পুজোর মরসুমে গড়িয়াহাট থেকে ধর্মতলা, গোটা শহরেই সাধারণ মানুষের ঢল। শহরের বড় পুজো সামলাতে তৈরি হচ্ছিল পুলিশও। কিন্তু তার মধ্যেই ছন্দপতন ঘটল মঙ্গলবার দুপুরে। এক্সাইড-এর কাছের আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু কলেজের ঘটনায়। ভিড় সামলানোর বদলে কলেজে তাণ্ডব চালানো পড়ুয়াদের সামলাতে লাঠিসোটা নিয়ে ছুটতে হল পুলিশকে।
তখন কলেজের ভিতরে কার্যত তাণ্ডব চালাচ্ছেন একদল পড়ুয়া। দাবি, শূন্য আসন না থাকলেও নিয়ম ভেঙে শুধু তাঁদের ইচ্ছায় ভর্তি করতে হবে ১৮৯ পড়ুয়াকে! সেই ‘দাবি’ নিয়েই গবেষণাগারে ভাঙচুর থেকে শুরু করে শিক্ষকদের চেয়ার ভাঙার সাক্ষী থাকল কলেজ।
তবে পুলিশকে কার্যত হার মানতে হল পড়ুয়াদের কাছে। কারণ শুধু স্টাফ রুমেই নয়, প্রধান দরজায় ভিতর থেকে তালা ঝুলিয়ে দিলেন তাঁরা। দরজার একটু ফাঁকা করা জায়গা দিয়ে ভিতরে ঢুকতে দেওয়ার জন্য পড়ুয়াদের বোঝাতে থাকেন অ্যাসিস্ট্যান্ট পদ মর্যাদার এক পুলিশ কর্তা। বহু বোঝানোর পরে বাছাই করা কয়েক জন পুলিশকে ভিতরে ঢুকতে দেন পড়ুয়ারা।
তাঁদের দাবি কী? কলেজে অনলাইনে প্রথম বর্ষের বিএ, বিএসসি, বিকমে ভর্তির প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে মাস খানেক আগেই। এর মধ্যেই ফের ছাত্র ভর্তি করাতে চেয়ে গত শনিবার থেকে আন্দোলন শুরু করেছিলেন ছাত্র সংসদের নেতারা। কলেজের তরফ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয় গত ২৩ অগস্ট স্নাতকের প্রথম বর্ষের ভর্তির প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। রেজিস্ট্রেশনও শেষ হয়ে গিয়েছে গত সোমবার। ফলে আর কোনও ভাবেই ভর্তি সম্ভব নয়। কিন্তু এই দাবিতে সোমবারও শিক্ষকদের একাংশকে ঘেরাও করে রাখা ছিল বলে অভিযোগ।
কী হয়েছিল মঙ্গলবার? কলেজের শিক্ষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, ছাত্রদের দাবি মেনে আদৌ ভর্তি করা সম্ভব কি না সেটা নিয়েই এ দিন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন কলেজের অধ্যক্ষ যশোধরা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই বৈঠকে থাকা এক শিক্ষক মহম্মদ আবসার আলির দাবি, ওই বৈঠকে কোনও রফাসূত্র না বের হওয়ার পর ক্ষেপে যান পড়ুয়ারা। প্রথমে একতলার শ্রেণিকক্ষ থেকে ভাঙচুর শুরু হয়। শিক্ষকদের টেবিল থেকে কাগজপত্র ফেলে দেওয়া হয়। চারতলার প্রতিটি ঘরে ভাঙচুর চালানো হয়। অধ্যক্ষর ঘরে ঢুকে তাঁর সামনেই চেয়ার তুলে মাটিতে আছড়ে ফেলা হয়েছে বলে জানান এক শিক্ষক। ভাঙচুর করা হয় এক শিক্ষিকার গাড়িও। এক শিক্ষক মহম্মদ আফসার আলি জানান, প্রতি বছরই ভর্তি শেষের পর অতিরিক্ত আসনে ইউনিয়নের কোটায় কিছু পড়ুয়া ভর্তি করা হয়। এ বছরও ২২৩টি আসন এ ভাবেই ভর্তি হয়েছে। কিন্তু তার পরেও অতিরিক্ত ১৮৯টি আসনে ছাত্রভর্তির দাবি তোলেন ইউনিয়নের নেতারা। আসন সমস্ত ভর্তি হয়ে যাওয়ায় তা আর সম্ভব নয় জানালে ওই ছাত্রনেতারা ভাঙচুর শুরু করেন।
তখন প্রায় বিকেল তিনটে। আশেপাশের শপিং মল থেকে পুজোর কেনাকাটা করে বাড়ি ফিরছেন অনেকে। কিন্তু প্রত্যেকেই কলেজের সামনে এসে থমকে যাচ্ছেন। ভিতর থেকে স্লোগানের শব্দ। তখন পুলিশে ঠায় দাঁড়িয়ে কলেজের বাইরে।
শিক্ষকদের প্রত্যেকেরই অভিযোগ, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কর্মীরাই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। কলেজ থেকে বের হওয়ার সময়ে অধ্যক্ষার সংক্ষিপ্ত জবাব, ‘‘ইউনিয়নের ছেলেরাই করেছে।’’ যদিও সংগঠনের সভানেত্রী জয়া দত্ত সাফ বলে দেন, ‘‘এই ঘটনায় আমাদের টিএমসিপির কেউ যুক্ত নয়, এমনকী ওই কলেজে টিএমসিপির ইউনিটই নেই। কেউ টিএমসিপির নাম করে ভাঙচুর করলেই সে টিএমসিপি সদস্য হয়ে যায় না।’’ পরিচালন সমিতির সভাপতি কাউন্সিলর সুস্মিতা ভট্টাচার্য চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পুজোর উদ্বোধনে ব্যস্ত রয়েছেন। গণ্ডগোলের কথা শুনে তিনি বলেন, ‘‘যা হয়েছিল তা মিটে গিয়েছে, সিদ্ধান্তও হয়ে গিয়েছে।’’ কী সিদ্ধান্ত তা নিয়ে অবশ্য মুখ খুলতে চাননি তিনি।