কড়া: বার বন্ধ হওয়ার পরে সামনে পুলিশি পাহারা। শুক্রবার, চাঁদনি চক এলাকায়। নিজস্ব চিত্র
ঘটনা এক: ঘড়িতে তখন রাত সাড়ে ৯টাও বাজেনি। কিন্তু তত ক্ষণে দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছে পার্ক স্ট্রিটের একাধিক রেস্তরাঁ ও পানশালার। একটি পানশালার ভিতরে ঢুকতে যেতেই দ্বাররক্ষীর উত্তর— ‘‘কাল আসুন! এখন যাঁরা ভিতরে আছেন, তাঁদের বাইরে বেরোনোর জন্যই শুধু দরজা খুলবে।’’
ঘটনা দুই: রাত সাড়ে ১০টা বেজে গিয়েছে অনেক আগেই। ধর্মতলা সংলগ্ন এলাকার একটি পানশালার সামনে তখনও কম বয়সিদের জমজমাট ভিড়। বাইক রেখে মত্ত অবস্থায় পানশালার সামনেই চলছে জটলা।
ঘটনা তিন: লেনিন সরণিতে মত্ত অবস্থায় মোটরবাইক চালু করার চেষ্টা করছিলেন এক যুবক। আর টালমাটাল অবস্থায় তাতে ওঠার চেষ্টা করছেন আরও এক জন। কয়েক মিনিটের চেষ্টার পরে অবশেষে বাইকে চড়তে পারলেন তিনি। মত্ত চালকের টালমাটাল হাতেই ছুটল বাইক।
শুক্রবার, বিশ্বকর্মা পুজোর রাতে শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ ঘুরে এমনই নানা দৃশ্য চোখে পড়ল। পার্ক স্ট্রিট, রুবি, রাসবিহারী-সহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশি নজরদারির কড়াকড়ি যেমন দেখা গেল, তেমনই নিয়মভঙ্গের ছবিও ধরা পড়ল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া স্ট্রিট, লেনিন সরণি, এসএন ব্যানার্জি রোড-সহ একাধিক জায়গায়। পুজোর রাতের শহরে পুলিশি নজরদারির ফাঁক গলে কিছু কিছু জায়গায় দেখা গেল, রাত যত বেড়েছে ততই বেড়েছে মত্ত বাইকচালকদের দাপাদাপি। চালকের পিছনে কোথাও দু’জন, কোথাও আবার তিন জন আরোহীকে বসিয়েই দেদার ছুটেছে মোটরবাইক। কোথাও আবার রাত ১১টার পরেও শপিং মলের সামনে দেখা গিয়েছে জটলা। কসবার একটি শপিং মল সংলগ্ন রাস্তায় বাইক চালিয়ে এ-দিক ও-দিক যাতায়াত করতে দেখা গেল কম বয়সি চালকদের। মাথায় হেলমেট পরা বা ট্র্যাফিক সিগন্যাল মান্য করার বালাই নেই কারও মধ্যেই। তবে পুলিশের নজরদারির কারণে পার্ক স্ট্রিটে ছিল সম্পূর্ণ উল্টো ছবি। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত পানশালা খোলা রাখার সরকারি নির্দেশ থাকলেও ঘড়ির কাঁটা সাড়ে ৯টা ছুঁতে না ছুঁতেই সেখানে বন্ধ করে দেওয়া হয় পানশালার দরজা। ভিতরে ঢোকার জন্য কেউ জোরাজুরি করলে মুখের উপরেই দরজা বন্ধ করে বলা হয়েছে— ‘‘কাল আসবেন।’’ পার্ক স্ট্রিটের একটি পানশালার এক কর্মী বলেন, ‘‘সাড়ে ৯টার পরে আর কাউকেই ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। ভিতরে যাঁরা রয়েছেন,
তাঁদেরও ১০টার আশপাশের সময়ের মধ্যে বার করে দেওয়া হচ্ছে।’’ সময়ের গেরোয় কম বয়সি কয়েক জনকে এ দিন পার্ক স্ট্রিটের পানশালাগুলির দরজা থেকেই নিরাশ হয়ে ফিরতে দেখা গেল। বন্ধুদের সঙ্গে ছুটির দিনে পার্ক স্ট্রিটে আসা, গড়িয়ার দীপায়ন ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘আমি জানতাম সাড়ে ১০টা। সাড়ে ৯টাতেও যে সব বন্ধ হয়ে যাবে, কী করে জানব!’’
দক্ষিণ কলকাতার কয়েকটি জায়গায় আবার সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও খোলা থাকতে দেখা গেল বেশ কিছু রেস্তরাঁ। যদিও এ প্রসঙ্গে ‘হোটেল অ্যান্ড রেস্তরাঁ অ্যাসোসিয়েশন অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’র প্রেসিডেন্ট সুদেশ পোদ্দার বললেন, ‘‘সংগঠনের তরফে প্রত্যেককেই সরকারি নির্দেশ মেনে চলার কথা বলে দেওয়া হয়েছে। রাত ১০টা ১৫ মিনিটের মধ্যে সমস্ত বিল মিটিয়ে রেস্তরাঁ খালি করে দেওয়ার কথা বলেছি আমরা। এর পরেও যদি কেউ তা অমান্য করে, সে ক্ষেত্রে প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে আমরা তা সমর্থন করব।’’
কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, শুক্রবার সারা রাতই কড়া নজরদারি চলেছে গোটা শহরে। পার্ক সার্কাস, উল্টোডাঙা, গড়িয়াহাট, রুবি, ধর্মতলা, পার্ক স্ট্রিট-সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পুলিশকে গাড়ি দাঁড় করিয়ে কথা বলতেও দেখা যায়। বিধিভঙ্গের অভিযোগে রাতভর অভিযান চালিয়ে ১৪২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বললেন, ‘‘প্রতিদিনই নজরদারি থাকে। সপ্তাহান্তে ছুটির দিনগুলি ও বিশেষ দিনগুলিতে নজরদারি আরও বাড়ানো হয়। সেই ভাবেই শুক্রবার রাতেও শহরে নজরদারি চলেছে।’’