যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। —ফাইল চিত্র।
র্যাগিং রুখতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে রাতে পূর্ণ সময়ের এক জন আধিকারিক নিয়োগ করার প্রস্তাব দিলেন অধ্যাপকরা। পাশাপাশি, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার ভার প্রাক্তন সেনাকর্মীদের হাতে তুলে দেওয়ার বিষয়ে তাঁরা যে রাজি নন, সে কথাও জানাল অধ্যাপকদের সংগঠন ‘জুটা’। শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ‘স্টেক হোল্ডার’দের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউ। সেই বৈঠক থেকে বেরিয়ে এ কথাই জানিয়েছে অধ্যাপকদের সংগঠন। র্যাগিং মোকাবিলায় একাধিক প্রস্তাব দিয়েছেন অধ্যাপকরা।
এই প্রসঙ্গে জুটা’র সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘‘রাতের জন্য এক জন পূর্ণ সময়ের আধিকারিককে নিয়োগ করা হোক। জরুরি ভিত্তিতে র্যাগিং এবং অন্যান্য নিরাপত্তার বিষয়টি তিনি দেখবেন।’’ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তা জোরদার করতে প্রাক্তন সেনাকর্মীদের নিয়োগ করতে চান কর্তৃপক্ষ। এই প্রসঙ্গে এক মত হয়নি জুটা। পার্থপ্রতিম বলেছেন, ‘‘প্রাক্তন সেনাকর্মীদের দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে আমরা নীতিগত ভাবে সহমত নই। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার জন্য দক্ষ সিকিউরিটি নিশ্চিত করার অর্থ প্রাক্তন সেনাকর্মী নিয়োগ নয়।’’ অন্য দিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ে সিসিটিভি বসানো নিয়ে ‘আপত্তি’ রয়েছে পড়ুয়াদের একাংশের। এই প্রসঙ্গে পার্থপ্রতিম বলেন, ‘‘নিরাপত্তার স্বার্থে সিসিটিভি বসানো উচিত। এতে কোনও সমস্যা নেই।’’
গত ৯ অগস্ট যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের তিন তলার বারান্দা থেকে এক ছাত্র নীচে পড়ে যান বলে অভিযোগ। পরের দিন ভোরে বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রের মৃত্যু হয়। র্যাগিংয়ের জেরে ওই ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তাঁর পরিবার। থানায় এফআইআর দায়ের করা হয়। তদন্তে নেমে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় প্রাক্তনী এবং পড়ুয়া মিলিয়ে ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। দেশের প্রথম সারির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে র্যাগিংয়ের অভিযোগ ঘিরে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে। র্যাগিং রুখতে পদক্ষেপ করার জন্য উপাচার্যকে একাধিক প্রস্তাব দিল অধ্যাপকদের সংগঠন।
জুটার প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, ‘‘নিয়মিত আলোচনা সভা, ওয়ার্কশপ, পোস্টার, প্রদর্শনীর মাধ্যমে সেন্সেটাইজেশন প্রোগ্রাম চালু রাখতে হবে। প্রথম বর্ষ বা নবাগত পড়ুয়া এবং সিনিয়র ক্লাসগুলির জন্য আলাদা গ্রুপ কাউন্সেলিং করতে হবে। এই কাউন্সেলিং করা হোক হস্টেলেও। সক্রিয় কাউন্সেলিং সেল রাখতে হবে।’’ ভর্তির সময় পড়ুয়াদের যাতে অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি, কাউন্সেলিং সেলের তথ্য দেওয়া হয়, তা সুনিশ্চিত করার কথাও প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে। বিভিন্ন বিভাগ, হস্টেলে সক্রিয় অ্যান্টি র্যাগিং ভলান্টিয়ার রাখার কথাও বলা হয়েছে প্রস্তাবে। হস্টেলগুলিতে সংবেদনশীল এবং সক্রিয় সুপার রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই পদে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী কর্মীকে নিয়োগ করার প্রস্তাব দিয়েছে জুটা। নতুন এবং প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের জন্য আলাদা হস্টেল এবং দ্বিতীয় বর্ষের জন্য আলাদা হস্টেলের ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা র্যাগিং সংক্রান্ত হেল্পলাইন চালু করার কথাও বলা হয়েছে ওই প্রস্তাবে। র্যাগিং-এর ঘটনা প্রমাণিত হলে শাস্তি দিতে হবে— এই প্রস্তাবও দিয়েছে জুটা। এই প্রসঙ্গে প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বের র্যাগিংয়ের ঘটনাগুলি বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে সেই প্রবণতাগুলি নির্মূল করার জন্য পদক্ষেপ করতে হবে।’’ র্যাগিং নির্মূল করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব স্ট্যাটুটরি বডিতে জরুরি ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী সমস্ত স্টেকহোল্ডারদের নির্বাচিত প্রতিনিধি রাখার কথাও জানানো হয়েছে।