প্রতীকী চিত্র।
কোভিড পরিস্থিতিতে কাজ হারিয়েছেন অভিভাবকদের অনেকেই। কিন্তু সন্তানেরা নবম বা দশম শ্রেণিতে পড়ে বলে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী তাঁদের হাতে মিড-ডে মিলের সামগ্রী তুলে দেওয়ার উপায় নেই। সেই কারণে নিজেরাই খাদ্যসামগ্রী কিনে তা নবম ও দশম শ্রেণির ওই সমস্ত দরিদ্র পড়ুয়ার অভিভাবকদের হাতে তুলে দিলেন ব্যারাকপুর মহকুমার কাঁচরাপাড়া হাইস্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা।
সরকারি নিয়মে প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সকলের মিড-ডে মিলের সামগ্রী পাওয়ার কথা। কিন্তু তার উপরের শ্রেণির পড়ুয়ারা এই সুবিধা পায় না। অতিমারির এমন সঙ্কটকালে তাই মিড-ডে মিলের মতো করেই দু’কেজি চাল, সাবান, সয়াবিন ও পেন তুলে দেওয়া হয়েছে নবম ও দশম শ্রেণির প্রায় ১০০ জন পড়ুয়ার অভিভাবকদের হাতে। এর জন্য নিজেরাই চাঁদা তুলেছেন ওই শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা।
করোনার কারণে গত বছর দীর্ঘ সময় লকডাউন ছিল। বহু মানুষই তখন কর্মহীন হয়ে পড়েন। এ বারেও পরিস্থিতি ভাল নয়। কর্মহীন মা-বাবাদের অনেকেরই সন্তান পরীক্ষায় পাশ করে নবম কিংবা দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। তাই এখন আর তারা মিড-ডে মিল প্রাপকদের তালিকায় নেই। এই অবস্থায় পড়ুয়ারা স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানায়, তাদের জন্য কিছু একটা ব্যবস্থা করা হোক।
স্কুলের টিচার ইন-চার্জ তথা ইংরেজির শিক্ষক গৌতম পাল জানালেন, উঁচু ক্লাসের পড়ুয়ারা অনুরোধ করেছিল, তাদের জন্যও মিড-ডে মিলের ব্যবস্থা করতে। গৌতমবাবু বলেন, ‘‘মিড-ডে মিলের পরিমাণ ও প্রাপকের সংখ্যা তো নির্দিষ্ট। অথচ, অনেক পড়ুয়ারই অভিভাবকেরা কাজ হারিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত স্কুলের তরফে আমরাই সিদ্ধান্ত নিই, নবম ও দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হবে। এক প্রাক্তন শিক্ষকও সাহায্য করেছেন।’’
শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, গত মাসে যখন প্রথম বার ওই খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়েছিল, তখন সবাইকে খবর দেওয়া সম্ভব হয়নি। এক শিক্ষক জানান, এমন অনেক পড়ুয়া রয়েছে, যাদের আলাদা কোনও স্মার্টফোন নেই। সকালে তাদের বাবারা সেই ফোন নিয়ে কাজে বেরিয়ে গেলে তারা ক্লাস করতে পারে না। সেই কারণে অনেক সময়ে শিক্ষকেরা রাতে তাদের ক্লাস করান।
আগের বার ফোন না-থাকার কারণেও অনেককে খবর দেওয়া যায়নি। তবে এ মাসে আরও বেশি সংখ্যক অভিভাবকের হাতে খাবার তুলে দেওয়া যাবে বলেই স্কুল কর্তৃপক্ষ আশা প্রকাশ করেছেন।
ওই স্কুলের বাংলার শিক্ষক অপূর্ব সাহা জানান, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের এই
উদ্যোগে খুব খুশি হয়েই সম্মতি দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘এ ভাবে পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়াতে পেরে আমাদেরও ভাল লাগছে। আমরাও চেষ্টা করব, যাতে যত দিন পরিস্থিতি ঠিক না হচ্ছে, তত দিন নবম ও দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করা যায়।’’