে থেঁতলে খুন করে পল্লবকে। তার পর দেহটি ফেলে দেয় প্রমোদনগরের ভ্যাটের পাশে থাকা সেপটিক ট্যাঙ্কে। পুলিশের দাবি, জিতু এবং বিশালকে জেরা করেই দেহের হদিশ মেলে। প্রাথমিক জেরায় ধৃতেরা জানিয়েছে, পল্লব এবং বাকিরা কখনও গাড়ি চালানো বা দিন মজুর হিসাবে কাজ করত। ওই দিন পল্লবের পকেটে ৮০০ টাকা ছিল। টাকা নিয়ে পুরনো এক বিবাদের জেরে মত্ত অবস্থায় পল্লবকে খুন করে বলে জেরায় জানিয়েছে বিশাল।
আরও পড়ুন: ধর্ষণের বিরুদ্ধে ‘নারী-গর্জন’ শহরে
কিন্তু পুলিশ অভিযুক্তের অন্য বন্ধুদের জেরা করে একটি ত্রিকোণ প্রেমের ঘটনাও জানতে পেরেছে। দমদম থানার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘টাকার কথা বলে সম্ভবত অভিযুক্তরা আমাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।’’ রবিবার অভিযুক্তদের ব্যারাকপুর আদালতে পেশ করে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। তাদের জেরা করে জানার চেষ্টা চলছে টাকা না অন্য কোনও কারণ রয়েছে খুনের পিছনে।