দীর্ঘদিনের আইনি জটিলতার জটে অবশেষে বন্ধ হয়ে গেল সেন্ট্রাল মডার্ন স্কুল। প্রতিবাদে বুধবার সকাল থেকে বেকবাগান মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন স্কুলের ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকেরা।
বেলা গড়াতেই পরিস্থিতি জটিল আকার নিতে শুরু করে। অবরোধের জেরা কার্যত স্তব্ধ হয়ে পড়ে বেকবাগান, এজেসি বসু রোড সংলগ্ন এলাকা। বিক্ষোভকারীদের ছোঁড়া ইঁটের আঘাতে আহত হন বেনিয়াপুকুর থানার অতিরিক্ত অফিসার- ইন-চার্জ অলোক সরকার। শুধু তাই নয়, উত্তেজিত জনতার ছোঁড়া ইঁটে জখম হয় এক স্কুল পড়ুয়াও।
স্কুলের জমি সংক্রান্ত একটি মামলা সুপ্রিম কোর্টে প্রায় দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে চলে আসছিল। গত ২০০৫ সালে রাজ্য সরকারকে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয় স্কুলকে অন্য কোনও একটি জমি দেওয়ার। সেই থেকে প্রায় ১০ বছর কেটে গেলেও কোনও সুরাহা হয়নি জমি সংক্রান্ত এই সমস্যার। বুধবার সকালে বন্ধ স্কুলের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয় পুলিশ। নোটিশে জানানো হয় বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। ছাত্রছাত্রীরা জানান, এদিন স্কুলে একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা ছিল সপ্তম, অষ্টম এবং নবম শ্রেণিরও। পরীক্ষা দিতে এসে পড়ুয়ারা দেখেন পুলিশে ছয়লাপ সারা স্কুল এলাকা। বন্ধ হয়ে গিয়েছে স্কুল।
স্কুলে ঢোকার অনুমতি মেলেনি পড়ুয়া এবং শিক্ষক শিক্ষিকাদেরও। প্রিন্সিপালও বসে রয়েছেন স্কুলের চত্বরে। স্কুলের প্রিন্সিপাল সুরিন্দর কপূর জানান, সরকারের গড়িমসিতেই এইদিন দেখতে হল। দীর্ঘদিনের সমস্যা মেটাতে আমরা প্রশাসনিক সর্বস্তরে যোগাযোগ করেছিলাম। বিক্ষোভরত অভিভাবকদের কথায়, এভাবে কোনও জানান না দিয়ে পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার কোনও অধিকার নেই। এতদিন জানা সত্ত্বেও কেন কোনও ব্যাবস্থা নেওয়া হয়নি প্রশ্ন তুলেছেন পড়ুয়ারাও। এই ঘটনার প্রতিবাদেই মধ্য কলকাতায় সকাল থেকে অচলাবস্থা তৈরি করেছেন পড়ুয়া সহ বিক্ষোভকারীরা। পরিস্থিতি রক্তাক্ত হতে দেখে এলাকায় নেমেছে পুলিশের বিশাল বাহিনী।
পরিস্থিতিকে প্রতিকূল করে তোলার পিছনে স্থানীয় বাসিন্দাদের মদত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন অভিভাবকেরা। এক অভিভাবক বলেন, ‘‘সকাল থেকেই পড়ুয়ারা এবং অভিভাবকেরা শান্তিপূর্ণ ভাবেই বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলাম। আশেপাশের এলাকা থেকে কিছু লোক এসে অবস্থা জটিল করে তোলে।’’ অভিভাবক নয়, ওই এলাকাবসীদের ইঁটের আঘাতেই আহত হয়েছে পুলিশ এবং পড়ুয়া, এমনটাই দাবি তাঁদের।
স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, গত মাসের ২৬ তারিখ রাজ্য সরকার অন্য একটি জমিতে উঠে যাওয়ার নির্দেশ পাঠায় স্কুলের কাছে। কিন্তু সেই সময় পরীক্ষা চলায় অন্যত্র চলে আসার মতো পরিস্থিতি ছিল না বলেই দাবি সুরিন্দরবাবুর। তিনি বলেন, ‘‘আমরা সময় চেয়েছিলাম, একটা সম্পূর্ণ অন্য পরিকাঠামোতে যেতে যথেষ্ট সময় লাগে। আমাদের সেই সময়টাই দেওয়া হয়নি।’’
বেলা বাড়তে অবশ্য যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে খানিক। এলাকায় উত্তেজনা থাকলেও পর্যাপ্ত পরিমাণে পুলিশও মোতায়েন রয়েছে।