Bangladesh

কলকাতার কড়চা: স্বপ্নভূমির সুবর্ণযাত্রা

বুড়িগঙ্গার তীরে যখন সূর্য অস্ত যাচ্ছে, রেসকোর্স তথা রমনা ময়দানে তখনই বাংলাদেশের এক ইতিহাস শেষ হয়ে আর এক ইতিহাস শুরু হল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২১ ০৮:১১
Share:

ঢাকা থেকে বিভিন্ন সংবাদসংস্থা এবং আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা জানাচ্ছেন, এই রেস কোর্স ময়দান আজ আর এক ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকছে, একদা এখানেই বঙ্গবন্ধু মুজিবর বাংলাদেশের স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। রক্ত, অশ্রুজল ও ব্যথাকাতর করুণ আর্তনাদের অবসানে আজ লক্ষ লক্ষ লোকের আনন্দধ্বনির মধ্যে পাকিস্তানী বাহিনী আত্মসমর্পণ করল।”— ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বরের রিপোর্টিং, পরের দিন আনন্দবাজার পত্রিকা-র প্রথম পাতায়। ১৬ তারিখ সকাল ১০.৪০-এ ঢাকা শহরে ঢুকল একটি ভারতীয় ব্যাটেলিয়ন, তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করলেন মেজর জেনারেল মহম্মদ জামশেদ। দুপুর সাড়ে ৩টেয় মাগুরায় মেজর জেনারেল আনসারির একটি সেনা-ডিভিশনের আত্মসমর্পণ, ৪টার একটু আগে ঢাকায় প্রবেশ করল আরও চার ব্যাটেলিয়ন ভারতীয় সেনা। ক্রমে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, বিকেল ৪.৩১-এ রেসকোর্স ময়দানে বাংলাদেশে থাকা সব পাকিস্তানি বাহিনীর তরফে আত্মসমর্পণপত্রে স্বাক্ষর করলেন পাক লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজি। “সেনাবাহিনীতে তাঁর পদমর্যাদাসূচক প্রতীক চিহ্নটি খুলে ফেললেন, তাঁর নিজস্ব রিভলবার থেকে বুলেটগুলি খুলে নিয়ে জেনারেল অরোরার হাতে তুলে দিলেন এবং তাঁর আনুগত্য ও আত্মসমর্পণের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি হিসাবে তাঁর ললাট জেঃ অরোরার ললাটে ছুঁইয়ে দিলেন।”— লেখা হচ্ছে কাগজে।

Advertisement

বুড়িগঙ্গার তীরে যখন সূর্য অস্ত যাচ্ছে, রেসকোর্স তথা রমনা ময়দানে তখনই বাংলাদেশের এক ইতিহাস শেষ হয়ে আর এক ইতিহাস শুরু হল। ভারত, এই বাংলা তথা কলকাতা যে ইতিহাসের শুধু সাক্ষীই নয়, সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণকারী। স্বাধীন দেশের জন্ম ঘোষণা হয়েছিল ২৬ মার্চেই, কিন্তু ছিল না সার্বভৌমত্ব। নয় মাস ব্যাপী মুক্তিযুদ্ধ, ডিসেম্বরে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শেষে সর্বার্থে স্বাধীন, বিজয়ী বাংলাদেশের পথ চলা শুরুর দিনটি— ১৬ ডিসেম্বর— ‘বিজয় দিবস’ হিসাবে তাই সার্থকনামা। বাংলাদেশের পতাকা হাতে, রেসকোর্স ময়দানে শতসহস্র মানুষের ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু,’ ‘জয় ভারত’, জয় ইন্দিরা’ ধ্বনিতে আকাশ কাঁপিয়ে তোলা, ভারতীয় সাংবাদিকদের আলিঙ্গন, অস্ত্র ত্যাগ করা পাক সেনাদের কড়া প্রহরায় ব্যারাকে ফেরা যদি ও পারের চিরস্মরণীয় দৃশ্য হয়, এ পারেও আবেগ-ছবি কম ছিল না কিছু। আবেগে আনন্দে আত্মহারা হয়েছিলেন লেখক-কবি-শিল্পী থেকে জনতা। ১৭ ডিসেম্বর ছিল অমাবস্যা, সন্ধ্যায় ঘরে ঘরে প্রদীপ জ্বালিয়ে দীপাবলি উৎসবের আহ্বান জানিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস। বহু দূরে, পশ্চিম পাকিস্তানে কারাবন্দি বঙ্গবন্ধুর জন্য দুই বাংলার বাঙালির আবেগে মিশে যাওয়া উৎকণ্ঠা ফুটে উঠেছিল খবরে— ‘জন্মদাতা তুমি কোথায়’। নতুন আশা, নতুন স্বপ্নে বুক বাঁধার সেই যাত্রা পঞ্চাশ পেরোবে আগামী ১৬ ডিসেম্বর। ছবিতে দেশের পতাকা হাতে শিশুর পথ চলা, ’৭১-এ।

স্বজন-স্মরণে

Advertisement

তরুণ বয়সে দেশান্তরি। ফিরে ফিরে এসেছেন তাঁর জন্মভূমি বর্ধমানের যবগ্রামে, মায়ের কাছে। সেই মা, যাঁর বয়ানে সেখানকার আঞ্চলিক ভাষাতেই লেখা উপন্যাস আগুনপাখি। রাঢ়বঙ্গের প্রান্তরে খুঁজে ফিরেছেন গল্পের ঠাঁই, তাঁর লেখায় মূর্ত জীবন ঘষা আগুন। বাংলা ভাষার বরেণ্য কথাকার হাসান আজিজুল হককে (১৯৩৯-২০২১) (ছবিতে) ভালবাসত কলকাতা, তিনিও সানন্দে বার বার এসেছেন এ শহরে, নানা উপলক্ষে। চলে গেলেন গত ১৫ নভেম্বর, তাঁর প্রিয় শহর তাঁকে ভোলেনি। ‘একুশ শতক’ প্রকাশন সংস্থার আয়োজনে গত ৭ ডিসেম্বর বিকেলে সুকিয়া স্ট্রিটের রামমোহন মঞ্চে হয়ে গেল স্মৃতিচিত্রণ ও আলোচনা, বিশিষ্টজনের উপস্থিতিতে। প্রকাশিত হল তাঁর নির্বাচিত প্রবন্ধের সঙ্কলন পঞ্চাশটি প্রবন্ধ, সঙ্গে আরও দু’টি অন্য বই। প্রয়াণের পরে দুই বাংলা মিলিয়ে তাঁর কোনও বইয়ের প্রকাশ এই প্রথম।

অনন্য অজিতেশ

কলেজজীবনে থিয়েটারে অভিনয়-নির্দেশনার দায়িত্ব নিলেও, গণনাট্য সঙ্ঘের সঙ্গে নিবিড় ভাবে যুক্ত হয়ে পড়েন অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়। দমদম শাখার প্রথম যে নাটকটি করেন, তা ছিল তাঁরই রূপান্তরে একটি বিদেশি নাটক। জীবনের শেষ পর্বে তাঁর নাট্যদল ‘নান্দীমুখ’-এ যে নাটক নির্দেশনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন, সেটিও ছিল এক বিদেশি নাটকের রূপান্তর। একাধিক মৌলিক নাটক লিখেছেন; শম্ভু মিত্র-উৎপল দত্তের পরবর্তী বাংলা থিয়েটারে অগ্রণী ভূমিকা তাঁর। সেই ভাবনা থেকেই ‘সূত্রধর’ প্রকাশনার আয়োজনে ‘বই-সন্ধে’ অনুষ্ঠানে আলোচনা, ‘বিদেশের অজিতেশ: দেশের নাটক’। বিভিন্ন ভাষার নাটকের রূপান্তর ও উপস্থাপনার সঙ্গে অজিতেশের সমকাল ও আজকের থিয়েটারের সংযোগ-সম্পর্ক নিয়ে বলবেন দেবাশিস মজুমদার। শোনা যাবে আজই, সন্ধ্যা ৭টায়, কষ্টিপাথর-প্রাণারাম ইউটিউব চ্যানেলে।

মঞ্চে সাহিত্য

কাপড়ের আড়তের হিসাবরক্ষক হরিহর ব্যর্থ লেখক, রাতে নদীর ধারে বসে লেখা শোনায় নদীকেই। কোনও বড় লেখকের লেখা পড়েনি, তবু স্বপ্ন বড় লেখক হওয়া। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা দু’টি গল্প ‘কবি হরিহর কুণ্ডু’ আর ‘রায়সাহেব শ্যামবাবু’ অবলম্বনে নতুন নাটক পাগল-পারা মঞ্চে আনছে পূর্ব পশ্চিম নাট্যদল, সৌমিত্র মিত্রের নির্দেশনায়, ১৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়, মধুসূদন মঞ্চে। উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের এ নাটকে ‘বিভূতি’ও অন্যতম চরিত্র, সফল লেখকের সঙ্গে অদ্ভুত সম্পর্ক গড়ে ওঠে হরিহরের। মুখ্য চরিত্রে দেবশঙ্কর হালদার। অন্য দিকে, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের খ্যাত ছোটগল্পের মঞ্চায়ন করছে থিয়েলাইট, চুয়া চন্দন নাটকে। রাকেশ ঘোষের লেখা, অতনু সরকার উপস্থাপিত এ নাটকের প্রথম অভিনয় আগামী কাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়, মিনার্ভা থিয়েটারে।

সুরনগরী

‘লখনউ কি সুবহ, বারাণসী কি শাম’। শিরোনামেই স্পষ্ট দুই প্রাচীন নগরীর গীত-বাদ্যের সঙ্গ-অনুষঙ্গ আর ঋদ্ধ ঐতিহ্য। এই উদ্‌যাপনে কলকাতার স্থান কোথায়? মাঝের আসনটিতে, কারণ এই সঙ্গীত-অর্ঘ্যের জায়গা করে দিয়েছে এ শহরই— আগামী কাল, ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায়, বালিগঞ্জের দাগা নিকুঞ্জে। ‘অলকা জালান ফাউন্ডেশন’ আয়োজিত অনুষ্ঠানের প্রথমার্ধে লখনউ-প্রবাসী কবি-গীতিকার-সুরকার অতুলপ্রসাদ সেনের ভৈরবীতে বাঁধা ভোরের সুর, টপ্পা, ঠুংরি, কাজরী অঙ্গের গান শোনাবেন নূপুরছন্দা ঘোষ, রজনীকান্ত-দ্বিজেন্দ্রলালের গানও। পরে বারাণসীর রাগমূর্ছনায় পিতা-পুত্র, পণ্ডিত শঙ্করনাথ সাহা ও সন্দীপ সাহার দিলরুবা-সেতার যুগলবন্দি।

বিকল্প

শিল্প প্রদর্শনের নির্দিষ্ট পরিসরের অভাব এখন শহরে, প্রাচীন স্থাপত্যগুলি ভেঙে বহুতল গড়ার বদলে তাদের এ কাজে ব্যবহারের উপযোগী করে তুলতে পারলে ঐতিহ্য বাঁচিয়ে শিল্পের আলোয় আলোকিত করে তোলা যায় এক-একটি এলাকা ও সেখানকার অধিবাসীদেরও। এই সূত্রেই, ঠনঠনিয়া ঠাকুরবাটির মতো কলকাতার পুরনো এলাকার কিছু সৌধকে শিল্প-পরিসরে রূপান্তরের প্রয়াসে কাজ করছেন কয়েক জন মুভমেন্ট আর্টিস্ট ও ডিজ়াইনার। সেই প্রয়াসেরই ফল পিকল ফ্যাক্টরি-র ‘হোম ফর ডান্স’ প্রদর্শনী। গ্যোয়টে ইনস্টিটিউট-ম্যাক্সমুলার ভবনের পৃষ্ঠপোষণায় চলছে প্রদর্শনীর বিভিন্ন অনুষ্ঠান। ১০ তারিখ দেখানো হল সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের ছবি হোম। ১৪ তারিখে শিল্পী ও শিল্পচর্চাস্থানের সম্পর্ক নিয়ে, ১৮ তারিখে কলকাতার ঐতিহ্যশালী স্থাপত্যগুলিকে শিল্পচর্চার কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা, শিল্পী-দর্শক সংলাপ।

সবার জন্য

পাবনার ভূমিপুত্র দেশভাগের পর কলকাতায়— সেন্ট পল’স কলেজ, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে স্নাতকোত্তর। নীহাররঞ্জন রায়ের সান্নিধ্যে এসে বাংলার মন্দির স্থাপত্যের ইতিহাস নিয়ে কাজ শুরু করেন হিতেশরঞ্জন সান্যাল (১৯৪০-১৯৮৮) (ছবিতে)। ষাটের দশকে ডেভিড ম্যাককাচ্চনের সঙ্গে জোট বেঁধে পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে হাজারের উপর প্রাচীন মন্দিরের ছবি তোলার কাজে হাত দেন। বাংলার মন্দির স্থাপত্যের সামাজিক ইতিহাস ছিল তাঁর গবেষণার বিষয়। ১৯৭৩-এ সেন্টার ফর স্টাডিজ় ইন সোশাল সায়েন্সেস-এ যোগ দিয়ে বাংলার গ্রামে জাতীয়তাবাদী গণ-আন্দোলনের ইতিহাস লিখতে গিয়ে শত শত গাঁধীবাদী কংগ্রেস কর্মীর সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করেন, এই নিয়েই তাঁর প্রবন্ধ সঙ্কলন স্বরাজের পথে। লিখেছেন বাংলার বৈষ্ণব আন্দোলন ও লোকসংস্কৃতি নিয়েও। তাঁর লেখা বাংলা কীর্তনের ইতিহাস (১৯৮৯) পেেয়ছিল আনন্দ পুরস্কার। হিতেশরঞ্জনের তোলা বাংলার মন্দিরের তিন হাজারেরও বেশি ছবি (নীচে তারই একটি) আছে সেন্টার-এর আদি কার্যালয়, যদুনাথ ভবন মিউজ়িয়াম অ্যান্ড রিসোর্স সেন্টার-এ। সেই সংগ্রহ ও হিতেশরঞ্জনের বহমুখী গবেষণা নিয়ে একটি গ্যালারি খুলে গেল গত ২৭ নভেম্বর, যদুনাথ ভবনে।

চেতনায় আজও

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পেরিয়েছে ভৌগোলিক সীমান্তরেখা। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরেও মুক্তিযুদ্ধ দুই বাংলা ও বাঙালির চেতনায় ভাস্বর— সাহিত্যচর্চায়, পত্রপত্রিকায় তার উজ্জ্বল স্বাক্ষর জেগে। বিশিষ্টজনের সম্পাদনায় কলকাতার শিল্প-সাহিত্য বিষয়ক ত্রৈমাসিক নবান্ন-র সাম্প্রতিকতম সংখ্যাটিও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ঘিরেই। দুশোরও বেশি পৃষ্ঠার বিশেষ ক্রোড়পত্রে দুই বাংলার লেখকদের কলমে বাইশটি প্রবন্ধ, গল্প, স্বাধীনতার কবিতা। ভাষা আন্দোলন, যুদ্ধাপরাধ, নারীনিগ্রহ, মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা, বামপন্থীদের অবদান, মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র ও থিয়েটার, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক উন্নয়ন থেকে বিপন্ন সুন্দরবন— প্রবন্ধগুলির বিষয় বহুধাবিস্তৃত। সম্পাদকীয়তে ধ্বনিত সে দিনের দৃপ্ত স্লোগান, ‘দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা, কারও দানে পাওয়া নয়।’

ব্যতিক্রমী

অভিনব নাম, ‘মিউজ়িক্যাল স্যান্ডউইচ’। যন্ত্রসঙ্গীতের প্রসার, তরুণ যন্ত্রসঙ্গীতশিল্পীদের উৎসাহ দেওয়াই লক্ষ্য সঙ্গীতকর্মী-দলটির। সেই স্বপ্নই রূপ পেল ‘কলকাতা ইনস্ট্রুমেন্টাল জ্যামিং ফেস্টিভ্যাল’, কলকাতা যন্ত্রসঙ্গীত ঐকতান উৎসবে। স্পনসরের অভাব, তাই সঙ্গীতপ্রেমী সাধারণ মানুষের আর্থিক সাহায্য তথা ‘ক্রাউন্ডফান্ডিং’-এই সম্প্রতি হয়ে গেল ব্যতিক্রমী এই কনসার্ট, দক্ষিণ কলকাতার যোধপুর পার্কের হন্ডো’স কাফেতে। ছিলেন কলকাতা ও জেলার ষোলো জন যন্ত্রসঙ্গীতশিল্পী। ছোট্ট উৎসব এ বার পড়ল দ্বিতীয় বছরে। তরুণের স্বপ্ন বেঁচে থাক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement