মৃতা সুমিত্রা মাইতি। —ফাইল ছবি
বিস্ফোরণের মতো বিকট শব্দে আচমকাই চার দিক কেঁপে উঠেছিল। আশপাশের লোকজন ভয়ে বেরিয়ে আসেন রাস্তায়। দেখা যায়, শতাব্দীপ্রাচীন শরিকি বাড়ির একটি অংশ ভেঙে পড়েছে। সেই ঘটনার প্রায় আড়াই ঘণ্টা পরে ধ্বংসস্তূপের নীচ থেকে মিলল ৫৭ বছরের প্রৌঢ়ার রক্তাক্ত দেহ।
মঙ্গলবার রাতে বরাহনগরের এই ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই কিছু প্রশ্ন উঠেছে। রাস্তার সামনে থেকে শুরু হয়ে ‘এল’ আকারে রয়েছে জরাজীর্ণ বাড়িটি। তার মাঝের একটি ঘরের দেওয়াল, ছাদ সব কী ভাবে ভেঙে পড়ল? ওই ঘরটির লাগোয়া বাকি ঘরগুলির কোনও ক্ষতি হয়নি। সেটাই বা কী ভাবে সম্ভব হল? আবার, মৃতা সুমিত্রা মাইতির মেয়ে ঘটনার নেপথ্যে শরিকি বিবাদ ও প্রোমোটারির চক্রান্তের অভিযোগ তুলেছেন। বুধবার ঘটনাস্থলে এসে নমুনা সংগ্রহ করে ফরেন্সিক দল। ব্যারাকপুরের ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ) অজয় প্রসাদ বলেন, ‘‘ঘরে গ্যাসের গন্ধ পাওয়া গেলেও সিলিন্ডার বিস্ফোরণ বা অগ্নিকাণ্ডের চিহ্ন মেলেনি। বারুদেরও গন্ধ ছিল না। ভেঙে পড়ার প্রকৃত কারণ জানতে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা করানো হচ্ছে।’’
বরাহনগর পুরসভার টি এন চ্যাটার্জি রোডে ওই শরিকি বাড়ির একটি ঘরে একা থাকতেন সুমিত্রা। বিভিন্ন বাড়িতে রান্নার কাজ করতেন। মঙ্গলবার রাতে পাড়ার দোকান থেকে ডিম কিনে এনে রান্না বসিয়েছিলেন প্রৌঢ়া। তখনই হুড়মুড়িয়ে কংক্রিটের চাঙড় ভেঙে পড়ে। তাতেই চাপা পড়েন সুমিত্রা। তাঁর মেয়ে মিঠু বিশ্বাস বলেন, ‘‘এই দুর্ঘটনা ঘটানো হয়েছে। কাকা অনেক দিন ধরেই মাকে বাড়ি থেকে বার করে প্রোমোটিং করতে চাইছিলেন। মা রাজি না থাকায় ওঁকে মারধরও করতেন।’’ মিঠুর কাকাও ওই বাড়ির একটি অংশে থাকেন। ঘটনার পর থেকে তাঁরা কেউ বাড়িতে নেই। বরাহনগর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান দিলীপনারায়ণ বসু বলেন, ‘‘এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে পুরসভা থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
এ দিন পুরসভার বোর্ড মিটিংয়ে পূর্ত বিভাগের চেয়ারম্যান পারিষদ অঞ্জন পাল বলেন, ‘‘বিভিন্ন ওয়ার্ডে থাকা জরাজীর্ণ বাড়িগুলি কাউন্সিলরদের মাধ্যমে চিহ্নিত করে, বিপজ্জনক ঘোষণা করা দরকার। সেগুলি খালি করার জন্য অনুরোধের প্রস্তাব রেখেছি। প্রয়োজনে প্রশাসনের সাহায্য নিতে হবে।’’