আশঙ্কা: মাঝেমধ্যেই এমন ছোট আগুন লাগে ধাপায়। নিজস্ব চিত্র
ধাপার জমা জঞ্জালের স্তূপে আগুন ধরে যেতে পারে যে কোনও দিন! এমনকি, সেখানে বিস্ফোরণ ঘটার আশঙ্কাও প্রবল! এমনটাই জানিয়েছেন কলকাতা পুরসভার কর্তারা। বিষয়টি নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে পুর মহলে আলোচনা চলছে। কিন্তু সুরাহার কোনও পথ বেরোয়নি। দিন কয়েক আগে পুরো পরিস্থিতির কথা জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছিল রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরে। ওই দফতরের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম তখনও কলকাতার মেয়রের চেয়ারে বসেননি। জানানো হয়েছিল রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদেও। বিষয়টি নিয়ে খুব দ্রুত কিছু করা দরকার বলে মনে করছেন পরিবেশবিদেরাও।
পুরসভা সূত্রের খবর, ধাপায় দৈনিক সাড়ে চার হাজার মেট্রিক টন জঞ্জাল ফেলা হয়। ধাপার আয়তন প্রায় ৩৫ হেক্টর। ওই জঞ্জালের মধ্যে রয়েছে দাহ্য, অদাহ্য, জৈব, অজৈব-সহ বিভিন্ন ধরনের বস্তু। সেই সঙ্গে প্লাস্টিক ও পলিথিন তো রয়েইছে। পুরসভার নথি বলছে, ২০০১ সালেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, ধাপার মাঠ জঞ্জালে পরিপূর্ণ (স্যাচুরেটেড)। তাই অন্য কোনও জায়গায় ভাগাড় তৈরি করা দরকার। ওই প্রস্তাবের প্রায় ১৭ বছর পরে এখনও সেই ধাপার মাঠেই জঞ্জাল ফেলা চলছে। পুরকর্তারা বলছেন, পরিস্থিতি এখন এমনই যে, ধাপার উপরে এই অতিরিক্ত চাপের কারণে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে যে কোনও দিন।
পুরসভা সূত্রের খবর, পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরে পাঠানো সেই চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ধাপায় যে জঞ্জাল জমা হচ্ছে, সেই কঠিন বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার, প্রক্রিয়াকরণ এবং তা নষ্ট করার ব্যবস্থা খুবই দুর্বল কলকাতা পুরসভার। কারণ, এর জন্য যে সমস্ত আধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি দরকার, তা তাদের নেই। তাই দিনের পর দিন জঞ্জাল পড়লেও তার কোনও ‘ট্রিটমেন্ট’ হচ্ছে না। রাজ্য পরিবেশ দফতরের এক অফিসার জানান, এক-এক রকম জঞ্জালের এক-এক রকম চরিত্র। আনাজ নষ্ট হলে বা পচে গেলে তা ফেলা হয় ধাপায়। এখন ওই আনাজ থেকে যে গ্যাস নির্গত হয়, তা পাঁচ বছর পর্যন্ত থাকে। কিছু কিছু বর্জ্যের গ্যাস আবার ২০ বছর পর্যন্তও থাকে। ধাপায় জঞ্জালের নীচে বিভিন্ন রকম গ্যাস বিরাট পরিমাণে তৈরি হচ্ছে এবং জমে থাকছে। পুরসভার এক ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, ‘‘ভয়ঙ্কর সেটাই। কোন বর্জ্য থেকে কী গ্যাস হচ্ছে, তা যাচাই করার কোনও পরিকাঠামো আমাদের নেই। শুধু জঞ্জালের পাহাড় জমছে প্রতিদিন।’’ চিঠিতে লেখা হয়েছে, এমনটা চলতে থাকলে গ্যাস থেকে বড়সড় আগুন লেগে যেতে পারে। ওই ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘‘আমরা বুঝতে পারছি না তলায় কী ঘটছে। এক দিন হঠাৎ করে কোনও বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।’’
শহরের এক পরিবেশবিদ বলেন, ‘‘ধাপার জঞ্জালের নীচে সব থেকে বেশি পরিমাণে যে গ্যাস জমে আছে, তা হল মিথেন। ওই গ্যাস থেকে বড় অগ্নিকাণ্ড হতে পারে। তাই মিথেনকে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। এ নিয়ে আগে বিশেষ চেষ্টা হয়নি।’’
কী করা দরকার? পুরসভার এক কর্তা বলেন, ‘‘জঞ্জাল ফেলার বিকল্প কোনও ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত ধাপায় জঞ্জাল ফেলা যাবে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে প্রতিদিন যে জঞ্জাল ফেলা হচ্ছে, তার ‘ট্রিটমেন্ট’ করতে হবে। বর্জ্য থেকে গ্যাস যাতে তৈরি হতে না পারে, তার ব্যবস্থা করতে হবে।’’ কিন্তু সেই কাজটাই গত কয়েক বছর ধরে হচ্ছে না। পুরসভা সূত্রের খবর, সেই ২০০০ সাল থেকে ধাপার জঞ্জাল ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্প করার কথা হচ্ছে। কিন্তু আজও তা হয়ে ওঠেনি। ওই প্রকল্পটি হলে জঞ্জালের পরিমাণ কমে যেত। ২০১৫ সালে বিষয়টি পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের কানে তোলার পরে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যানকে নিয়ে একটি কমিটিও করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার পরেও কাজ হয়নি। এখন পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম মেয়র পদে বসার পরে ফের তোড়জোড় শুরু হয়েছে।
মন্ত্রী এখন নিজেই মেয়র। চেয়ারে বসেই জানিয়েছেন, অগ্রাধিকার দিতে চান কলকাতার পরিবেশ সুস্থ রাখার কাজকে। সোমবার শহরের জঞ্জাল ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি ধাপার বিকল্প জায়গা দ্রুত প্রস্তুত করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পুরসভা সূত্রের খবর, রাজারহাটে রাজ্য সরকার ২০ একর জায়গা দিয়েছে কলকাতার জঞ্জাল ফেলার জন্য। কিন্তু এখনও তা তৈরি নয়। এ দিন মেয়র বলেন, ‘‘ওই জমি নিয়ে ফাইলের কিছু কাজ বাকি আছে। সাত দিনের মধ্যে তা করতে বলা হয়েছে।’’ আর ধাপার বর্জ্য বিজ্ঞানসম্মত ভাবে জমা করতে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের পরামর্শে কাজ হবে বলেও জানান তিনি। বলেন, ‘‘ওই কাজেও সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।’’