অন্য পাঠ: চলছে পাখির বাসা তৈরির কর্মশালা। নিজস্ব চিত্র।
এই শহরের বুক থেকে হারিয়ে যাচ্ছে তারা। সংখ্যা বাড়ছে মানুষের। কাটা পড়ছে গাছ। ফলে কমে যাচ্ছে তাদের থাকার জায়গা।
শহরে এখনও যত গাছ মাথা তুলে আছে, তার বেশির ভাগের ডালে এ বার ঝুলিয়ে দেওয়া হবে পাখির বাসা। স্কুলের ভিতরে। স্থানীয় এলাকার গাছে। সেই বাসা বানাবে স্কুলপড়ুয়ারাই।
বুধবার থেকে স্কুলে স্কুলে শুরু হয়েছে পাখির বাসা বানানোর এক দিনের সেই কর্মশালা। পুরো পরিকল্পনায় রয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্যবিদ্যা বিভাগ। ওই বিভাগ সূত্রের খবর, বুধবার কর্মশালা শুরু হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জোকার সন্তোষী মা স্কুলে। শহরের একশোটি স্কুলের এমন কর্মশালা থেকে প্রায় ছ’হাজার বাসা তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।
জানা গিয়েছে, এই ভাবনাচিন্তার শুরু প্রাক্-করোনার দিনে। স্থির হয়, মানুষের নিত্যদিনের অপ্রয়োজনীয় কিছু সামগ্রী দিয়েই পাখির বাসা বানানো হবে। তার মধ্যে রয়েছে যেমন জুতোর বাক্স, তেমনই রয়েছে দড়ি, খবরের কাগজও। নিউ টাউনেরএকটি এলাকার এমনই বর্জ্য থেকে পাখির বাসা তৈরির কথা প্রথম ভাবে একটি আবাসন নির্মাণ সংস্থা। যোগাযোগ করা হয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্যবিদ্যা বিভাগের সঙ্গে।
তবে পুরো উদ্যোগ থমকে যায় মাঝের দু’বছরে। গত মে মাসে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও তিনটি প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়াদের নিয়ে একটি কর্মশালা হয়। সেখানেই ওই সব আবর্জনা থেকে পাখির বাসা তৈরি করা হয়। স্থাপত্যবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপিকা মধুমিতা রায়ের কথায়, “স্কুলের পড়ুয়াদের এই উদ্যোগে শামিল করতে পারলে এই কর্মকাণ্ড অনেকটাই ছড়িয়ে দেওয়া যাবে।”
গাছে বাসা ঝুলিয়ে দিলেই যে পাখি আসবে, এমনটা নয়। সব পাখির এক ধরনের বাসাও হয় না। প্রতিটি পাখির চাহিদা আলাদা। আবার দড়ি, কাগজের তৈরি বাসা বর্ষায় নষ্ট হতে পারে। মধুমিতা জানান, ভুলের মধ্যে দিয়েই শিখতে হবে। এটা দীর্ঘ পদ্ধতি। এক দিনের কর্মশালায় শেষ হবে না। বর্ষার শেষে গাছে বাসা লাগানো শুরু হবে। তার মধ্যেই শহরের একশো স্কুলে কর্মশালা করে প্রায় ছ’হাজার বাসা তৈরি করা সম্ভব।
জানা গিয়েছে, প্রায় একশো স্কুলের সঙ্গে কথা হয়েছে যাদবপুরের স্থাপত্যবিদ্যা বিভাগের। প্রতিটি কর্মশালায় ওই বিভাগের দু’জন পড়ুয়ার মেন্টর হিসেবে থাকার কথা। স্কুলের দু’জন করে শিক্ষক তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন। যে কোনও বয়সি পড়ুয়াই কর্মশালায় যোগ দিতে পারে। তাদের থেকে বিভিন্ন ভাবনা আসতে পারে বলে মত অধ্যাপকদের।
মধুমিতা বলেন, “১৫ জুলাইয়ের মধ্যে একশো স্কুলে কর্মশালা করা আমাদের লক্ষ্য। গরমের ছুটির মেয়াদ বেড়ে যাওয়ায় দেরি হচ্ছে। আমাদের সাহায্য করছে আরও একটি সংস্থা।”
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।