হাতেকলমে: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় স্কুলপড়ুয়ারা। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
দুধে ভেজাল মেশালে কী ভাবে তা ধরা পড়বে, বিশ্ব উষ্ণায়নের কুপ্রভাব কী, কী ভাবে খুব সহজ পদ্ধতিতে রান্নাঘরের ধোঁয়া বাইরে বার করে দেওয়া যায়, কী ভাবে রান্না করলে খাদ্যের পুষ্টিগুণ ধরে রাখা যায়, এমনই নানা বিষয় দর্শকদের সামনে ছাত্রছাত্রীরা তুলে ধরল ‘আচার্য সত্যেন্দ্রনাথ বসু স্মারক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায়’।
হেদুয়া পার্কে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ আয়োজিত ওই মেলায় ছাত্রছাত্রীরা তাদের বিজ্ঞানের নানা মডেল নিয়ে হাজির হয়েছিল। হাতেকলমে মডেলের সাহায্যে মেলায় আসা দর্শকদের সহজ ভাবে নানা জিনিস বোঝাচ্ছিল তারা। পশ্চিমবঙ্গের ৮০টি বিদ্যালয়, কলেজ,
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীরা এই মেলায় অংশ নিয়েছে।
ডাফ হাইস্কুল ফর গার্লসের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী অরা বসু দেখাচ্ছিল দুধের মধ্যে জল মেশালে কী ভাবে সহজেই ঘরোয়া পদ্ধতিতে ধরা সম্ভব। অরা বলে, ‘‘আজকাল ভেজাল দুধের ঘনত্ব ঠিক রাখতে গুঁড়ো সাবান ব্যবহারেরও অভিযোগ ওঠে। দুধে গুঁড়ো সাবান কী ভাবে ধরা পড়বে তা-ও বোঝা যাবে খুব সহজ পদ্ধতিতে।’’ অরার মতে, মানুষ যদি একটু সচেতন হন, তা হলে দৈনন্দিন খাবারে ভেজল আছে কি না ধরতে পারবেন এবং আরও সুস্থ জীবন যাপন করতে পারবেন।
অরাদের কাছে একটি স্টলে আবার সৌর বাইক তৈরি করে দর্শকদের দেখাচ্ছিলেন শুভময় দত্ত নামে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র। শুভময়ের দাবি, পরিবেশবান্ধব এই সৌর মোটরবাইক ব্যাটারিচালিত মোটরবাইকের থেকে আরও অনেক দ্রুত গতিতে চলবে।
অভিনব এক ক্রেনের মডেল তৈরি করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সারদাপ্রসাদ ইনস্টিটিউশনের কয়েক জন ছাত্র। এই ক্রেন দিয়ে কী ভাবে সহজেই ভারী জিনিসপত্র তোলা যায় তা মডেলের সাহায্যে ব্যাখ্যা করছিল তারা। আবার মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন মেনের পড়ুয়ারা তৈরি করেছে এমন এক যন্ত্র যা দিয়ে রান্নাঘরের ধোঁয়া খুব সহজেই বার করা যায়। ওই স্কুলের এক ছাত্র বলে, ‘‘রান্নাঘরে ধোঁয়া বার করার জন্য এখন চিমনি ব্যবহার করা হয়। এই সব চিমনির অনেক দাম। আমাদের মডেলের মাধ্যমে যে যে প্রযুক্তি দেখিয়েছি তাতে খুব সহজেই এই ধোঁয়া বার করা যায়।’’
শিশুদের মধ্যে মোবাইল ব্যবহারের প্রভাব থেকে শুরু করে সিগারেটের অপকারিতা, সবই সহজ ভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছিল পড়ুয়ারা। উষ্ণায়নের নানা কুপ্রভাবের সঙ্গে এর জেরে যে মশার লার্ভাও বৃদ্ধি পেতে পারে, সহজ ভাবে বুঝিয়ে
দিচ্ছিল বেথুন কলেজিয়েট স্কুলের কয়েক জন ছাত্রী।
শুধু আধুনিক প্রযুক্তি নয়, পুরনো দিনের হারিয়ে যাওয়া অনেক কিছু দেখানো হয়েছে এই প্রদর্শনীতে। যেমন দেখানো হয়েছে পুরনো দিনের রেডিয়ো। সেই রেডিয়ো কী ভাবে কাজ করত তা ব্যাখ্যা করে দেখানো হয়েছে। দেখানো হয়েছে ক্যামেরার বিবর্তনও।
এ সব স্টলের পাশেই রবিবার সন্ধ্যায় আবার টেলিস্কোপে দেখানো হচ্ছিল শুক্রগ্রহ। আবার পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চে বিজ্ঞানের উপর
প্রশ্নোত্তর চলছিল।
রবিবার সন্ধ্যায় মেলায় এসেছিলেন বিড়লা তারামণ্ডলের অধিকর্তা দেবীপ্রসাদ দুয়ারী। তিনি বলেন, ‘‘এই ধরনের মেলা সাধারণ মানুষের মধ্যে শুধু বিজ্ঞান সচেতনতাই তৈরি করে না, তাঁদের বিজ্ঞানমনস্কও করে তোলে। নাগরিকদের যুক্তি দিয়ে কোনও বিষয়কে বোঝাতে শেখায়। এক জন যুক্তবাদী মানুষ এর ফলে কুসংস্কার মুক্ত হন। যা খুব জরুরি।’’
বিজ্ঞান মঞ্চের সহ সভাপতি তপন সাহা বলেন, ‘‘শুধু স্কুল, কলেজের ছাত্রছাত্রীই নয়, এখানে বিভিন্ন গবেষণা সংস্থাও অংশ নিয়েছে। বিজ্ঞান নিয়ে সচেতনতা তৈরি করা ও বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করে তুলছে এই মেলা।’’