—প্রতীকী চিত্র।
বড় প্রশ্নের উত্তর লেখার প্রবণতা কম। শুধু মাল্টিপল চয়েস প্রশ্ন (এমসিকিউ) এবং সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন (শর্ট আনসার টাইপ বা এসএকিউ) লিখেই পাশ নম্বর পেয়ে উতরে যেতে চাইছে সাধারণ মানের পরীক্ষার্থীদের বড় অংশ। উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্টের খাতা দেখে এমনটাই মনে করছেন বহু পরীক্ষক। তাঁদের পর্যবেক্ষণ, এমন পরীক্ষার্থীদের অনেকে বড় প্রশ্নের উত্তর পুরো তো লিখতেই পারছে না। যতটা লিখছে, তাতেও ভুল থাকছে বানান ও বাক্য গঠনে। কেউ কেউ আবার বড় প্রশ্নের উত্তর লেখার চেষ্টাও করছে না। সব দেখে শিক্ষকদের প্রশ্ন, তা হলে কি দীর্ঘ গরমের ছুটি-সহ সারা বছর বিভিন্ন কারণে যত ছুটি থাকে, তার ফলে স্কুলে পড়ানোর যে খামতি রয়ে যাচ্ছে, তারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে খাতায়?
বর্তমান নিয়মে লিখিত পরীক্ষায় পাশ করতে হলে ন্যূনতম ২৪ নম্বর দরকার। শিক্ষকেরা বলছেন, প্রশ্ন এমন থাকে যে, মাল্টিপল চয়েস এবং সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ঠিক মতো লিখতে পারলেই পাশ নম্বর উঠে যায়। বেলগাছিয়া মনোহর অ্যাকাডেমির বাংলার শিক্ষিকা সুমনা সেনগুপ্ত জানান, বাংলা পরীক্ষায় ৩০ নম্বর থাকে এমসিকিউ এবং সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নে। কিছু বিষয়ে আবার এমসিকিউ এবং এসএকিউ থাকে ৪০ নম্বরের। সুমনা জানাচ্ছেন, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস বা বড় প্রশ্ন যেগুলিতে ৫ নম্বর থাকে, সেগুলি পরীক্ষার্থীরা লেখার চেষ্টাই করছে না। কারণ তারা জানে, এমসিকিউ এবং সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর ঠিক লিখলেই পাশ নম্বর উঠে যাবে।
দক্ষিণ কলকাতার এক শিক্ষিকা জানান, বোর্ডের পরীক্ষার মতো অন্য স্কুলে গিয়ে টেস্ট দিতে হয় না। ফাইনাল পরীক্ষার মতো টেস্টে তেমন কড়াকড়িও থাকে না। এতে আর একটি প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে। তা হল, পরীক্ষার সময়ে অন্যকে জিজ্ঞাসা করে এমসিকিউ এবং সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর লেখা। যা দেখে শিক্ষকদের প্রশ্ন, এই ছাত্রছাত্রীরা বোর্ডের পরীক্ষায় এমসিকিউ এবং সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর লিখে পাশ করতে পারবে তো? ইতিহাসের এক শিক্ষিকা জানাচ্ছেন, সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ২০ শব্দের মধ্যে লিখতে হয়। কিন্তু অনেকে চার থেকে পাঁচটি শব্দের মধ্যে কোনও রকমে উত্তর লিখে দিচ্ছে! তবু সেই উত্তর ঠিক হলে পরীক্ষার্থীদের পুরো নম্বরই দিচ্ছেন শিক্ষকেরা।
মিত্র ইনস্টিটিউশন, ভবানীপুর শাখার প্রধান শিক্ষক রাজা দে বলেন, ‘‘এ বারের উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্টের খাতা দেখে একটা বিষয় স্পষ্ট। তা হল, সাধারণ মানের পড়ুয়াদের প্রস্তুতির যথেষ্ট খামতি আছে। পাঠ্যবই খুঁটিয়ে না পড়ে শুধু সহায়িকা বই পড়লে কখনওই তারা ঠিক ভাবে বড় প্রশ্নের উত্তর লিখতে পারবে না। এ-ও দেখা যাচ্ছে, একটু ঘুরিয়ে প্রশ্ন করলে উত্তর লিখতে পারছে না তারা।’’ সেই সঙ্গে রাজা মনে করেন, করোনাকালে দু’বছর স্কুলে পঠনপাঠন হয়নি। স্কুল খোলার পরেও দীর্ঘ গরমের ছুটি-সহ নানা ছুটির জন্য ক্লাস কমে গিয়েছে। ফলে যারা ক্লাসের পড়ার উপরে নির্ভরশীল, তাদের ক্ষেত্রে প্রস্তুতিতে খামতি থেকে যেতে পারে।
‘কলেজিয়াম অব অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস’-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন, ‘‘গত তিন-চার বছর ধরেই মাল্টিপল চয়েস এবং সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর লিখে পাশ করার প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। আমাদের ধারণা, করোনাকালের প্রভাব এখনও পুরো যায়নি। পড়াশোনার সঙ্গে অনেকের যোগাযোগ কমে গিয়েছে। টেস্টে তারা উতরে গেলেও ফাইনালের ফল নিয়ে আশঙ্কা থাকছেই।’’