Students Counselling

খোলা মনে কথা বলার পরিসর গড়তে পড়ুয়াদের কাউন্সেলিং চান শিক্ষকেরা

মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব মনে করেন, স্কুল থেকেও পড়ুয়াদের অবসাদ আসতে পারে। তিনি বলেন, ‘‘স্কুলের শিক্ষকদের চাপের ফলেও মানসিক অবসাদ তৈরি হয়।”

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৬:১৭
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

প্রতি ক্লাসে রাখা রয়েছে একটি করে ছোট বাক্স। তার গায়ে লেখা, ‘মনের কথা বলো’। শিক্ষকেরা ছাত্রদের জানালেন, চিরকুটে নিজের নাম লিখে, মনের যে কথা যা সে এত দিন বলতে পারেনি, কাউকে সেই কথা লিখে বাক্সে ফেলে দিতে। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানাচ্ছেন, কয়েক দিনের মধ্যেই দেখা গেল, সেই বাক্স উপচে পড়ছে। ওই স্কুল কর্তৃপক্ষের মতে, এই ঘটনা থেকেই বোঝা যাচ্ছে, স্কুলপড়ুয়াদেরও নির্দ্বিধায় মনের কথা বলার একটা পরিসরের একান্ত প্রয়োজন।

Advertisement

পড়ুয়ারা তাদের দিনের অনেকটা অংশ স্কুলে কাটায়। তাদের মানসিক স্থিরতা কেমন, মানসিক স্বাস্থ্য কেমন, কোনও অবসাদে তারা ভুগছে কি না, তা দেখার দায়িত্বও তাই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপরে অনেকটা বর্তায় বলেই শিক্ষামহলের মত। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, স্কুলগুলিতে কি পড়ুয়াদের মানসিক স্থিরতা যাচাই করার মতো পরিকাঠামো রয়েছে?

বেশির ভাগ সরকারি স্কুল জানাচ্ছে, স্কুলে কাউন্সেলর রেখে পড়ুয়াদের কাউন্সেলিং করানোর মতো আর্থিক সামর্থ্য তাদের নেই। শিক্ষক-শিক্ষিকারা মিলেই প্রয়োজনে কাউন্সেলিং করার চেষ্টা করেন। বেলগাছিয়া মনোহর অ্যাকাডেমির শিক্ষিকা সুমনা সেনগুপ্ত জানান, তাঁদের স্কুলের বেশির ভাগ ছাত্র নিম্ন মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে আসে। তাদের পরিবারের নানা ধরনের সমস্যা পড়ুয়াদের মনে অবসাদও তৈরি করে। সুমনা বলেন, ‘‘আমি দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, সে মাদকে আসক্ত। এর কারণ জানতে চাইলে ছাত্রটি জানায়, সম্পর্কের টানাপড়েনের জের সামলাতে গিয়ে সে নেশার খপ্পরে পড়ে গিয়েছে। এমনকি, হাত কাটার চেষ্টা করে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টাও সে করেছে। আমরা কয়েক জন শিক্ষিকা মিলে কাউন্সেলিং করি ওই ছেলেটির।’’

Advertisement

বাঙুরের নারায়ণ দাস বাঙুর মেমোরিয়াল মাল্টিপারপাজ় স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়া বলেন, ‘‘পারিবারিক নানা অশান্তির কারণে পড়ুয়াদের মধ্যে অবসাদ আসতে দেখেছি। সমস্যাটা যেহেতু বাড়ির, অনেক সময়ে তাই আমরা প্রথমে অভিভাবকদের কাউন্সেলিং করার ব্যবস্থা করেছি। সেপ্টেম্বরেই এই কাউন্সেলিং হবে। তার পরে পড়ুয়াদেরও করব। পেশাদার কাউন্সেলরেরাই কাউন্সেলিং করবেন।’’

মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব মনে করেন, স্কুল থেকেও পড়ুয়াদের অবসাদ আসতে পারে। তিনি বলেন, ‘‘স্কুলের শিক্ষকদের চাপের ফলেও মানসিক অবসাদ তৈরি হয়। দশম ও দ্বাদশের বোর্ডের পরীক্ষায় ভাল করার চাপ থেকে মানসিক অবসাদ তৈরি হতে দেখেছি। অবসাদ কাটানোর জন্য স্কুলে কাউন্সেলর দরকার।’’ হিন্দু স্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভ্রজিৎ দত্ত জানান, সরকারি কয়েকটি জায়গায় পড়ুয়াদের কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা আছে ঠিকই, তবে সরকারি স্কুলগুলিতে আলাদা করে কাউন্সেলর রাখার ব্যবস্থা নেই। সেই ব্যবস্থা থাকলে ভাল হয় বলে মত তাঁর।

তবে শহরের অনেক বেসরকারি স্কুলেই রয়েছেন কাউন্সেলর। মডার্ন হাইস্কুল ফর গার্লস, সাউথ পয়েন্ট, ডিপিএস রুবি পার্ক, শ্রীশিক্ষায়তনে রয়েছেন পেশাদার কাউন্সেলরেরা। মডার্ন হাইস্কুল ফর গার্লসের ডিরেক্টর দেবী কর বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের মানসিক অবসাদ মারাত্মক হতে পারে। আমাদের স্কুলে পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্য কেমন আছে, সে বিষয়ে সব সময়ে খেয়াল রাখা হয়। অভিভাবকদের সঙ্গেও কথা বলি সব সময়ে। পরীক্ষায় সবার থেকে ভাল করার চাপ তীব্র হতে পারে। পরীক্ষাকে জীবনযাপনের আর পাঁচটা সাধারণ ঘটনা বলে মনে করতে হবে।’’ সাউথ পয়েন্ট স্কুলের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য কৃষ্ণ দামানি বলেন, ‘‘পারিবারিক সমস্যা, পড়ার চাপই হোক বা সম্পর্কজনিত সমস্যা— পড়ুয়াদের নানা ধরনের মানসিক চাপ থাকে। আগে স্কুলে পড়ুয়াদের বকাঝকা বা সামান্য শাস্তির মাধ্যমেও বোঝানো যেত। এখন সেটা সম্ভব নয়। তাই এখন কাউন্সেলিং করাটা জরুরি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement