স্ট্র্যান্ড রোডে পূর্ব রেলের কয়লাঘাট ভবনে অগ্নিকাণ্ড। ছবি: পিটিআই।
জীবন বাজি রেখে আগুন নেভানোর কাজ করেন তাঁরা। কারও জায়িত্ব মানুষের নিরাপত্তা দেওয়া, কেউ রেলের সুরক্ষা নিশ্চিত করেন। স্ট্র্যান্ড রোডে পূর্ব রেলের কয়লাঘাট ভবনের অগ্নিকাণ্ড কেড়ে নিল এমনই ৯টি প্রাণ। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ৪ দমকলকর্মী, ১ পুলিশকর্মী এবং রেলের এক পদস্থ আধিকারিক এবং তাঁর রক্ষী। ১ আরপিএফ কর্মী এবং আরও এক জনের পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
আগুন থেকে জীবন ও জিনিসপত্র রক্ষা করাই যাঁদের কাজ, তারাই রক্ষা পেলেন না আগুনের লেলিহান শিখা থেকে। কয়লাঘাট ভবনে নিহত দমকলকর্মীরা হলেন গিরিশ দে, গৌরব বেজ, অনিরুদ্ধ জানা, বিমান পুরকাইত। রেলের ডেপুটি চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার পার্থসারথি মণ্ডল এবং তাঁর রক্ষী সঞ্জয় সাহানির মৃত্যু হয়েছে অগ্নিকাণ্ডে। এ ছাড়া কলকাতা পুলিশের হেয়ারস্ট্রিট থানার এএসআই অমিত ভাওয়ালের ঝলসানো দেহ উদ্ধার হয়েছে।
পুলিশ ও দমকলের কর্তারা প্রথমে জানান, ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘটনাস্থলে গিয়েও প্রথমে সেই কথা জানানোর পাশাপাশি বলেন, আরও দু’জন নিখোঁজ রয়েছেন। পরে উদ্ধার হয় ওই দু’জনের দেহ। রাত ১২টা নাগাদ দেহগুলি এক এক করে বাইরে বের করে আনা হয়। অ্যাম্বুল্যান্সে করে সেখান থেকে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। পুলিশ ও দমকলের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, দেহগুলি এতটাই ঝলসে গিয়েছে যে, কার্যত শনাক্ত করাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
দমকলের আধিকারিকদের একটি সূত্রে খবর, দু’টি লিফ্ট থেকে ৯ জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। ১২ তলায় আটকে থাকা একটি লিফ্টের ভিতরে মেলে ডেপুটি সিসিএম এবং তাঁর রক্ষীর দেহ। রেল সূত্রে খবর, অন্য একটি লিফ্টে করে উঠেছিলেন দমকল, আরপিএফ-কর্মী মিলিয়ে মোট ৭ জন। দমকলের তদন্তকারী আধিকারিকদের সূত্রে জানা গিয়েছে, এই লিফ্টটি ১৩ তলায় আটকে ছিল। দু’টি লিফ্টিই যান্ত্রিক ত্রুটিতে আটকে ৯ জনের মর্মান্তিক পরিণতি হয় বলে মনে করছেন দমকলের আধিকারিকরা।
আগুন লাগলে প্রথমেই নিষিদ্ধ করা লিফ্টে ওঠানামা করা। আগুন লাগলে লিফট বন্ধও করে দেওয়ার কথা। কিন্তু কেন লিফ্ট বন্ধ করা হল না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আবার দমকলের মতো প্রশিক্ষিত বাহিনীর কর্মী, যাঁরা প্রায় প্রতিদিন এমন পরিস্থিতির মোকাবিলায় ঝাঁপিয়ে পড়েন, তাঁরা কেন লিফটে করে উঠতে গেলেন, সেই প্রশ্নের উত্তরও খুঁজছেন তদন্তকারীরা।