নিয়ম মতো মাসের মাঝামাঝি ছুটি পড়লে অর্ধেক মাসের টাকাটা পাওয়া যেত।’’ হিমাদ্রিবাবুর আশঙ্কা, এর পরে যদি ফের করোনার চতুর্থ ঢেউ চলে আসে, তা হলে আবার স্কুল খোলা নিয়েই তৈরি হবে অনিশ্চয়তা।
ফাইল চিত্র।
গরম থাক বা না থাক, এ বার একেবারে বিজ্ঞপ্তি জারি করে কলকাতার বেসরকারি স্কুলগুলিকে গরমের ছুটি দিতে নির্দেশ দিল রাজ্য শিক্ষা দফতর। তারা জানিয়েছে, প্রয়োজনে অনলাইন ক্লাস নিতে পারবে স্কুলগুলি। শুধু রবীন্দ্র জয়ন্তীর উদ্যাপন অফলাইনে করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
শুক্রবার কলকাতা জেলা স্কুল পরিদর্শকের তরফে এই মর্মে বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয় বেসরকারি স্কুলগুলিতে। অধিকাংশ বেসরকারি স্কুলের অধ্যক্ষেরাই জানিয়েছেন, প্রশাসনের তরফে প্রথমে গত বুধবার ফোনে বলা হয়েছিল, গরমের ছুটি ঘোষণা করতে হবে। বৃহস্পতিবার বিকাশ ভবনে অধ্যক্ষদের সঙ্গে বৈঠকে একই নির্দেশ দেওয়া হয়। আর শুক্রবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হল সেই
নির্দেশ। অধ্যক্ষদের মতে, আবহাওয়া যেমনই থাক, সরকারের লিখিত নির্দেশ অমান্য করে আর স্কুল খোলা রাখা সম্ভব নয়। তাই অধিকাংশ স্কুলই এ দিন অনলাইন ক্লাসে ফিরে গিয়েছে। কিছু স্কুল অবশ্য এ দিনও অফলাইন ক্লাস করিয়েছে।
মডার্ন হাইস্কুল ফর গার্লসের ডিরেক্টর দেবী করের বক্তব্য, এই অবস্থায় স্কুল বন্ধ করা ছাড়া উপায় নেই। ছুটির আগে এ দিনই শেষ অফলাইন ক্লাস নিয়েছেন তাঁরা। সোমবার থেকে অনলাইন ক্লাস, গরমের ছুটির আগে পর্যন্ত। শ্রীশিক্ষায়তনের মহাসচিব ব্রততী ভট্টাচার্য জানালেন, তাঁদের স্কুলেও গরমের ছুটির আগে অনলাইনে ক্লাস হবে। তবে রবীন্দ্র জয়ন্তীর অনুষ্ঠান স্কুলেই হবে।
ফের অনলাইন ক্লাস শুরু হওয়ায় হতাশ অভিভাবকেরাও। ‘ইউনাইটেড গার্ডিয়ান্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর রাজ্য সম্পাদক সুপ্রিয় ভট্টাচার্যের মতে, ‘‘তাপপ্রবাহ কমে গিয়ে পরিস্থিতি এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। সরকারের উচিত, গরমের ছুটি বাতিল করে সব স্কুল খুলে দেওয়া। আমরা এ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে
আবেদন করব।’’ ‘অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস’-এর রাজ্য সম্পাদক চন্দন মাইতি বলেন, ‘‘আমরা সরকারি স্কুল খোলার যে অনুরোধ করেছিলাম, শিক্ষা দফতর তা বিবেচনা তো করলই না, উল্টে বেসরকারি স্কুলও বন্ধ
করে দিল।’’
চন্দনবাবু জানান, কাল, রবিবার বিদ্যাসাগর অলিম্পিয়াড পরীক্ষা নেবে শিক্ষা দফতর। নবম ও দশমের পড়ুয়ারা মেধার ভিত্তিতে এই
পরীক্ষায় বসে। সময়, বেলা ১২টা থেকে বিকেল তিনটে। চন্দনবাবুর প্রশ্ন, ‘‘গরমে পরীক্ষা দিতে নবম ও দশমের পড়ুয়ারা যদি আসতে পারে, সিবিএসই এবং সিআইএসসিই বোর্ডের
পরীক্ষা যদি চলতে পারে, রবীন্দ্র জয়ন্তী যদি অফলাইনে হতে পারে, তা হলে ক্লাস হবে না কেন? শিক্ষা দফতর এ নিয়ে স্ববিরোধিতায় ভুগছে বলে মনে হয়।’’
গরমের ছুটি তাড়াতাড়ি পড়ায় স্কুলবাস ও স্কুলগাড়ির কর্মীদের চিন্তা, মে মাসের টাকা আদৌ মিলবে তো? ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল কন্ট্র্যাক্ট ক্যারেজ ওনার্স অ্যান্ড অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক হিমাদ্রি গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, ‘‘দীর্ঘ দু’বছর পরে অফলাইনে ক্লাস শুরু হয়েছিল। পুলকার ও বাসমালিকদের নিয়মিত উপার্জন হচ্ছিল। মে মাসের
গোড়াতেই গরমের ছুটি পড়ে যাওয়ায় এ মাসের টাকাটা কি তাঁরা পাবেন? নিয়ম মতো মাসের মাঝামাঝি ছুটি পড়লে অর্ধেক মাসের টাকাটা পাওয়া যেত।’’ হিমাদ্রিবাবুর আশঙ্কা, এর পরে যদি ফের করোনার চতুর্থ ঢেউ চলে আসে, তা হলে আবার স্কুল খোলা নিয়েই তৈরি হবে অনিশ্চয়তা।