চেন্নাই থেকে আসা কলকাতা মেট্রোর এসি রেক নিয়ে টানাপড়েন অব্যাহত।
যান্ত্রিক ত্রুটির অভিযোগ ওঠায় মাসখানেক আগে এসে পৌঁছনো ৪ এবং ৫ নম্বর রেক চেন্নাইয়ে ফেরত পাঠাতে মেট্রো কর্তৃপক্ষ যখন মরিয়া, তখনই অতি সম্প্রতি যষ্ঠ রেকটি শহরে এসে পৌঁছেছে। সেই রেক এখনও দেখে উঠতে পারেননি তাঁরা। চেন্নাইয়ের ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি (আইসিএফ) এবং চিনের ডালিয়ান থেকে আসা রেক মিলে কলকাতা মেট্রোয় এখন নতুন এসি রেকের সংখ্যা সাত। তার মধ্যে সাকুল্যে তিনটি রেক অল্প সময়ের জন্য সারা দিনে চালানো যাচ্ছে বলে অভিযোগ।
নতুন অথচ লাইনে নামানো যাচ্ছে না, এমন রেকের সংখ্যা কারশেডে উত্তরোত্তর বাড়তে থাকায় দৃশ্যতই ক্ষুব্ধ মেট্রো কর্তৃপক্ষ। মেট্রোকর্তাদের একাংশের প্রশ্ন, প্রতি বার একটি করে নতুন রেক পৌঁছনোর পর তাকে যাত্রী-পরিবহণের উপযোগী করতেই যদি বছর ঘুরে যায়, তা হলে পরিষেবা চলবে কী ভাবে? তাঁদের আরও অভিযোগ, নতুন বাতানুকূল রেকের হাজারো ত্রুটি শোধরানোর ঝক্কির পাশাপাশি মেয়াদ ফুরনো নন এসি রেকের রক্ষণবেক্ষণেও যদি নজর দিতে হয়, তবে কোনও দিনই পরিষেবা স্বাভাবিক হবে না।
মেট্রো সূত্রের খবর, গত সপ্তাহের গোড়ায় আইসিএফের ত্রুটিপূর্ণ ৫ নম্বর রেকটিকে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি সেরে ফেলেছিলেন কর্তৃপক্ষ। পূর্ব রেলের সাহায্য নিয়ে নোয়াপাড়া কারশেড থেকে চেন্নাইয়ে রেক ফেরত পাঠানোর বিষয়টি চূড়ান্ত করে ফেললেও শেষ মুহূর্তে আইসিএফ কর্তৃপক্ষ তা ফেরত নিতে বেঁকে বসেন। সূত্রের খবর, এর বদলে কলকাতায় নিজেদের প্রযুক্তিবিদ পাঠিয়ে নতুন এসি রেকের ত্রুটি শোধরানোর প্রস্তাব দিয়েছেন আইসিএফের কর্তারা। যদিও সেই প্রস্তাবে এখনও পর্যন্ত সায় দেননি মেট্রো কর্তৃপক্ষ। ফলে সাময়িক ভাবে থমকে আছে গোটা প্রক্রিয়া।
কিন্তু ত্রুটিপূর্ণ রেকটি আইসিএফ কর্তৃপক্ষ ফেরত নিতে রাজি হচ্ছেন না কেন? মেট্রোর
আধিকারিকদের একাংশের মতে, নিজেদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হতে পারে আশঙ্কা করে ওই রেক ফেরাতে আপত্তি তুলছেন তাঁরা। ওই কারখানায় সম্প্রতি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস বা ট্রেন-১৮র ধাঁচে আধুনিক ট্রেন তৈরি হচ্ছে। সেই ট্রেন নিয়ে তৈরি হওয়া আগ্রহের মধ্যেই সংস্থা সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা যাক, তা হয়তো চাইছেন না কর্তৃপক্ষ। এ প্রসঙ্গে মেট্রোর এক কর্তা বলেন, ‘‘চেন্নাইয়ের ওই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি সাধারণ ট্রেনের কোচ ছাড়াও বন্দে ভারত এক্সপ্রেস তৈরিতে সাফল্য পেয়েছে। কিন্তু সাধারণ ট্রেনের সঙ্গে মেট্রোর গঠনগত এবং প্রযুক্তিগত অনেক ফারাক। সে জন্যই কিছু সমস্যা হচ্ছে।’’
চেন্নাইয়ের ওই কারখানায় মেট্রোর রেক তৈরি হওয়ার পরে তা পরীক্ষা করার মতো আধুনিক পরিকাঠামো নেই বলেও অভিযোগ উঠেছে। ফলে একের পর এক রেক তৈরি করে কলকাতায় পাঠালেও সেগুলির কার্যকারিতা আদৌ পরীক্ষা করা হয় না বলে অভিযোগ মেট্রোকর্তাদের একাংশের। তুলনায় চিন থেকে আসা ডালিয়ানের রেক একাধিক বার পরীক্ষা করা হয়েছে। ফলে ওই রেক যাত্রী পরিবহণের কাজে দ্রুত ব্যবহার করা নিয়ে আশাবাদী মেট্রো কর্তৃপক্ষ।
এক মেট্রোকর্তা বলেন, ‘‘ত্রুটিযুক্ত এত নতুন রেক কারশেডে ফেলে রাখার মতো জায়গা বা পরিস্থিতি কোনওটাই নেই। তাই খুব তাড়াতাড়ি এ নিয়ে সিদ্ধান্তে আসা প্রয়োজন।’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।