গত কয়েক দিনে কয়েকটি থানা এলাকায় দিনের বেলা ছোটখাটো অপরাধের ঘটনা তুলনামূলক ভাবে কমেছে। প্রতীকী ছবি।
তীব্র দহনে অপরাধীরাও কি দিনের বেলায় ‘কাজ’ বন্ধ রেখে শুধু রাতের শিফটে ‘কাজ’ করছে?
গত কয়েক দিনে শহরের বিভিন্ন থানায় দায়ের হওয়া চুরি-ছিনতাইয়ের অভিযোগ থেকে দেখা যাচ্ছে, দিনের বেলায় এই ধরনের অপরাধ ঘটেছে কম। বরং, শেষ রাতে ঘটা অপরাধের সংখ্যাই বেশি। তদন্ত করার পাশাপাশি তাই থানার আধিকারিকদের কারও কারও মন্তব্য, ‘‘অপরাধীরা গরমে শিফট বদলেছেন!’’ কেউ আবার বলছেন, ‘‘গরম তো ওঁদেরও লাগছে।’’
বৈশাখের শুরুতে বাইরে কাজে বেরিয়ে তো বটেই, ঘরের ভিতরে বসেও যেন পুড়তে হচ্ছে। সারা দিনের গরমের দাপটে খাওয়াদাওয়ার সঙ্গে ঘুমও লাটে ওঠার জোগাড় মানুষের। পরিস্থিতি যা, তাতে অনেকেই শান্তি বলতে বুঝছেন ভোরের একটু ঠান্ডা হাওয়া। যদিও বেশির ভাগ দিনই সেই হাওয়া মিলছে না। তবু শহরের বেশ কিছু এলাকায় এই সুযোগই নিচ্ছে অপরাধীরা। পুলিশ সূত্রের খবর, হাওয়ার খোঁজে দরজা-জানলা খুলে ঘুমোনো গৃহস্থের ঘর থেকে কখনও মোবাইল গায়েব হচ্ছে, কখনও উধাও হচ্ছে ল্যাপটপ, ঘড়ি-সহ দামি জিনিসপত্র। দিনে এমন অপরাধ ঘটার অভিযোগ না এলেও ভোরের দিকে এমন একাধিক ঘটনা সামনে এসেছে। গরফা থানা এলাকায় দিনকয়েক আগে এক দম্পতির ল্যাপটপ, মোবাইল চুরি গিয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘দোতলার ফ্ল্যাটে গরমের জন্য জানলা খুলে রেখেছিলাম। রাতে ওই ভাবেই ঘুমিয়ে পড়ি। সকালে উঠে দেখি জানলার পাশে রাখা মোবাইল, ল্যাপটপ উধাও।’’
একাধিক থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কয়েক দিনে কয়েকটি থানা এলাকায় দিনের বেলা ছোটখাটো অপরাধের ঘটনা তুলনামূলক ভাবে কমেছে। তবে রাতে, বিশেষ করে ভোরের দিকে নানা চুরির ঘটনার অভিযোগ এসেছে গল্ফ গ্রিন, রিজেন্ট পার্ক, চারু মার্কেট, হরিদেবপুর-সহ দক্ষিণের একাধিক থানা এলাকা থেকে। রিজেন্ট পার্ক থানার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘রোজই কিছু না কিছু টুকটাক হচ্ছে। ভোরের দিকে এই ধরনের অপরাধ হচ্ছে। আমরা নজরদারি বাড়িয়েছি।’’ আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, তদন্তে নেমে দেখা যাচ্ছে, ভোরের দিকের সুযোগই মূলত কাজে লাগাচ্ছে অপরাধীরা। সারা দিনের গরমের ক্লান্তিতে ঘুমোনোর জন্য অনেকেই দরজা বা জানলা খুলে রাখছেন। তখনই কাজ হাসিল করছে অপরাধীরা। সাউথ-ইস্ট ডিভিশনের একটি থানার এক আধিকারিক আবার গরমের জন্য সন্ধ্যায় বা রাতে বাড়ি ছেড়ে আশপাশের খোলা জায়গায় সময় কাটানোকেই দায়ী করছেন।
তবে সামগ্রিক ভাবে গত কয়েক মাসে শহরে চুরি কমেছে বলেই জানাচ্ছেন লালবাজারের আধিকারিকেরা। এমনকি, এই ধরনের অপরাধের সংখ্যা গত কয়েক মাসে অর্ধেকে নামিয়ে আনা গিয়েছে বলে দাবি করছেন এক আধিকারিক। তাঁর কথায়, ‘‘গত কয়েক মাসে এমন অপরাধের সংখ্যা মাসে ৪০ থেকে ৫০-এর মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। যা আগের থেকে অনেক কম।’’