স্মৃতি: একডালিয়া এভারগ্রিনের ক্লাবঘরে চেয়ারে রাখা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের ছবি। সোমবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
যাওয়া তো নয় যাওয়া।
গোঁফের নীচে লেগে রয়েছে চির পরিচিত হাসি। ক্লাবঘরের ভিতরে রাখা টেবিলের লাগোয়া চেয়ারে সেই হাসিমাখা মুখের ছবি। এ ঘরের বাইরে দেওয়ালে ঝুলছে তাঁর নামের ফলক। গত এক বছর তিনি ক্লাবে পা রাখেননি। কিন্তু একডালিয়া এভারগ্রিনের পুজোয় এ বছরেও ছত্রে ছত্রে জড়িয়ে রয়েছেন তিনি, চিরসবুজ সুব্রত মুখোপাধ্যায়।
আজ, মঙ্গলবার বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একডালিয়া এভারগ্রিনের পুজো উদ্বোধন করার কথা। তার আগে, সোমবার দুপুরে ওই মণ্ডপ চত্বরে গিয়ে বোঝা গেল, এ বারেও সেখানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন প্রয়াত কয়েক দশকের দুঁদে রাজনীতিকই।
সন্তোষপুর থেকে গড়িয়াহাটে পুজোর বাজার করতে আসা দীপক চৌধুরীর কথায়, ‘‘সুব্রতবাবু ছাড়া একডালিয়ার পুজো কেমন হয়, সেটাও এ বার দেখার। প্রতি বার সন্ধ্যার পরে একডালিয়ার পুজোয় এসে দেখেছি, রাস্তার পাশের মঞ্চে উনি বসে রয়েছেন। ওঁর মৃত্যুটা সত্যিই খুব আকস্মিক।’’ আবার স্থানীয় এক চা-বিক্রেতার কথায়, ‘‘পুজো হবে, অথচ দাদা থাকবেন না, এটা ভাবাই যায় না। আমরা ধরে নিচ্ছি, উনি কলকাতার বাইরে গিয়েছেন।’’
সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতিতে একডালিয়ায় কিছু করতে উদ্যোগী হয়েছে কলকাতা পুরসভা। মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘শনিবার ক্লাবে গিয়ে সুব্রতদার ছবি দেখে চোখে জল এসে গিয়েছিল। প্রতি বার পুজোর সময়ে ডাকতেন। যেতাম, কত গল্প হত। একডালিয়ার পুজো হচ্ছে, অথচ সুব্রতদা নেই, ভাবা যায় না।’’
এই থাকা এবং না থাকার মধ্যেই একডালিয়ার পুজোয় এ বার সুব্রত ভীষণ রকম জীবন্ত। থিমের পুজোর যুগেও বুক ফুলিয়ে বরাবর সাবেক প্রতিমা, সাবেক মণ্ডপ, ঝাড়বাতির কাজের উপরে বাজি ধরেছেন সুব্রত। কিন্তু তার জন্য পুরস্কার কমেনি। সুরুচি সঙ্ঘ, চেতলা অগ্রণী, শ্রীভূমি কিংবা বোসপুকুরের মতো থিম-নির্ভর পুজোর সঙ্গে প্রতি বছর পাল্লা দিয়ে লোক টেনেছে সুব্রতের চিরসবুজ একডালিয়া। এ বার তিনি নেই। কিন্তু সুব্রতের ‘মায়ের পুজো’র দর্শনে বিশ্বাস রেখে দর্শক টানার প্রতিযোগিতায় নামতে চলেছে একডালিয়া।
ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ স্বপন মহাপাত্রের কথায়, ‘‘আমরা সুব্রতদার হাতেই তৈরি। পুজো কী ভাবে করতে হয়, ওঁর থেকেই শেখা। পুজোর যে কোনও কাজে সবাইকে নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতেন। ওঁর পার্থিব শরীরটা নেই। কিন্তু পুজোর সবটা জুড়ে উনি রয়েছেন। এ বার পুজো আমাদের কাছেও চ্যালেঞ্জ।’’
উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, ৫০ বছর ধরে ক্লাব ও পুজোর সভাপতি ছিলেন সুব্রত। এ বার সেই দু’টি পদই দেওয়া হয়েছে তাঁর স্ত্রী ছন্দবাণী মুখোপাধ্যায়কে। পুজোয় প্রতি বছর সুব্রত সকালে স্নান সেরে এসে সঙ্কল্পের সময়ে শুদ্ধ বস্ত্রে প্রতিমার সামনে বসতেন। উপোস করে অঞ্জলি দিতেন। সন্ধ্যায় মণ্ডপ চত্বরের মঞ্চে ধুতি-পাঞ্জাবি পরে বসতেন। ভোগের পদ কী হবে, তা নিয়েও মতামত দিতেন। ছন্দবাণী বলছেন, ‘‘সুব্রতের অভাব তো অনুভব করবই। তবে পুজোকে যে ভাবে দেখার, সে ভাবেই দেখছি।’’
ক্লাবের তরফে জানানো হয়েছে, সুব্রতকে পুজোয় দর্শকদের সামনে হাজির করতে এ বার প্রতিমার সামনে তাঁর বসার আসনটি পাতা হবে। সেটির উপরে রাখা থাকবে সুব্রতের ছবি। সামনে প্রতীকি দক্ষিণাও রাখা হবে। মণ্ডপ চত্বরেও রাখা থাকবে নানা শিরোনাম লেখা সুব্রতের ছবি। হাসিমুখের ছবি।