college street

বই-খাতা বাইরে থেকে কেনার দাবিতে আন্দোলন

অভিভাবকদের একাংশের বক্তব্য, স্কুল থেকে বই কিনলে দামে কোনও ছাড় পাওয়া যায় না।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২১ ০৩:০১
Share:

সাশ্রয়কর: কলেজ স্ট্রিট থেকে ছাড়ে বই কেনার অনুমতি চাইছেন বেসরকারি স্কুলের পড়ুয়াদের অভিভাবকেরা। ফাইল চিত্র

স্কুল থেকে নয়, বাইরের দোকান থেকে বই-খাতা ও স্টেশনারি সামগ্রী কেনার অনুমতি চেয়ে এ বার সরব হয়েছেন অভিভাবকেরা। এ নিয়ে শুরু হয়েছে তাঁদের গণস্বাক্ষর অভিযানও।

Advertisement


অভিভাবকদের একাংশের বক্তব্য, স্কুল থেকে বই কিনলে দামে কোনও ছাড় পাওয়া যায় না। ফলে পড়ুয়ারা নতুন ক্লাসে ওঠার পরে বই-খাতা কিনতে গিয়ে যে পরিমাণ টাকা তাঁদের খরচ হয়, তার থেকে অনেক কম টাকা খরচ করে বাইরের কোনও দোকান বা কলেজ স্ট্রিট থেকে বই-খাতা কেনা যায়। তাঁরা জানিয়েছেন, করোনা অতিমারির মধ্যে এমনিতেই অনেকের আর্থিক অবস্থা বেশ সঙ্গিন। তাই বাইরে থেকে বই-খাতা কেনার অনুমতি পেলে তাঁদের সুবিধা হয়।


সঞ্জয় পাল নামে বারুইপুরের এক বাসিন্দা জানালেন, তাঁর দুই ছেলেমেয়ে একটি বেসরকারি স্কুলে পড়ে। প্রতি বছর তাদের জন্য স্কুল থেকে বই কিনতে গিয়ে প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়। সঞ্জয়বাবু বললেন, “স্কুল বাইরে থেকে বই-খাতা কেনার অনুমতি দেয় না। অথচ, বইয়ের দামে একটি টাকা ছাড়ও দেয় না। ওই সমস্ত বই কলেজ স্টিট থেকে কিনলে ১০ বা ১৫ শতাংশ ছাড় পেতাম। অন্তত দু’হাজার টাকার মতো বাঁচত আমার।’’ সঞ্জয়বাবু জানান, তিনি একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। করোনা পরিস্থিতির জন্য তাঁর বেতন ৩০ শতাংশ কমে গিয়েছে। তাঁর এখন যা আর্থিক অবস্থা, তাতে দুই থেকে তিন হাজার টাকা বাঁচাতে পারলে খুবই ভাল হত।

Advertisement


সম্প্রতি বারুইপুর ও উল্টোডাঙায় গণস্বাক্ষর অভিযান করেছেন অভিভাবকেরা। তাঁদেরই এক জন পলাশ মিত্র জানান, তাঁর এক ছেলে একটি বেসরকারি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। পলাশবাবু বলেন, “শুধু বই-খাতা নয়, জুতো, ব্যাগ, সোয়েটার, এমনকি রং পেনসিল, সেলোটেপ— সবই স্কুল থেকে কিনতে হয়। প্রতি বছর এই বাবদ আমার সাত-আট হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়। এত সব জিনিস বাইরে থেকে কিনতে পারব না কেন?” পলাশবাবু জানান, তাঁর ছেলের আগের রং পেনসিল এখনও শেষ হয়নি। তা-ও এ বছর তাঁকে ফের রং পেনসিল কিনতে বাধ্য করা হয়েছে। একটি বেসরকারি স্কুলের এক পড়ুয়ার অভিভাবক অরূপ রায় জানালেন, স্কুল থেকে তাঁর মেয়ের জন্য নামী সংস্থার তিন হাজার টাকা দামের জুতো কিনতে বাধ্য করা হয়েছে। ওই অভিভাবক বলেন, “বই-খাতা না হয় স্কুল থেকে কিনে দিলাম। কিন্তু আমার মেয়েকে তিন হাজার টাকা দামের জুতো কেন কিনে দিতে হবে? অত দামি জুতো কিনে দেওয়ার সামর্থ্য আমার নেই। স্কুল কেন জুতো বিক্রি করবে?” অভিভাবকদের দাবি, পড়ানোর নামে স্কুলের এই ব্যবসা বন্ধ করতে হবে।


অভিভাবকেরা স্কুল থেকে বই-খাতা কেনার সময়ে কোনও ছাড় না পেলেও স্কুলগুলি কিন্তু বইয়ের ডিস্ট্রিবিউটরের কাছ থেকে বই কেনায় বড় রকম ছাড় পায়। এমনটাই জানালেন কলেজ স্ট্রিটের কিছু প্রকাশক। তাঁরা জানালেন, স্কুলগুলি যে হেতু একসঙ্গে অনেক বই কেনে, তাই তারা অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ ছাড় পায়।


অভিভাবকদের একাংশের অভিযোগ, স্কুলগুলির তরফে বইয়ের যে তালিকা প্রতি বছর দেওয়া হয়, অনেক সময়েই তার মধ্যে কিছু বই এমন থাকে, যেগুলি বাইরের কোনও দোকানে পাওয়া যায় না। তাঁদের অভিযোগ, ইচ্ছে করেই তালিকায় ওই সমস্ত বই রাখা হয়, যাতে বাইরে থেকে কেউ সে সব কিনতে না পারেন। অভিভাবকদের একটি সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক সুপ্রিয় ভট্টাচার্য বললেন, “স্কুল থেকে বই, খাতা, পেন, পেনসিল-সহ সব ধরনের স্টেশনারি কেনা বাধ্যতামূলক যাতে না হয়, তার দাবিতে যে স্বাক্ষর অভিযান চলছে, তা শেষ হলে আমরা ফের শিক্ষামন্ত্রীর দ্বারস্থ হব। করোনার জেরে অভিভাবকদের অনেকেরই আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ। এই পরিস্থিতিতে স্কুল যদি বই-খাতা ও স্কুলের অন্যান্য জিনিসপত্র বাইরে থেকে কেনার অনুমতি দেয়, তা হলে তাঁরা খুবই উপকৃত হবেন।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বেসরকারি স্কুলের অধ্যক্ষ অবশ্য বললেন, “অভিভাবকদের অনেকেই বাইরে থেকে বই-খাতা কেনার ঝামেলা পোহাতে চান না। তাই আমরা স্কুল থেকেই সে সব বিক্রি করি। তবে আমাদের স্কুল থেকে রং পেনসিল, জুতো, ব্যাগ— এ সব বিক্রি করা হয় না। কিছু কিছু স্কুল করে বলে শুনেছি। এটা অনুচিত।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement