কালীনগরের কাছে এই জলাশয়ের শোচনীয় অবস্থাকেই ডেঙ্গি ছড়ানোর জন্য দায়ী করছেন বাসিন্দারা। নিজস্ব চিত্র
দু’টি মৃত্যু। পুরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডে আক্রান্তের আধিক্য। শেষ বেলায় এ বছর ডেঙ্গি-উদ্বেগের মানচিত্রে নাম উঠল দক্ষিণ দমদমের।
দশমীর ভোরে পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের সুভাষনগরের বাসিন্দা সপ্তমী সরকার (৫৯) ডেঙ্গিতে মারা যান। মঙ্গলবার পরিবারের সদস্যেরা জানান, পঞ্চমী থেকে জ্বরে ভুগছিলেন প্রৌঢ়া। সপ্তমীর দিন চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার সময়ে রাস্তায় মাথা ঘুরে পড়ে যান। পরদিন রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়লে নবমীর দিন সপ্তমীকে বরাহনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ দিন মৃতার ছোট ছেলে রাজু অভিযোগ করেন, পুজোয় চিকিৎসা পেতে হয়রানির শিকার হয়েছেন তাঁরা। তাঁর কথায়, ‘‘মা ছটফট করছে দেখে রাত আটটা নাগাদ অন্যত্র নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বলা হল, রোগীর অবস্থা স্থিতিশীল। রাত আড়াইটে নাগাদ আবার বলা হল, চাইলে অন্যত্র নিয়ে যান!’’ রাজুর আরও অভিযোগ, চালক ছুটিতে থাকায় অ্যাম্বুল্যান্স পেতে দেরি হয়। শেষে দশমীর ভোরে নাগেরবাজারের বেসরকারি হাসপাতালে সপ্তমীকে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে জানান। মৃতার বৌমা কণিকা সরকার বলেন, ‘‘বরাহনগরের হাসপাতালে ঠিক মতো চিকিৎসা হলে মাকে হারাতাম না।’’ যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের বক্তব্য, প্রৌঢ়ার রক্তে শর্করার পরিমাণ অনেক বেশি ছিল। ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট অর্থাৎ শরীরে জলের পরিমাণেও সমস্যা ছিল না।
সপ্তমীর স্বামীও ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁদের বাড়ির কাছে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী পায়েল দাসও আক্রান্ত হয়। পুরসভার খবর, ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে গত ৫ অক্টোবর ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে সৃষ্টি ঘোষ (২২) নামে এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে।
বিগত দিনে ডেঙ্গি আক্রান্তের দিক থেকে শিরোনামে থেকেছে দক্ষিণ দমদম। এ বছর শুরুর দিকে স্বাস্থ্য দফতরের প্রশংসা কুড়োলেও শেষ লগ্নে ছবিটা ভিন্ন। দক্ষিণদাঁড়ি রোড, কালীনগর, নতুন পাড়া, মানসীপাড়ার একটি গলির একাধিক বাড়িতে ডেঙ্গি থাবা বসিয়েছে বলে অভিযোগ। কালীনগরে পুজোর মুখে একই বাড়ির পাঁচ জন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। ওই বাড়ির সদস্য সঞ্জিত তালুকদার বলেন, ‘‘পাড়ার এমন কোনও গলি নেই যেখানে ডেঙ্গি হয়নি।’’ নতুন পাড়ায় একই পরিবারের বাবা-মা-ছেলে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। মানসীপাড়ার বাসিন্দা দীপা দাসও ওই রোগ নিয়ে বরাহনগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এমন পরিস্থিতির জন্য সোনাই খালের মুখে জমে থাকা আবর্জনা এবং স্থানীয় একটি জলাশয়ের শোচনীয় পরিস্থিতিকে কাঠগড়ায় তুলেছেন বাসিন্দারা। তাঁদের বক্তব্য, ডেঙ্গি ছড়ানোর পরে তৎপরতা দেখা গিয়েছে। তার আগে পুর স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা কী করছিলেন?
স্বাস্থ্য ভবনের আধিকারিকদের একাংশ বলছেন, ঘিঞ্জি এলাকায় নজরদারিতে ঘাটতি হলে ডেঙ্গির সংক্রমণ দ্রুত ছড়ায়। যদিও সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে পুরপ্রধান বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ১৭০। তাঁদের ৬০ জনই প্রমোদনগরের। তবে স্বাস্থ্যকর্মীরা সেখানে যে ভাবে কাজ করছেন, তাতে উদ্বেগের কিছু নেই। ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে এক মহিলার মৃত্যু দুর্ভাগ্যজনক। তবে বারবার সাবধান করা সত্ত্বেও ওই পরিবার জল জমিয়ে রাখত। সার্বিক ভাবে এ বছর পুর এলাকায় ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।’’