বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে নতুন টালা সেতু নির্মাণের পথেই এগোচ্ছে রাজ্য সরকার। এবং রেলের সঙ্গে যৌথ ভাবেই করা হবে এই কাজ।
শুক্রবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের পরে স্থির হয়েছে, ১৫ দিনের মধ্যে টালা ব্রিজ নিয়ে রিপোর্ট দেবেন পূর্ত দফতর এবং রেল কর্তৃপক্ষ। তার পরে চূড়ান্ত পর্যায়ের কাজ শুরু হবে। প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, নতুন সেতুর কাজ শুরুর এক বছরের মধ্যে তা শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার।
নবান্নের খবর, এ দিনের বৈঠকে স্থির হয়েছে, টালা সেতুর যে-অংশটি রেললাইনের উপরে রয়েছে, সেটির নকশা তৈরি করবেন রেল-কর্তৃপক্ষ। আর সেতুর বাকি অংশের নকশা বানাবে পূর্ত দফতর। আজ, শনিবার রেল এবং পূর্ত দফতরের আধিকারিকেরা টালা সেতু পরিদর্শনে যাচ্ছেন। তার পরে পর্যায়ক্রমে আরও কিছু সমীক্ষার পরে ১৫ দিনের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীকে চূড়ান্ত রিপোর্ট দেওয়া হবে। মাঝেরহাটে সেতুভঙ্গের পরে নতুন সেতু তৈরির সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, টালায় নতুন সেতু তৈরি করতে হবে এক বছরে। প্রশাসনের একাংশের প্রশ্ন, মাঝেরহাট সেতু তৈরিতে এক বছরের সময়সীমা মানা সম্ভব হয়নি। টালা সেতুর মতো বড় পরিকাঠামো সময়সীমা মেনে নির্মাণ করা যাবে কি? সরাসরি জবাব মিলছে না। তবে প্রশাসনের অন্য একটি অংশের বক্তব্য, মাঝেরহাটে নকশায় রেলের অনুমোদন পেতেই অনেক সময় লেগে গিয়েছে। টালায় রেল ও পূর্ত দফতর সমন্বয়ের ভিত্তিতে নকশা তৈরি করবে। সময় নষ্ট হবে না।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
মুখ্যমন্ত্রীর ডাকা এ দিনের বৈঠকে পূর্ত, স্বরাষ্ট্র, পুর দফতর এবং কলকাতা পুরসভার কর্তাদের সঙ্গে ছিলেন কলকাতা ও ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার, রাজ্য পুলিশের ডিজি। পূর্ব রেল এবং শিয়ালদহ ডিভিশনের রেলকর্তারাও ছিলেন।
রেলের সমীক্ষক সংস্থা রাইটস রিপোর্টে জানিয়েছিল, টালা সেতুর স্বাস্থ্য খারাপ। সেখানে গাড়ি চলাচল করতে দেওয়া যাবে না। পরে সেতুর স্বাস্থ্য সমীক্ষা করে সেতু-বিশেষজ্ঞ ভিকে রায়না জানান, গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে বড়জোর দু’মাস চালানো যেতে পারে। কিন্তু নতুন সেতুই গড়তে হবে। তাঁর পরামর্শ মানছে রাজ্য।
কিন্তু সেতু ভাঙলে বিকল্প রুটের ব্যবস্থা করতে হবে। এখন টালা সেতু বন্ধ থাকায় বাস চলছে ঘুরপথে। তাতে কোথাও কোথাও বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ উঠছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, সরকারি বাস রুটের পূর্বনির্ধারিত ভাড়াই নেবে। ঘুরপথে চলার বাড়তি খরচ ভর্তুকি হিসেবে দেবে সরকার।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের প্রশ্ন, ‘‘টালা সেতু ভাঙতে হলে কলকাতার যোগাযোগ ব্যবস্থা ও মানুষের জীবন-জীবিকায় যে-সাঙ্ঘাতিক প্রভাব পড়বে, কী ভাবে তার মোকাবিলা করা হবে? লোকসানের আশঙ্কায় ২৩০ নম্বর রুটের বাস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাতে কাজ হারানো ৮০০ কর্মীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে কী ভাবে?’’ সুরাহার জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়ার দাবি তুলেছেন দিলীপবাবু।