অস্বাস্থ্যকর: ডেঙ্গিতে মৃত শতাব্দী সাহার (ইনসেটে) বাড়ির পাশে এ ভাবেই জমে রয়েছে জল। মঙ্গলবার, বাগুইআটিতে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
খালের জল না সরার খেসারতই কি দিলেন ডেঙ্গিতে মৃত বাগুইআটির বাসিন্দা তরুণী?
শতাব্দী সাহা নামে ওই তরুণীর মৃত্যু হয় সোমবার বিকেলে। মঙ্গলবার দিনভর তাঁর পাড়ায় এই প্রশ্নই ঘুরপাক খেল। এলাকার অদূরে বাগজোলা বাইপাস-১ খালের নাব্যতা কমে জলস্তর উঠে এসেছে বসতি অঞ্চলের নর্দমার তলের উপরে। এ জন্য পুজোর আগে একাধিক নিম্নচাপে খাল সংলগ্ন বহু এলাকা এক সপ্তাহ ডুবেছিল। তার মধ্যে বিধাননগর পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাগুইপাড়া, গৌতমপাড়া, শচীন্দ্রলাল সরণিও ছিল। গৌতমপাড়াতেই থাকতেন শতাব্দী।
ওই এলাকার নিকাশির জল খালে ফেলতে নর্দমা উঁচু করার কাজ শুরু করেছে পুরসভা। কিন্তু নিচু নর্দমা থেকে জল সদ্য তৈরি উঁচু নর্দমায় যেতে না পেরে অনেক জায়গায় বাড়িতে জমে থাকছে বলে অভিযোগ। সঙ্গে রয়েছে ফাঁকা জমিতে আবর্জনার স্তূপ, এলাকার ভিতরে বেআইনি খাটাল, খোলা পাতকুয়ো। মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ ওই সব এলাকার একাধিক বাড়ির বাসিন্দা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। পুর প্রশাসকমণ্ডলীর স্বাস্থ্য বিষয়ক সদস্য প্রণয় রায় মঙ্গলবার ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে ওই এলাকা পরিদর্শন করেন। বেশ কয়েকটি বাড়ির বাইরে তখন জল জমে ছিল। যা দেখে তাঁর আশ্বাস, ‘‘নিকাশি নালার কাজ শেষ হলে এই সমস্যা মিটবে। তবে শুধু নিকাশি নালার জমা জলের জন্যই মশা হয় না।’’
এ দিন শতাব্দীর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, পিছনে বিরাট ফাঁকা জমি জঙ্গল ও আবর্জনায় ভরে রয়েছে। শতাব্দীর স্বামী সঞ্জয় বলেন, ‘‘বহু বার বলা সত্ত্বেও জায়গাটি পরিষ্কার হয়নি। আশপাশের অনেক বাড়িতে লোকজন ডেঙ্গি আক্রান্ত। আমার তো অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। আট বছরের ছেলে তার মাকে হারাল।’’ স্থানীয় বাসিন্দা মাধুরী বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তাঁর ছেলে সুদীপ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ-এ ভর্তি।
এ দিন বিকেলে প্রণয়বাবু পুরকর্মীদের নিয়ে শতাব্দীদের বাড়িতে যান। কাঁদতে কাঁদতে সঞ্জয়কে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমার মতো ক্ষতি অন্য পরিবারগুলির যেন না হয়, সেটা দয়া করে দেখুন।’’ কথার মাঝেই মশা ঘিরে ধরছিল প্রণয়বাবুদের। তাঁর নির্দেশে সঞ্জয়দের বাড়ির পিছনের ফাঁকা জমি ও আশপাশে ধোঁয়া ও মশার তেল দেন পুরকর্মীরা। জমির মালিককে নোটিস দেওয়া হবে বলেও জানান প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য।
তবে এলাকায় ঘুরে চোখে পড়ল, বাসিন্দাদের গা-ছাড়া মনোভাবও কী ভাবে ডেঙ্গির অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে। ডেঙ্গিতে পাড়ার বাসিন্দার মৃত্যুর খবরে লোকজনের মনে ক্ষোভ ছিলই। এলাকার নিকাশি নালার সমস্যা নিয়ে পুরকর্মীদের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়তেও দেখা যায় দু’-এক জনকে। পুর আধিকারিকদের ডেকে এক মহিলা দেখান, একটি ফাঁকা জমিতে আবর্জনা পড়ে রয়েছে। সেই মহিলার বাড়িতে ঢুকেই আবার পুরকর্মীরা দেখেন চলছে খাটাল। গরুকে স্নান করানোর জন্য রয়েছে খোলা পাতকুয়ো। সেখান থেকে মেলে মশার লার্ভা। পুরসভা নির্দেশ দেয় কুয়োর মুখ বন্ধ করে দিতে। ওই মহিলার বাড়ির পাশেই তাঁদের পারিবারিক একটি জমিও আবর্জনায় ভরে ছিল।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এলাকায় বহু নির্মীয়মাণ বাড়ি রয়েছে। যেগুলির লিফটের ঘরের ভিতরে, নির্মাণস্থলে তৈরি পাতকুয়োর মধ্যে জল জমে থাকে। পুরসভা কেন সে দিকে নজর দেয় না, প্রশ্ন তুলছেন এলাকাবাসী। পরে প্রণয়বাবু বলেন, ‘‘ফাঁকা জমিতে আবর্জনা জমে থাকলে সেটা যদি পুরসভার দায় হয়, তবে ফাঁকা জমিতে আবর্জনা ফেলার দায়ও নাগরিকদের নিতে হবে।’’