school

School students: অচেনা নিজের স্কুলটাই, বদলেছে ছাত্রছাত্রীদের মানসিকতাও

প্রধান শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, অনেকের কাছে স্কুল ও তার পরিবেশ নতুন ঠেকছে। বিশেষ করে কচিকাঁচাদের কাছে।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২২ ০৮:২৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

অতিমারি আবহে শিক্ষকদের কাছে পড়াশোনা ছিল। তবে ছিল না ক্লাসরুম, ব্ল্যাকবোর্ড। ছিল না স্কুলের ঘণ্টার আওয়াজ। কম্পিউটার বা ল্যাপটপের স্ক্রিনেই চলত পড়াশোনা। নতুন শিক্ষাবর্ষে এপ্রিলের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে খুলেছে বেসরকারি স্কুলগুলির দরজা। তবে স্কুলের শিক্ষক, প্রধান শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, অনেকের কাছে স্কুল ও তার পরিবেশ নতুন ঠেকছে। বিশেষ করে কচিকাঁচাদের কাছে, যারা ২০২০ সালে নার্সারি ওয়ানে ভর্তি হয়েছিল। গত দু’বছর অনলাইনেই পড়াশোনা করেছে তারা, স্কুলের মুখ দেখেনি। ২০২০ সালে অন্য স্কুল থেকে এসে ভর্তি হওয়া অনেকের কাছেও নিজের স্কুল রয়ে গিয়েছে অচেনা।

Advertisement

রানিকুঠির জি ডি বিড়লা স্কুলের সামনে বাবার হাত ধরে হাপুসনয়নে কাঁদছিল প্রথম শ্রেণির এক পড়ুয়া। তার বাবা বললেন, ‘‘এই স্কুলেই মেয়ে দু’বছর ক্লাস করেছে অনলাইনে। সে কারণে স্কুলবাড়ির পরিবেশ ওর কাছে পুরোপুরি অচেনা। তাই ঢুকতে চাইছে না।’’ এমনকি, অনলাইনে যে শিক্ষক-শিক্ষিকারা ক্লাস করিয়েছেন, তাঁদের সামনে থেকে দেখে প্রথমে ভাল করে চিনতেই পারেনি ওই খুদে পড়ুয়া!

সিনিয়র সেকশনের কিছু পড়ুয়ার কাছেও নিজের স্কুল নতুন ঠেকছে। নিউ আলিপুরের দীপশিখা দত্ত ২০২০ সালে ডিপিএস রুবি পার্কে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল। দু’বছর অনলাইনে ক্লাস করার পরে এই প্রথম স্কুলে গেল সে। দীপশিখা বলছে, ‘‘অষ্টম থেকে নবম শ্রেণিতে ওঠার অফলাইন পরীক্ষা দিতেই শুধু স্কুলে এসেছিলাম। স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে, অনলাইনেই। কিন্তু যেন নতুন করে বন্ধুত্ব পাতাতে হচ্ছে। শিক্ষকদেরও যেন সামনাসামনি নতুন করে চিনছি। আমার স্কুল যে এত বড়, তা স্কুলে না এলে তো বুঝতেই পারতাম না।’’

Advertisement

তবে দু’বছর পরে স্কুলে ফিরে খুশি বেশির ভাগ পড়ুয়াই। সাউথ পয়েন্ট স্কুলের জুনিয়র সেকশনের প্রিন্সিপাল দলবীর কৌর চাড্ডার মতে, ‘‘দু’বছর পরে অফলাইন ক্লাস শুরু হওয়ায় অনেকেই খুশি। তবে কিছু অসুবিধা তো হচ্ছেই পড়ুয়াদের, বিশেষত নিচু শ্রেণির বাচ্চাদের। সেই হুটোপুটি কোথায়? অনেকে চুপচাপ বসে আছে।’’ শ্রীশিক্ষায়তনের মহাসচিব ব্রততী ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘পড়ুয়াদের মধ্যে অফলাইন ক্লাসের উৎসাহ খুবই বেশি। তবে কিছু পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। পড়ুয়ারা দু’বছর বাড়িতে বসে থাকায় খেলাধুলো কম করেছে। সে জন্যই হয়তো কিছু পড়ুয়া যতটা লম্বা হবে ভেবেছিলাম, ততটা লম্বা হয়নি।’’ তবে অফলাইন ক্লাস শুরু হলেও অনলাইন ক্লাস এখনই পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে না বলে জানাচ্ছেন শ্রীশিক্ষায়তন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

প্রিন্সিপালেরা জানালেন, সব থেকে বেশি সতর্ক থাকতে হচ্ছে ছুটির সময়ে। যে অভিভাবকেরা বাচ্চাদের নিতে আসেন, তাঁদের হাতেই সন্তানদের তুলে দেওয়া হচ্ছে কি না, পড়ুয়ারা ঠিক রুটের স্কুলবাসে উঠছে কি না— সব খুঁটিয়ে দেখতে হচ্ছে। প্রথম স্কুলে আসা পড়ুয়াদের বেশ কিছু অভিভাবক শিক্ষকদের অচেনা। তাই এসকর্ট কার্ড ভাল করে দেখে তবেই পড়ুয়াদের তাঁদের হাতে দেওয়া হচ্ছে।

ফিউচার ফাউন্ডেশন স্কুলের প্রিন্সিপাল রঞ্জন মিত্র বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের মধ্যেও পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। ওদের মধ্যে মোবাইল নির্ভরতা বেড়েছে। দেখা যাচ্ছে, অনেক মা-বাবাই স্কুলবাস বা পুলকারের উপরে ভরসা করতে না পেরে নিজেরাই এসে স্কুলে দিয়ে যাচ্ছেন। ফলে স্কুলের সামনে গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন, কিছু দিন পরে পড়ুয়ারা ধাতস্থ হলে তার পরেই তাঁরা পুলকারে করে স্কুলে পাঠাবেন।’’

ন্যাশনাল ইংলিশ হাইস্কুলের প্রিন্সিপাল মৌসুমী সাহা জানান, তাঁদের পড়ুয়াদের খুব একটা অসুবিধা হচ্ছে না। কারণ, পাড়ায় শিক্ষালয় শুরুর সময়ে তাঁরা ‘ওপেন স্কুল’ চালু করে কিছু দিন পড়িয়েছিলেন। তার ফল মিলেছে। তবে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপগুলি রয়ে গিয়েছে। সেখানে পড়ুয়ারা পড়া সংক্রান্ত তথ্য পাচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement