সুরজ আলি
সৎছেলের সঙ্গে অপহৃত হওয়ার নাটক ‘ফেঁদে’ গ্রেফতার হল এক যুবক। বুধবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে নরেন্দ্রপুর থানার জয়কৃষ্ণপুর এলাকায়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার রাত ১০টা নাগাদ সামসুর লস্কর নামে এক ব্যক্তি থানায় পৌঁছে জানান, তাঁর জামাই ও আড়াই বছরের নাতিকে কয়েক জন অপহরণ করেছে। ঘণ্টা খানেক আগে তাঁর মেয়ে শবনম লস্করের কাছে একটি ফোন এসেছিল। ওই ফোনে জামাই সুরজ আলি জানিয়েছে, তাকে ও তার সৎছেলে সোয়াদুল্লাকে অপহরণ করা হয়েছে। দু’লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দেওয়ার পরেই তাদের ছাড়বে অপহরণকারীরা। এর পরেই পুলিশের একটি দল তৈরি করা হয়। যে নম্বর থেকে শবনমের কাছে ফোন আসে, সেটির অবস্থান পরীক্ষা করে জানা যায়, বিষ্ণুপুর লাগোয়া একটি এলাকায় রয়েছে ওরা। তার পর থেকেই সামসুরকে দিয়ে ফোন করাতে থাকে পুলিশ। টাকা নিয়ে কোথায় যেতে হবে, তা জানা হয়। প্রথমে বিষ্ণুপুরের পৈলান এলাকায় আসতে বলা হয় তাঁকে। কিছুক্ষণ পরে ফের ফোন করে বলা হয়, পৈলান নয়, নেপালগঞ্জ এলাকায় যেতে হবে। সেইমতো একটি গাড়িতে সামসুর-শবনম ও তাঁর কয়েক জন আত্মীয়কে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে। সেই গাড়ির সামনে ও পিছনে কিছুটা দূরত্ব থেকে মোটরসাইকেল ও ভ্যান নিয়ে সাদা পোশাকের পুলিশের দল নেপালগঞ্জ এলাকায় পৌঁছয়। ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, একটি মোটরসাইকেলে দু’জন বসে। আর একটি গাড়ি রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। আড়াই বছরের সোয়াদুল্লাকে ঝোপের মধ্যে বসিয়ে রাখা হয়েছে। তার পরেই ওই এলাকা ঘিরে ফেলেন সাদা পোশাকের পুলিশকর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়ারেরা। মোটরসাইকেলে থাকা দুই অপহরণকারী পুলিশের উপস্থিতির বিষয়টি আন্দাজ করে ফেলে। আচমকা মোটরসাইকেল চালিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তারা। পুলিশের একটি দল মোটরসাইকেলটি ধাওয়া করে। পুলিশের ধাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটরসাইকেলটি একটি গাছে গিয়ে ধাক্কা মারে। তদন্তকারীরা জানান, শাকিল মণ্ডল ও সাহিল আনন্দ নামে দুই দুষ্কৃতী ওই মোটরসাইকেলে ছিল। দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হয়েছে শাকিল। তাকে আমতলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে সাহিলকে।
পুলিশ জানায়, ওই এলাকারই আর একটি দিক থেকে সামসুরের জামাই সুরজ আলি ও নাতি সোয়াদুল্লাকে উদ্ধার করা হয়। পরে সাহিলকে জেরা করে পুলিশ জানতে পারে, সুরজই অপহরণের পরিকল্পনা করেছিল।
পরিবার সূত্রে খবর, বছর খানেক আগে শবনমের সঙ্গে সুরজের বিয়ে হয়েছিল। তবে তেমন কোনও কাজকর্ম করত না সুরজ। শবনমের বাবা ও কাকারা পেশায় প্রোমোটার। অপহরণের নাটক করে তাঁদের থেকে টাকা হাতানোর পরিকল্পনা করেছিল জামাই। এক তদন্তকারীর দাবি, ‘‘জেরায় সাহিল জানিয়েছে, টাকা হাতে পাওয়ার পরে সোয়াদুল্লাকে খুন করার পরিকল্পনাও ছিল সুরজের।’’ তার পরেই খুনের চক্রান্ত ও অপহরণের অভিযোগে সুরজকেও গ্রেফতার করা হয়। শাকিল আপাতত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সুস্থ হওয়ার পরে তাকেও গ্রেফতার করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ধৃতদের বৃহস্পতিবার বারুইপুর আদালতে পেশ করা হলে বিচারক তাদের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।