Terrorist

প্রকাশ্যে এল জেএমবি-র উত্তর দিনাজপুর মডিউল, জিহাদি করতে জঙ্গিদের হাতিয়ার এনআরসি!

এর আগে খাগড়াগড়-কাণ্ডে অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত মৌলনা ইউসুফের কাছ থেকে মহম্মদ আবুল কাশেমের নাম জানতে পেরেছিলেন গোয়েন্দারা। কিন্তু, মঙ্গলকোটের কাশেমের হদিশ তাঁরা পাচ্ছিলেন না। গোয়েন্দাদের দাবি, ইজাজকে পাকড়াও করার পর ফের কাশেমের নাম প্রকাশ্যে আসে। একই সঙ্গে জানা যায় ইজাজের গড়ে তোলা উত্তর দিনাজপুর মডিউলের কথাও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৬:১০
Share:

গোয়েন্দাদের দাবি, সংগঠনে নতুনদের টেনে আনার ক্ষেত্রে এনআরসি-নীতিকেই হাতিয়ার করা হয়েছে। নিজস্ব চিত্র।

জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি)-কে হাতিয়ার করেই উত্তরবঙ্গের সংখ্যালঘু বাসিন্দাদের মধ্যে জিহাদের বীজ বুনছে জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের শীর্ষ নেতা সালাউদ্দিন সালেহিন। মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান মডিউল প্রকাশ্যে চলে আসার পরই উত্তর এবং দক্ষিণ দিনাজপুরের বিভিন্ন অংশে সংগঠন তৈরি করার পরিকল্পনা নেয় জেএমবি-র শীর্ষ নেতৃত্ব। সেই উত্তর দিনাজপুর মডিউলের দুই সক্রিয় সদস্যকে সোমবার গ্রেফতার করার পর তদন্তে নেমে এমনটাই জানতে পেরেছে কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)।

Advertisement

গোয়েন্দাদের দাবি, সম্প্রতি গয়া থেকে গ্রেফতার হওয়া বীরভূমের বাসিন্দা মহম্মদ ইজাজকে জেরা করে হদিশ মেলে সংগঠনের উত্তর দিনাজপুর মডিউলের। এর আগে খাগড়াগড়-কাণ্ডে অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত মৌলনা ইউসুফের কাছ থেকে মহম্মদ আবুল কাশেমের নাম জানতে পেরেছিলেন গোয়েন্দারা। কিন্তু, মঙ্গলকোটের কাশেমের হদিশ তাঁরা পাচ্ছিলেন না। গোয়েন্দাদের দাবি, ইজাজকে পাকড়াও করার পর ফের কাশেমের নাম প্রকাশ্যে আসে। একই সঙ্গে জানা যায় ইজাজের গড়ে তোলা উত্তর দিনাজপুর মডিউলের কথাও।

ভৌগোলিক অবস্থানের যে সুবিধার জন্য ধুলিয়ান মডিউল গড়ে তোলা হয়েছিল, ঠিক একই বিষয় মাথায় রেখেই উত্তর দিনাজপুরের মডিউল তৈরি করা হয় বলে গোয়েন্দাদের মত। তার কারণ অনেকগুলো— উত্তর দিনাজপুরেও ধূলিয়ানের মতো বিহার বা ঝাড়খণ্ড থেকে যাতায়াত করা সহজ। এই জেলাতে প্রচুর হিন্দি ও উর্দুভাষী মানুষের পাকাপাকি বসবাস। উত্তর দিনাজপুর থেকেও বহু মানুষ ভিন্‌রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতে যান। এবং সবচেয়ে বড় বিষয়, এই জেলাও বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী।

Advertisement

এসটিএফ এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তর দিনাজপুরে এমন অনেক মাদ্রাসা রয়েছে, সরকারের কাছে যেগুলোর কোনও তথ্য বা নথি নেই। মুর্শিদাবাদ এবং বর্ধমানের মতো উত্তর দিনাজপুরেও ব্যক্তি মালিকানায় থাকা বা স্থানীয় কোনও সংগঠনের অর্থ সাহায্যে চলা এমন সব মাদ্রাসাকে কেন্দ্র করেই সংগঠন বিস্তার করছিল ইজাজ এবং তার সঙ্গীরা। গোয়েন্দাদের দাবি, সংগঠনে নতুনদের টেনে আনার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের এনআরসি-নীতিকেই হাতিয়ার করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: বৌবাজারের পাশে মমতা, মেট্রো-কর্তৃপক্ষের লিখিত প্রতিশ্রুতি চান দুর্গতেরা

বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে কাজে লাগিয়ে, ইজাজের এই নয়া মডিউল জেলার সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে এনআরসি নিয়ে ব্যাপক নেতিবাচক এবং ভ্রান্ত প্রচার চালিয়েছে বলেই গোয়েন্দাদের দাবি। এনআরসি সম্পর্কে ধারণা নেই এমন মানুষের একটা বড় অংশকে আতঙ্কিত করে তুলছে তারা। গোয়েন্দাদের একাংশ জানিয়েছেন, সেই আতঙ্কের মাঝেই ধীরে ধীরে পুঁতে দেওয়া হচ্ছে জিহাদের বীজ। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের একাংশের ইঙ্গিত, রাজ্যের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে এনআরসি নিয়ে এই প্রচার অনেক ক্ষেত্রেই অনুকূল প্রভাব বিস্তার করছে জিহাদিদের সংগঠনের জন্য। তা ছাড়া এই প্রচারের মাধ্যমে নিজেদের জিহাদি কার্যকলাপকেও আড়ালে রাখা সহজ।

আরও পড়ুন: জল রুখতে ভরসা সুড়ঙ্গবিদ পল

কলকাতা পুলিশের এসটিএফের এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, কাশেম এবং ইজাজকে জেরা করে ইটাহারের আব্দুল বারি এবং নিজামুদ্দিন খানের হদিশ পাওয়া যায়। সূত্রের খবর, গত শুক্রবার থেকেই গোয়েন্দারা তাদের উপর নজর রাখছিলেন। ইজাজ গ্রেফতার হওয়ার পরেই বারি এবং নিজামুদ্দিন দক্ষিণ ভারতে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকদের ভিড়ে মিশে রাজ্য ছেড়ে পালানোর ছক কষে। পালানোর সময় মালদহের সামসি থেকে সোমবার তাদের পাকড়াও করা হয়। গোয়েন্দাদের দাবি, ধৃতদের কাছ থেকে এখনও পর্যন্ত পাওয়া তথ্য থেকে তাঁদের ধারণা, ওই মডিউলে আরও অনেকে রয়েছে। তাদের হদিশ পাওয়ার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা।

আরও পড়ুন: ‘কংগ্রেসের হাতে ১৫০ বছরের ইতিহাস, আরএসএসের রসদ ৫০০০ বছরের’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement