হাতেনাতে: লকডাউনের মধ্যে রাস্তায় বেরিয়ে পুলিশের প্রশ্নের মুখে পড়লেন এক ব্যক্তি। বৃহস্পতিবার, বিমানবন্দরের কাছে। নিজস্ব চিত্র
একাধিক আনলক-পর্বের পরে ফের এক দিনের সার্বিক লকডাউন কতটা সফল হবে, তা নিয়ে সংশয়ী ছিলেন অনেকেই। তবে নিয়ম ভাঙার বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনাকে বাদ দিলে মোটের উপরে বৃহস্পতিবার সারা দিনই ঘরবন্দি হয়ে রইলেন শহরবাসী। উত্তর থেকে দক্ষিণ, কলকাতার অধিকাংশ রাস্তাঘাটই ছিল প্রায় ফাঁকা। কঠোর ভাবে লকডাউন বলবৎ করতে দিনভর পুলিশকেও টহল দিতে দেখা গিয়েছে পাড়ায় পাড়ায়।
নিয়ম ভাঙাটা সাধারণত যাঁদের অভ্যাস, এ দিন তাঁরাও পুলিশি কড়াকড়ির মুখে অকারণ বড় রাস্তায় বেরোননি। তবে নিয়ম ভাঙার ঘটনা যে ঘটেনি, তা বলা যাবে না। দূরত্ব-বিধি অনেক জায়গাতেই মানা হয়নি বলে অভিযোগ। আড্ডা, তাস খেলা, মাস্ক ছাড়া ঘুরে বেড়ানো— সবই চলেছে, তবে তুলনায় কম।
এ দিন সকাল থেকেই তৎপর ছিল পুলিশ। থানার আধিকারিকেরা তো বটেই, পথে নেমেছিলেন লালবাজারের শীর্ষ কর্তারাও। মোড়ে মোড়ে নাকা তল্লাশির পাশাপাশি ড্রোন উড়িয়ে নজরদারিও চালানো হয়েছে। মাস্ক ছাড়া কাউকে দেখে সটান বাড়ি পাঠিয়ে দিতেও দেখা গিয়েছে পুলিশকে। বেশ কিছু ট্র্যাফিক সিগন্যালে অকারণে বেরিয়ে ধরা পড়া গাড়ির ছবি তুলে রেখেছে পুলিশ। বেরোনোর উপযুক্ত কারণ জানাতে না পারলেই ওই ছবির সঙ্গে গাড়ির নম্বর, সময় ও স্থান উল্লেখ করে তা পাঠানো হয়েছে থানায়। সেখান থেকেই তা যাবে আদালতে।
এ দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত লকডাউনের বিধিভঙ্গের অভিযোগে ৮৮৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মাস্ক না-পরার জন্য মামলা করা হয়েছে ৫৫২ জনের বিরুদ্ধে। প্রকাশ্যে থুতু ফেলার অভিযোগে ৪০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আর অপ্রয়োজনে বেরোনোয় আটক করা হয়েছে ৩০টি গাড়ি। বিধাননগর পুলিশও এ দিন ২২০টি গাড়ি ও ১৬৯টি বাইক তল্লাশি করেছে। বিধিভঙ্গের অভিযোগে ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনটি গাড়ি ও পাঁচটি বাইক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
এ দিন দুপুরে শ্যামবাজার মোড়ে একই মোটরবাইকে সওয়ার তিন যুবককে দাঁড় করানোয় পুলিশকে তাঁরা বলেন, “রাত ১০টার পরে লকডাউন নেই। তখন বেরোলে খাবার পাব না, তাই এখনই কিনতে যাচ্ছি।” একসঙ্গে তিন জন কেন? উত্তর দিতে না পারায় তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় শ্যামপুকুর থানায়। বেহালা চৌরাস্তার কাছে একটি গাড়িতে যাচ্ছিলেন ছ’জন। পুলিশকে তাঁরা জানান, এক জনের ছেলের বিয়ের পাকা কথা ছিল। মেয়ের বাড়ি থেকে ফিরছেন। যদিও থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ওই ছ’জন একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী। অফিস ছুটি থাকায় নিউ টাউনে এক বন্ধুর ফ্ল্যাটে রাতের খাওয়াদাওয়ার পরিকল্পনা হয়েছিল। সেখানে যাওয়ার পথেই তাঁরা ধরা পড়েন।
আরও পড়ুন: শুরু হবে লকডাউন, কাকভোরেই বিমানবন্দরে হাজির যাত্রীরা
নিউ টাউনে আবার নাকা তল্লাশিতে ধরা পড়া মাস্কহীন দুই ব্যক্তি পুলিশকে জানিয়েছেন, বাঙুর থেকে তাঁরা গিয়েছিলেন লটারির টিকিট কাটতে!
গড়িয়াহাট বাজারের এক দোকানির বক্তব্য, “লকডাউন মানুষের গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে। একটু দাঁড়ালেই দেখতে পাবেন, কত লোক আসছেন।” দোকান খোলা কেন, জানতে চাওয়ায় যদুবাবুর বাজারের এক দোকানি আবার বললেন, “করোনা সকলের মধ্যেই আছে। ভেবে লাভ নেই।” মানিকতলা বাজারে আবার মাস্ক ছাড়াই তাস খেলায় ব্যস্ত এক ব্যক্তি। তাঁর যুক্তি, “মাস্ক তো শুধু দূরে যেতে হলে পরতে হয়!”
রাজবল্লভপাড়ার এক গলিতে ভিড় দেখে তেড়ে গিয়েছিলেন শ্যামপুকুর থানার এক পুলিশকর্মী। এক ব্যক্তি ভিড়ের মধ্যে থেকেই চেঁচাতে শুরু করেন, “পুলিশ কত ক্ষণ থাকবে! পুলিশ চলে গেলেই আবার বসব।” তাঁকে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময়ে ওই ব্যক্তি বলতে থাকেন, “স্যর, আমার কিন্তু করোনা হয়েছিল। ভেবেচিন্তে গায়ে হাত দেবেন!” রাতে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
কসবায় বৃদ্ধা স্ত্রীর হাত ধরে হাঁটতে থাকা এক বৃদ্ধ আবার বললেন, “আমরা কিন্তু আইন ভাঙতে বেরোইনি। আমাদের ছেলেমেয়ে নেই। ওষুধ কিনতে বেরিয়েছি।” পুলিশই তো বয়স্কদের বাড়িতে ওষুধ পৌঁছে দিচ্ছে? বৃদ্ধ বললেন, “কয়েক দিন এনে দিয়েছে। আজ পুলিশ লকডাউন নিয়ে ব্যস্ত।”
শনিবারই ফের লকডাউন। সে দিনও কি নিয়ম মানার কথা মনে করাতে হবে পুলিশকেই? লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধি অনেকটাই নির্ভর করছে এই উত্তরের উপরে।