শিশুর শরীরে জুড়ে অপরিণত যমজ, বাদ অস্ত্রোপচারে

নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু শল্য বিভাগে অস্ত্রোপচার করে যমজ সন্তানের অপরিণত অংশ বাদ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২০ ০২:১৪
Share:

এ ভাবেই জন্মেছিল শিশুটি। নিজস্ব চিত্র

চারটি পা, দু’টি যৌনাঙ্গ, দু’টি পেট এবং কোমর নিয়ে জন্মেছিল শিশু দু’টি। যমজ সন্তানের মধ্যে এক জনের শারীরিক গঠন স্বাভাবিক। তার সঙ্গে যে জন জুড়ে রয়েছে, তার কিডনি, ক্ষুদ্রান্ত্র থাকলেও মাথা, বুক ও হাত গঠন হয়নি। পেটের অংশ জুড়ে ছিল অন্য জনের পেটের সঙ্গে। নতুন বছরের প্রথম দিনে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু শল্য বিভাগে অস্ত্রোপচার করে যমজ সন্তানের অপরিণত অংশ বাদ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। হাসপাতাল সূত্রের খবর, এনআরএসের এসএনসিইউ (সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট) বিভাগে চিকিৎসাধীন ওই শিশু আপাতত স্থিতিশীল। তবে বিপদ সম্পূর্ণ কাটেনি।

Advertisement

এই ধরনের শিশুদের চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় ‘প্যারাসিটিক টুইন’। যমজ ঠিকই, কিন্তু এক জনের শরীরে অন্য জনের আংশিক গঠন হওয়া কিছু অঙ্গ পরজীবীর মতো জুড়ে থাকে। মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা এই সদ্যোজাতের ক্ষেত্রে এমনটাই দেখা গিয়েছে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, মাসখানেক আগে ওই শিশুর জন্ম হয়। সদ্যোজাতের অস্বাভাবিক গঠন দেখে সাত দিন পরে তাকে এন আর এসের শিশু শল্য বিভাগে আনা হয়। তখন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি। শেষ পর্যন্ত বুধবার শিশু শল্য বিভাগের প্রধান কৌশিক সাহার নেতৃত্বে পূর্ণ গঠিত দেহ থেকে অপরিণত অংশগুলি আলাদা করতে অস্ত্রোপচার শুরু করেন চিকিৎসক অরিন্দম ঘোষ, দিব্যরূপ দত্ত প্রামাণিক, অ্যানাস্থেটিস্ট মৌসুমী সাহা এবং মোহন মণ্ডল। অস্ত্রোপচারের পরে এসএনসিইউ বিভাগের প্রধান চিকিৎসক অসীম মল্লিকের তত্ত্বাবধানে রয়েছে শিশুটি।

বুধবার আড়াই ঘণ্টা ধরে চলে এই অস্ত্রোপচার। তবে চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ওই সদ্যোজাতের হৃৎপিণ্ডেরও সমস্যা রয়েছে। দু’টি অলিন্দ, দু’টি নিলয় মিলিয়ে হৃৎপিণ্ডে স্বাভাবিক ভাবে চারটি ভাগ থাকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে শিশুটির একটি নিলয় রয়েছে। পরবর্তী ক্ষেত্রে হৃৎপিণ্ডেরও অস্ত্রোপচার করতে হবে।

Advertisement

আরও পড়ুন: বিধি ভাঙা আর বিশৃঙ্খলাতেই কাটল বছর শেষের রাত

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, মুর্শিদাবাদের ঘটনাটি প্রথম নয়। কিন্তু সংখ্যার নিরিখে এ ধরনের শিশুর জন্মের উদাহারণ খুব কমই রয়েছে। চিকিৎসক অসীম মল্লিকের কথায়, ‘‘১০ লক্ষের মধ্যে এক জনের এমন সন্তান হয়।’’ তিনি জানান, কনজয়েনড টুইনের একটি ভাগ প্যারাসিটিক টুইন। কনজয়েনড টুইনের ক্ষেত্রেও যমজ সন্তানের শরীর জোড়া থাকে। কিন্তু দুই সন্তানের মাথা, হাত, পা, হৃৎপিণ্ড এবং অন্য সব অঙ্গ থাকে। অসীমবাবু বলেন, ‘‘গর্ভে ভ্রূণ ধারণের তিন সপ্তাহের মধ্যে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিকাশ শুরু হয়। প্যারাসিটিক টুইনের ক্ষেত্রে যখন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গড়ে ওঠে তখন যমজ সন্তানের এক জনের শরীরের বিকাশ বন্ধ হয়ে যায়। শরীরের এই বাড়তি অংশ সাধারণত ক্ষতিকর নয়।’’ কেন এমন হয়, তা নিয়ে চিকিৎসাশাস্ত্রে স্পষ্ট কোনও ব্যাখ্যা নেই বলে জানাচ্ছেন তিনি। তবে গর্ভবতী অবস্থায় মায়ের শরীরে রক্ত সরবরাহ কোনও ভাবে বাধাপ্রাপ্ত হলে এটি হতে পারে বলে মত চিকিৎসকদের।

বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত এনআরএসের এক অভিজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদের বাচ্চাটির ক্ষেত্রে পেটের কাছে বাদ দিয়ে অপরিণত অংশটি আলাদা করা হয়েছে। এখন শিশুটিকে এসএনসিইউয়ে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। হৃৎপিণ্ডের অস্ত্রোপচারও জরুরি। সদ্যোজাত বিপন্মুক্ত হলে কার্ডিয়োলজি বিভাগের সঙ্গে কথা বলে তার ব্যবস্থা করা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement