—প্রতীকী ছবি
স্কুল কবে খুলবে, এই নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, প্রায় সব প্রতিষ্ঠানই যখন খুলে গিয়েছে, তখন স্বাস্থ্য-বিধি মেনে স্কুলই বা খোলা যাবে না কেন? অন্তত উঁচু ক্লাসের পড়ুয়াদের পর্যায়ক্রমে স্কুলে আসার অনুমতি দেওয়ার দাবি বার বারই তুলছে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন। শিক্ষাজগতের বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছে, যে সব পড়ুয়ারা এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক দেবে, তাদের প্র্যাক্টিকাল ক্লাসের জন্য অন্তত স্কুলে আসার অনুমতি দেওয়া হোক। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পড়ুয়ারাও। কিন্তু স্কুল কবে খুলবে তা নিয়ে রাজ্য সরকারের তরফে নির্দিষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “করোনা পরিস্থিতির মধ্যে স্কুল খোলার ক্ষেত্রে পড়ুয়াদের স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।”
এরই মধ্যে মঙ্গলবার কেন্দ্রের নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) ভি কে পল জানিয়েছেন, স্কুল খোলার আগে সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের টিকাকরণ হবে। টিকা দেওয়া হবে তাঁদের বাড়ির সদস্যদেরও। তার পরে প্রয়োজনে বারো থেকে আঠারো বছর বয়সি পড়ুয়াদের টিকাকরণের আওতায় আনতে হবে।
নীতি আয়োগের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন কলকাতার অধিকাংশ স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষিকারা। তাঁরা অনেকেই মনে করছেন, স্কুল খোলার আগে শিক্ষকদের টিকাকরণ হলে সংক্রমণের আশঙ্কা অনেকটাই এড়ানো যাবে। তবে এর সঙ্গে তাঁরা অনেকে আবার মনে করছেন, আশঙ্কা আরও কমাতে শিক্ষকদের পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে স্কুলের পড়ুয়াদেরও টিকাকরণ করা দরকার।
হিন্দু স্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভ্রজিৎ দত্ত মনে করেন, নীতি আয়োগের এই সিদ্ধান্ত একেবারেই ঠিক। তবে শুধু শিক্ষকেরাই নয়, শিবির করে স্কুলে ছাত্রদেরও টিকা দেওয়া দরকার। তিনি বলেন, “স্কুল বন্ধ থাকলেও মিড-ডে মিল বিতরণ-সহ নানা কাজে স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং অন্য শিক্ষকদের স্কুলে আসতে হয়েছে। করোনা যখন রাজ্যে দ্রুত ছড়াচ্ছে সেই সময়ে তাঁরা সংক্রমণের আশঙ্কার কথা অগ্রাহ্য করেই স্কুলে এসেছেন। শিক্ষকদের আগে টিকাকরণ হলে তাঁদের করোনা পরিস্থিতিতে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করার স্বীকৃতি মিলবে। তবে শুধু শিক্ষকদের নয়, সমস্ত শ্রেণির ছাত্রদেরও টিকা দেওয়া দরকার। তা হলেই স্কুলে সুরক্ষার বলয় সম্পূর্ণ হবে।”
যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পরিমল ভট্টাচার্যও মনে করেন, সংক্রমণের আশঙ্কা বৃহত্তর ভাবে কমাতে গেলে সমস্ত পড়ুয়াদেরও টিকাকরণের ব্যবস্থা করতে হবে। পরিমলবাবু বলেন, “ছেলেরা স্কুলে এসে খেলাধুলো করে। একে অপরকে আলিঙ্গন করে। স্কুলে এসে তাদের পক্ষে দূরত্ব-বিধি বজায় রাখা কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। শিক্ষকেরা তবু সচেতন থেকে বিধি মেনে চলার চেষ্টা করতে পারেন। তাই পড়ুয়াদের টিকাকরণও খুবই জরুরি।” বেথুন কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শাশ্বতী অধিকারী বলেন, “শিক্ষকদের কাজের সূত্রে নানা জায়গায় যেতে হয়। আবার স্কুল খুললে তাঁরা পড়ুয়াদের কাছাকাছিও আসবেন। তাই স্কুল খোলার আগে শিক্ষকদের টিকাকরণ খুবই দরকার।”
শিক্ষকদের টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনও। পশ্চিমবঙ্গ সরকারি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু বলেন, “স্কুল তো মূলত পড়ুয়াদের জন্য। তাই শুধু শিক্ষকদের টিকাকরণ করলে হবে না। পড়ুয়াদেরও টিকা দেওয়া দরকার। এর জন্য স্কুল খোলার আগেই বিস্তারিত পরিকল্পনা করা দরকার।’’ সৌগতবাবুর মতে, একসঙ্গে সমস্ত পড়ুয়াকে ডেকে টিকা দেওয়া সম্ভব নয়। তাতে করোনা-বিধি মানা সম্ভব হবে না। তাই এক-একটি শ্রেণির পড়ুয়াদের সেকশন অনুযায়ী নির্দিষ্ট দিনে স্কুলের টিকাকরণ শিবিরে ডাকার পক্ষপাতী তিনি। প্রয়োজনে টানা বেশ কয়েক দিন শিবির করে টিকাকরণ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।