লন্ডভন্ড: স্কুলে ভাঙচুরের পরে। বৃহস্পতিবার, হাওড়ায়। নিজস্ব চিত্র
পরীক্ষার প্রস্তুতি ভাল হয়নি। তাই পরীক্ষা ভন্ডুল করতে রীতিমতো দলবল তৈরি করে রাতের অন্ধকারে তালা ভেঙে স্কুলে ঢুকে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ উঠল এক ছাত্রের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, দশম শ্রেণির ওই ছাত্রের নেতৃত্বে পাঁচ জনের একটি দল প্রধান শিক্ষকের ঘরে ঢুকে লকার খুলে কাগজপত্র নষ্ট করার পাশাপাশি ল্যাবরেটরিতে রাখা মাইক্রোস্কোপ, কম্পিউটার, প্রিন্টার-সহ স্কুলের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় নথি ভেঙে নষ্ট করে আগুন দিয়ে দিয়েছে। শুধু তাই নয় পাশের একটি ক্লাবেও ব্যাপক ভাঙচুল চালানোর অভিযোগ উঠছে তাদের বিরুদ্ধে।
বুধবার গভীর রাতে হাওড়ার বেলগাছিয়া এলাকার বেনারস রোডের নেতাজি বিদ্যায়তন উচ্চমাধ্যমিক স্কুল ও তার পাশেই একটি ক্লাবে ঘটনাটি ঘটেছে। ঘটনায় পুলিশ দশম শ্রেণির দুই পড়ুয়া-সহ এক স্কুলছুট কিশোরকে গ্রেফতার করেছে। যার মধ্যে একজন ওই স্কুলেরই ছাত্র। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের পরে পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার রাতের ঘটনায় আরও দু’জন জড়িত। ঘটনার পরেই তারা গা-ঢাকা দিয়েছে। অভিযুক্তেরা এলাকায় নানা অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গিয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, স্কুলে সেকেন্ড টার্ম পরীক্ষা চলছে। বৃহস্পতিবার ছিল অঙ্ক পরীক্ষা। ধৃত ছাত্রকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গিয়েছে, মূলত অঙ্ক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র খুঁজতেই তারা প্রধান শিক্ষকের ঘরে ঢুকেছিল। কিন্তু তা না পাওয়ায় পুলিশি তদন্তের মোড় যাতে অন্য দিকে ঘোরানো যায় তাই প্রধান শিক্ষকের ঘর, টিচার্স রুমে থাকা কাগজপত্র ও কম্পিউটারে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। লকার থেকে সাড়ে চারশো টাকাও চুরি করা হয়। যাতে প্রাথমিক ভাবে মনে হয় বেশি টাকা না পাওয়ায় কোনও দুষ্কৃতী দল রাগে এই কাজ করেছে। এমনকি তদন্তকারীদের প্রথমে তেমনটাই মনে হলেও দুপুরের মধ্যে সেই ভুল ভেঙে যায় ঘটনার মূল পাণ্ডা ওই স্কুলেরই এক ছাত্র গ্রেফতার হওয়ায়।
আরও পড়ুন: চোর সন্দেহে যুবককে ‘মারধর’ মেডিক্যাল পড়ুয়াদের
প্রশ্ন উঠেছে, পাশের ক্লাবে কেন ওই দলটি ভাঙচুর করল? হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘ক্লাবে বসে নেশা করার অভিযোগে ওই ছাত্র এবং তার সঙ্গীদের ক্লাব কর্তৃপক্ষ কয়েক মাস আগে বের করে দেন। বুধবার রাতে সেই রাগ থেকেই ক্লাবে ভাঙচুর চালায় ধৃতেরা।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন ভোরে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের ঘর থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখে এলাকার লোকজন দমকলে খবর দেন। খবর দেওয়া হয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক ভোলানাথ কেশরিকে। ঘটনাস্থলে আসেন স্থানীয় কাউন্সিলর তথা হাওড়া পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) ভাস্কর ভট্টাচার্য। দমকলের একটি ইঞ্জিন আধঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নেভায়। স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুমান, ২ লক্ষ টাকারও বেশি অঙ্কের ক্ষতি হয়েছে। শিক্ষক ও ছাত্রদের উপস্থিতির খাতা-সহ বেশ কিছু প্রয়োজনীয় নথিও নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: খাটের তলায় শিশুর দেহ, ধৃত মা
স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলের যে ছাত্রকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে সে স্কুলে অনিয়মিত ছিল। পড়াশোনা করত না। অভিভাবকদের ডেকে পাঠালেও তাঁরা আসতেন না। প্রস্তুতি ভাল না হওয়ায় পরীক্ষা ভন্ডুল করতেই এই কাজ করেছে।’’