সরস্বতী পুজোর থিমের জন্য মডেল রোবট, ল্যাপটপ তৈরিতে ব্যস্ত যোধপুর পার্ক বয়েজ স্কুলের ছাত্র ও শিক্ষকেরা। সোমবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে সোমবার। সরস্বতী পুজো আগামী কাল, বুধবার। এক দিনের মধ্যে পুজোর প্রস্তুতি কি সেরে ফেলা যাবে? যে সব স্কুল মাধ্যমিকের কেন্দ্র ছিল, সেখানে এখন এটাই প্রধান চিন্তা। স্কুলগুলির প্রধান শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, সরস্বতী পুজো স্কুলের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। পড়ুয়ারা এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করে। এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষা এগিয়ে আসায় পুজোর প্রস্তুতিতে কোপ পড়ল শহরের বেশ কিছু স্কুলে।
হিন্দু স্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভ্রজিৎ দত্ত জানালেন, গত বছর তাঁদের সরস্বতী পুজোর থিম ছিল মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবনী। সেই মতোই হয়েছিল মণ্ডপসজ্জা। শুভ্রজিৎ বললেন, ‘‘আমাদের স্কুলে সরস্বতী পুজোকে কেন্দ্র করে প্রতি বারই থাকে অভিনবত্বের চমক। প্রাক্তনীদের পুনর্মিলন হয়। প্রত্যেক বছর প্রাক্তন ছাত্রেরা পুজোকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠানও করে। এ বার আমাদের স্কুল মাধ্যমিকের কেন্দ্র ছিল। পরীক্ষাও এগিয়ে এসেছিল অনেকটা। ফলে, কোপ পড়ল সরস্বতী পুজোর প্রস্তুতিতে। এক দিনের প্রস্তুতিতে সব কিছু করা হচ্ছে। তবু পড়ুয়ারা পথের পাঁচালী থিমের উপরে মণ্ডপসজ্জা তৈরির চেষ্টা করছে।’’
এ বারে মাধ্যমিক পরীক্ষার সিট পড়ায় শিয়ালদহের টাকি গার্লস স্কুলেও সরস্বতী পুজোর প্রস্তুতি হয়নি। প্রধান শিক্ষিকা শম্পা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলের সরস্বতী পুজোর মণ্ডপসজ্জা পুরস্কৃত হয়েছে আগে। ১০-১৫ দিন আগে থেকেই মেয়েরা এ সব নিয়ে মেতে থাকে। কিন্তু এ বার তেমন কিছু করা যায়নি। মাধ্যমিক পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে স্কুলে সাধারণ ছাত্রীদের ঢোকায় নিষেধাজ্ঞা ছিল।’’ তবে তিনি জানান, পরীক্ষা শেষ হওয়া মাত্রই পড়ুয়াদের মধ্যে উৎসাহ দেখা দিয়েছে। এমনকি, মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরাও পরীক্ষার পরে স্কুলে এসে পুজোর প্রস্তুতি শুরু করতে চেয়েছে। তারাই আলপনা আঁকার কাজ করছে।
বেথুন কলেজিয়েট স্কুলেও পড়েছিল মাধ্যমিকের সিট। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, মাধ্যমিক পরীক্ষার পরে, অর্থাৎ দুপুর ২টোর পরে কয়েক জন ছাত্রী এসে পুজোর প্রস্তুতির কিছু কাজ করেছে। কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। এক দিনের মধ্যেই এ বার আলপনা আঁকা থেকে শুরু করে মণ্ডপসজ্জা, সবই করতে হবে।
যে সব স্কুলে মাধ্যমিকের সিট পড়েনি, তাদের অবশ্য পুজোর প্রস্তুতি নিয়ে কোনও অসুবিধা নেই। কিছু স্কুলের তরফে জানানো হয়েছে, এ বার তারা মণ্ডপসজ্জায় বেশ কিছু অভিনবত্ব আনছে। যেমন, মিত্র ইনস্টিটিউশন, ভবানীপুর শাখা এ বার পুজোর থিম করেছে ‘হারিয়ে যাওয়া ভবানীপুর’। ভবানীপুরের যদুবাবুর বাজার কী ভাবে তৈরি হয়েছিল, রাসমণির স্নানবাড়ি কেমন ছিল— সে সব দেখা যাবে মণ্ডপে। যোধপুর পার্ক বয়েজ় স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিত সেন মজুমদার জানান, তাঁদের স্কুলের থিম হল, শিক্ষার বিবর্তন। মুনি-ঋষিদের আশ্রমের শিক্ষা থেকে শুরু করে আধুনিক যুগের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্য়মে শিক্ষাদান— কী ভাবে এই বিবর্তন হল, তা ফুটিয়ে তুলবে স্কুলের পড়ুয়ারা। নারায়ণ দাস বাঙুর মেমোরিয়াল মাল্টিপারপাস স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়া এবং খিদিরপুর অ্যাকাডেমির ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক শেখ মহম্মদ সালেহিন জানান, তাঁদের স্কুলে মাধ্যমিকের সিট না পড়ায় পুজোর প্রস্তুতি ভাল মতোই হয়েছে। মণ্ডপসজ্জা থেকে পুজোর পুরো দায়িত্বটাই নিয়েছে ছাত্রেরা।
তবে, যে সব স্কুলে মাধ্যমিকের সিট পড়েনি, সেগুলির মধ্যে কিছু স্কুলে সিট পড়েছে উচ্চ মাধ্যমিকের। যা শুরু হচ্ছে ১৬ ফেব্রুয়ারি। ফলে কিছু স্কুলে সরস্বতী পুজোর প্রীতিভোজের ব্যবস্থা পরীক্ষার পরে করা হবে। যেমন, নারায়ণ দাস বাঙুর মেমোরিয়াল মাল্টিপারপাস স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়া বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলের প্রীতিভোজের ব্যবস্থা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পরে ২ মার্চ করা হবে।’’