যত্নে বাড়ছে দিদিমণির প্রজাপতিরা

পার্ক সার্কাসে লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের হস্টেলে ঢুকলে চোখে পড়বে চৌহদ্দির ভিতরে থাকা ওই প্রজাপতির বাগান। টগর, করবী, জিনিয়া, কাঞ্চন, মাধবীলতা, নয়নতারা, তরুলতার মতো অজস্র গাছের পাতা-ফুলে এসে বসছে রঙিন প্রজাপতির দল।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৯ ০১:৩২
Share:

রঙিন পাখা...: বাগানের গাছে পিউপা। (ইনসেটে) লার্ভা আর প্রজাপতি। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

দিদিমণি অবসর নিয়েছেন কয়েক বছর আগেই। কিন্তু তাঁর তৈরি করে যাওয়া প্রজাপতির বাগান সযত্নে আগলে রাখছেন তাঁর কলেজের উত্তরসূরীরা। কলেজের ছাত্রীদের লেখাপড়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে সেই প্রজাপতির বাগান। তাই অবসর নিলেও দিদিমণি মনের মধ্যেই রয়ে গিয়েছেন কলেজের শিক্ষিকা এবং ছাত্রীদের।

Advertisement

পার্ক সার্কাসে লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের হস্টেলে ঢুকলে চোখে পড়বে চৌহদ্দির ভিতরে থাকা ওই প্রজাপতির বাগান। টগর, করবী, জিনিয়া, কাঞ্চন, মাধবীলতা, নয়নতারা, তরুলতার মতো অজস্র গাছের পাতা-ফুলে এসে বসছে রঙিন প্রজাপতির দল। সারাদিন ধরেই বাগানে তাদের অবাধ বিচরণ। প্রতিটি গাছে ওদের নিশ্চিন্ত আশ্রয়।

হস্টেলের ভিতরে বাগান অনেক জায়গাতেই থাকে। কিন্তু প্রজাপতির বাগান সচরাচর দেখা যায় না।

Advertisement

লেডি ব্রেবোর্নের অধ্যক্ষা শিউলি সরকার বলেন, ‘‘কলেজে এই প্রজাপতির বাগান তৈরি করেছিলেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষিকা অনুরাধা চৌধুরী। মূলত গবেষণার কাজের জন্য এই প্রজাপতি বাগান তৈরি করেন উনি। বছর কয়েক আগে উনি অবসর নিয়েছেন। কিন্তু এই বাগান এখন প্রাণিবিদ্যার শিক্ষিকারা যত্ন সহকারে রক্ষণাবেক্ষণ করেন। প্রাণিবিদ্যার ছাত্রীদেরও লেখাপড়ার সহায়ক এই বাগান।’’

কলেজ কর্তৃপক্ষের মতে, ওই প্রজাপতির বাগানের সামনে দাঁড়ালে অনেকেই মনে করবেন যে তাঁরা বোধহয় শহরের কোলাহল থেকে অনেক দূরে রয়েছেন।

কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষিকা পৌলোমী মাইতি জানান, পড়াশোনা বা গবেষণার পাশাপাশি প্রকৃতির ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে প্রজাপতি বাঁচিয়ে রাখা জরুরি। তিনি বলেন, ‘‘বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখতে প্রজাপতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। গাছের মধ্যে পরাগরেণু সঞ্চারের মাধ্যমে গাছের বংশবৃদ্ধি ঘটাতে প্রজাপতির ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। কলকাতার মতো ব্যস্ত ও ঘিঞ্জি শহরে তাই বাগান তৈরি করে প্রজাপতি বাঁচানো দরকার।’’ পৌলোমী জানান, যে সব গাছের পাতায় প্রজাপতির ডিম ফুটে শুঁয়োপোকা জন্মায় সেই সব গাছই তাঁরা রেখেছেন। ওই সব গাছের পাতায় শুঁয়োপোকা জন্মালেই তাঁরা খেয়াল রাখেন যেন তা পাখি খেয়ে না যায়।

লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের জীববিদ্যা বিভাগের শিক্ষিকারা জানাচ্ছেন, প্রজাপতি আবহাওয়া পরিবর্তনের আভাসও পায় বলে গবেষণায় জানা গিয়েছে। বিশ্ব জুড়েই প্রজাপতি নিয়ে গবেষণা চলছে। বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে বর্ধিত তাপমাত্রায় প্রজাপতি কী ভাবে তার আচরণ পাল্টাচ্ছে বিজ্ঞানীরা তার উপরে নজর রাখছেন। তাই প্রজাপতি বাঁচিয়ে রাখার জন্য সচেতনতার প্রয়োজন।

প্রাণিবিদ্যার গবেষকেরা মনে করেন, কলেজের পড়ুয়াদের মধ্যে এই সচেতনতা তৈরি করতে প্রজাপতি বাগানের পরিকল্পনা ইতিবাচক উদ্যোগ। তাঁদের মতে, শুধু কিছু নেচার পার্কে প্রজাপতি বাগান তৈরি করা ছাড়াও, স্কুল-কলেজে এমন বাগান তৈরি হলে সার্বিক সচেতনতা বাড়বে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement