মেডিক্যাল কাউন্সিলের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির গুচ্ছ অভিযোগ জমা পড়েছে স্বাস্থ্য দফতরে। —ফাইল চিত্র ।
যারা চিকিৎসকদের ‘দোষ’ চিহ্নিত করে শাস্তির বিধান দিতে ব্যস্ত, সেই রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির গুচ্ছ অভিযোগ জমা পড়েছে স্বাস্থ্য দফতরে।
আর জি কর আন্দোলনের পুরোভাগে থাকা চিকিৎসকদের সম্প্রতি বিভিন্ন অভিযোগে বিদ্ধ করে জবাব চেয়েছে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল। অথচ, সেই কাউন্সিলই বেআইনি ভাবে জানুয়ারি মাস থেকে নতুন করে নিজেদের তিন সদস্যের জন্য ৫০ হাজার টাকা মাসোহারা চালু করেছে বলে অভিযোগ।
গত সেপ্টেম্বরে এই ‘বেআইনি’ মাসোহারা নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠার পরে চাপে পড়ে চার মাস তা বন্ধ রেখেছিল কাউন্সিল। কিন্তু নতুন বছরের শুরুতেই গত ৯ জানুয়ারি কাউন্সিলের ভাষায় একটি ‘এক্স্ট্রাঅর্ডিনারি’ বৈঠকে ফের সেই মাসোহারা চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আগের মতোই চিকিৎসক সুশান্ত রায়, কৌশিক বিশ্বাস এবং তাপস চক্রবর্তী তা পাবেন বলে ঠিক হয়েছে। উপরন্তু, যে চার মাস তাঁদের মাসোহারা বন্ধ ছিল, সেই বকেয়া টাকাও তাঁদের দেওয়ার প্রস্তাব বৈঠকে গৃহীত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও হুমকি-প্রথায় অভিযুক্ত তৃণমূলের চিকিৎসক নেতা সুদীপ্ত সেন এবং উত্তরবঙ্গ লবির মেজো কর্তা বলে পরিচিত সুশান্ত রায় বহু প্রতিবাদ সত্ত্বেও এখনও কাউন্সিলে উচ্চ পদে আসীন। হুমকি-প্রথায় সরাসরি জড়িত সন্দেহে নিলম্বিত (সাসপেন্ড) হওয়া চিকিৎসক অভীক দে-ও ফের কাউন্সিলে ফিরেছেন। তার থেকেও বড় কথা, কাউন্সিল সূত্রের খবর, আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের রেজিস্ট্রেশন বাতিলের পরে সেই সংক্রান্ত শুনানিতে কাউন্সিলে সন্দীপের স্ত্রী হাজিরা দিতে এলে তাঁর সাক্ষ্য নেওয়ার ভার বর্তেছে অভীকের উপরেই!
এখানেই শেষ নয়। সরকারি নির্দেশ অমান্য করে ২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার মানস চক্রবর্তীকে পদে রেখে দেওয়া নিয়ে প্রবল প্রতিবাদ উঠেছে। বৃহস্পতিবার আদালত তার নির্দেশে অবিলম্বে রেজিস্ট্রারকে পদ ছাড়তে বলেছে। খাস মেডিক্যাল কাউন্সিলের সহকারী রেজিস্ট্রার স্বরূপ দত্ত গত অক্টোবর মাস থেকে কাউন্সিলের বিভিন্ন দুর্নীতি সম্পর্কে লাগাতার স্বাস্থ্যসচিব থেকে শুরু করে একাধিক আধিকারিককে চিঠি দিয়েছেন।
এই সব অভিযোগ সম্পর্কে কাউন্সিলের সভাপতি সুদীপ্ত সেনকে ফোন করা হলে তিনি বার বার ফোন কেটে দিয়েছেন। স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, ‘‘মেডিক্যাল কাউন্সিল স্বশাসিত সংস্থা। সেখানে স্বাস্থ্য দফতর খুব বেশি হস্তক্ষেপ করতে পারে না।’’
প্রসঙ্গত, বেঙ্গল মেডিক্যাল আইনের কোথাও কাউন্সিলের কোনও সদস্যকে মাসোহারা দেওয়ার কথা বলা নেই। তা হলে সেটা কী ভাবে ফের চালু হল? সুশান্ত রায়ের ব্যাখ্যা, ‘‘আমরা তিন জন সরকারি চাকরি করি না। যেহেতু আমরা নিজেদের প্র্যাক্টিস বন্ধ রেখে দীর্ঘ সময় কাউন্সিলে এসে কাজ করি, তাই আমাদের ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’
এই টাকা কাউন্সিলের কোন তহবিল থেকে আসে? সুশান্ত বলেন, ‘‘আমার জানা নেই।’’