প্রতীকী ছবি।
একাধিক হাসপাতাল ঘোরা কোভিড-আক্রান্ত বালকের প্রাণ বাঁচাতে তড়িঘড়ি তার অস্ত্রোপচার করলেন জেনারেল সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকেরাই। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু-শল্য বিভাগে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন একাধিক চিকিৎসক ও নার্স। তাই সেখানকার সাধারণ শল্য বিভাগের চিকিৎসকেরাই বছর সাতেকের ওই বালকের পেট থেকে বার করলেন কৃমি। বৃহদন্ত্রের খানিকটা অংশ বাদ দিয়ে অস্ত্রোপচারের পরে আপাতত সুস্থ সেই বালক। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, দিনকয়েকের মধ্যেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
কয়েক বছর ধরে পেটের যন্ত্রণায় ভুগছিল হাওড়ার পাঁচলার বাসিন্দা সাত বছরের ঈশান লস্কর। স্থানীয় চিকিৎসককে দেখিয়ে মাঝেমধ্যে যন্ত্রণা কমলেও পুরোপুরি উপশম হত না। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৫ জানুয়ারি থেকে পেট ব্যথা বাড়তে থাকে ঈশানের। ক্রমশ পেট ফুলতে শুরু করে। স্থানীয় হাসপাতালে কিছু দিন ভর্তি থাকলেও অবস্থার উন্নতি হয়নি। শেষে ১০ তারিখে রোগীকে নিয়ে আসা হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। সেখানে আল্ট্রাসোনোগ্রাফিতে ধরা পড়ে, ঈশানের খাদ্যনালির মধ্যে দলা পাকানো কৃমি রয়েছে। সেটির কারণেই যত সমস্যা। কিন্তু রোগী যে কোভিডে আক্রান্ত, পরদিন সেটা জানা যেতেই তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু-শল্য বিভাগে। কিন্তু ওই বিভাগের অধিকাংশ ডাক্তার ও নার্স কোভিডে আক্রান্ত হওয়ায় ফের ঈশানকে শহরের আর একটি শিশু হাসপাতালে রেফার করা হয়।
কি ওই বালককে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই পাঠায়। তত ক্ষণে তার অবস্থা সঙ্কটজনক। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের শিশু-শল্য বিভাগ থেকে তৎক্ষণাৎ তাকে রেফার করা হয় জেনারেল সার্জারি বিভাগে। শিক্ষক-চিকিৎসক শিবজ্যোতি ঘোষ এবং অর্কপ্রভ রায় জানাচ্ছেন, কোভিডে আক্রান্ত ওই বালকের প্রাণসংশয় হতে পারে বুঝতে পেরে তাঁরা রাতেই অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ঈশানের পেট কেটে দেখা যায়, বৃহদন্ত্রের কোলনে ৩-৪টি ছিদ্র দিয়ে মল বেরিয়ে পেটে ছড়িয়ে সংক্রমণ হয়ে গিয়েছে। তিন ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে দেড় হাত লম্বা অ্যাস্করিস কৃমিটি বার করে কোলনের নষ্ট হয়ে যাওয়া ১৪ সেন্টিমিটার অংশ বাদ দিতে হয়। চিকিৎসক যশ শর্মার তত্ত্বাবধানে চিকিৎসক অভিষিক্তা মল্লিক, শুচিস্মিতা চক্রবর্তী, অ্যানাস্থেটিস্ট তিয়াসা পাইন ও দেবব্রত রায়-সহ আট সদস্যের চিকিৎসক-দল অস্ত্রোপচারটি করেন। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, সেই মুহূর্তে সংক্রমণের থেকেও তাঁদের কাছে ছেলেটির জীবন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাই সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েও তাঁরা রাতেই অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন।